1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য: ছবির সঙ্গে ফটোর মিল নাই!

২৬ অক্টোবর ২০২০

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নীতিহীন সাংবাদিকতা কোনো দেশের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না৷ তো সাংবাদিকতার নীতি কী? কোন সাংবাদিকতা নীতিহীন আর কোন সাংবাদিকতা নৈতিক?

https://p.dw.com/p/3kR6P
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)ছবি: PID

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তা স্পষ্ট করেননি৷ শুধু বলেছেন... সরকারি বার্তাসংস্থা বাসসকে উদ্ধৃত করি, ‘‘এমন রিপোর্ট করবেন না যেটা মানুষের মধ্যে বা সমাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় বা মানুষ বিপথে যায়৷ সেদিকেও আপনাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি৷’’

আমরা ধরে নিতে পারি, আপনি যখন কোনো কিছু না করতে আহ্বান জানান, তখন নিশ্চয়ই আপনার অভিজ্ঞতা থেকেই তা করেন৷ তার মানে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, কোনো কোনো রিপোর্ট এমন হয় যা মানুষের মধ্যে বা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে৷ আমাদের প্রশ্ন- কোন সে রিপোর্ট? তা কি মিথ্যা তথ্য? নাকি তা ভোট অথবা দুর্নীতি বা বিচার ছাড়া হত্যা কিংবা রুই কাতলা খেলাপি-অপরাধীদের তোষণ? মনে রাখবেন মাননীয়, মিথ্যা তথ্যের আয়ু সীমিত আর তা অপরাধ৷ আর সেই অপরাধের বিচারের জন্য পাঠককূল রয়েছে, আছে দেশের আইন আর আদালত৷ মানে আছেই তো, নাকি নেই? তবে কি বিভ্রান্তিকর তথ্য মানে যা কিছু আপনার বা আপনার সরকারের বিপক্ষে যায়? 

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা চান৷ কিন্তু নিরপেক্ষতা বলতে আপনি বা আপনার কার্যালয় কী বুঝেন তা একটু পরিষ্কার করলে ভালো হতো৷ আমরা সাদা চোখে দেখি এই দেশে নিরপেক্ষতা মানে আপনার আদর্শকে বুকে ধারণ করে আপনার হাজার প্রশংসা আর আপনার পাত্রমিত্রদের কিঞ্চিৎ সমালোচনা করা৷ আর তা-ও এমন ভঙ্গিতে করা যে এইসব লোকদের সাথে নিয়ে দেশ চালাতে আপনার কতই না ক্লেশ হচ্ছে!

আমরা আশা করি, এখন অবশ্য সেই আশা জারি রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে; তবুও আমাদের আশা আপনার সরকার নিরপেক্ষ বা আপনার বিরুদ্ধপক্ষ সাংবাদিকদের শত্রুজ্ঞান করবেন না৷

অতীতের উদাহারণ দিতে গিয়ে আপনি বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশে একটা সময় ছিল- যতই দুর্নীতি হোক, যতই অন্যায় হোক, সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়া হতো৷ আর সমস্যাগুলো-ঐ যে কথায় বলে যে-কার্পেটের তলে লুকিয়ে রাখা৷ আমাদের সরকারের সময়ে কিন্তু আমরা তা করছি না৷’’

আপনার কথা কি ঠিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আপনার সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে কি আসলেই রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে? নাকি ছোটখাট চাকুরে, টুকটাক ব্যবসায়ী অথবা পতিত রাজনৈতিক কর্মীর দুর্নীতি বা অপরাধই আমরা সময় অসময়ে দেখি? বালিশ থেকে ক্যাসিনো সব পর্যায়েই আমরা পড়ি, আমরা শুনি অমুক আর তমুক জড়িত যারা কিনা অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিড৷

মাননীয়, আপনি জানেন কি ‘নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত’ গ্রন্থে শওকত ওসমান লিখেছিলেন, বাতাসে বেসামাল করে/সলিলে ডুবায়/মাঝির যেন অপরাধ নাই!

আপনি বলেছেন, ‘‘যেখানে যা রিপোর্ট হচ্ছে বা আমরা খবর পাচ্ছি, কোথাও কোনো দুর্নীতি বা অন্যায় হলে, আমরা কিন্তু এটা চিন্তা করি না- এর পেছনে আমাদের দল জড়িত, এখানে সরকারের বদনাম কিংবা দলের বদনাম হবে৷ আমরা চিন্তা করি, এখানে অন্যায় হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’ 

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া দুর্নীতি হলে তার দায়ও আপনার! তাই দুর্নীতির সঙ্গে আপনার দল বা সরকারের লোক জড়িত কিনা এই প্রশ্নই অবান্তর৷ তারপরও আপনার সাধারণ সম্পাদক বা তথ্যমন্ত্রী আছেন, যাদের প্রধান দায়িত্ব আপনার দলে বা সরকারে থাকা দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে কিভাবে বিএনপি বা জামায়াতের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তা আবিষ্কার করা৷ আর সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব ক্রসফায়ার কাহিনির মতো তাদের কথাও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা৷

শেখ হাসিনা, আপনি নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন হিসেবে জানিয়েছেন৷ কিন্তু আপনার ভাষণ যতখানি দেখলাম বা পড়লাম তাতে জানতে পারলাম না, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সাংবাদিকতার সুবিধার জন্য করা হয়েছে কিনা, সাগর আর রুনির মামলা বা তদন্তের কতদূর বা কাজল কেন কারাগারে?

আমরা মনে করি, আপনি দেশ ভালো চালাচ্ছেন, তবে একজন গণতান্ত্রিক নেতার মতো নয় একজন কর্পোরেট প্রধান নির্বাহীর মতো৷ এরকম হতেই পারে৷ চলতি দুনিয়াতে একাধিক দেশের সফল প্রধানেরা আপনার মতো করেই দেশ চালাচ্ছেন৷ কিন্তু তাদের কেউ গণতান্ত্রিক বা স্বাধীন গণমাধ্যমের দেশ বলে না৷ আপনিও নিশ্চয়ই সেই পথে এগুচ্ছেন! আর অল্প কয়দিনই হয়ত আপনাকে কষ্ট করে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার কথা বলতে হবে৷ আপনার যাত্রা শুভ হোক!

৪ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।