প্রতিবাদের ৯০ দিন পর কি স্তিমিত চিকিৎসকদের আন্দোলন?
গত শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ৯০ দিন পূর্ণ হলো। আন্দোলন কি স্তিমিত হয়েছে, এই প্রশ্নও উঠছে।
আন্দোলনের ৯০ দিন
আরজি কর-কাণ্ডের পর তিন মাস পেরিয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনেরও তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। শনিবার তিন মাস পার হওয়ার দিনে আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে শুধুই আক্ষেপ! তাঁদের প্রশ্ন, ‘বিচার কোথায়?’
মিছিল, গ্যালারি, চার্জশিট
শনিবার, নয় নভেম্বর সেই ঘটনার তিন মাস পার হওয়ার দিনে তিনটি কর্মসূচি ছিল— রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘দ্রোহের গ্যালারি, কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল এবং ‘অভয়া মঞ্চ’-এ ‘জনতার চার্জশিট’। এই তিনটি কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল একটাই, নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচারের দাবি।
সঙ্গে সাধারণ মানুষও
শনিবারের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে পা মেলান তারা। কারো হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, কারো মুখে শোনা গিয়েছে স্লোগান। প্রায় সকলের কণ্ঠেই শোনা গিয়েছে আক্ষেপ, এখনো বিচার না পাওয়ার। কোথায়’।
মিছিলে অনশনকারীরাও
নির্যাতিতা চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে শনিবার দুপুর তিনটের কিছু পরে কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল শুরু করেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। ধর্মতলা পর্যন্ত হাঁটেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক দেবাশিস, স্নিগ্ধা, পুলস্ত্য, পরিচয় পণ্ডা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়েরা। স্নিগ্ধা, পরিচয়, পুলস্ত্য এবং অনুষ্টুপ ধর্মতলায় অনশন করেছিলেন। মিছিলে তাঁদের সঙ্গে পা মেলান সাধারণ মানুষ।
আন্দোলন কি স্তিমিত?
তবে প্রশ্ন উঠেছে, ২৫ দিন আগের ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর সেই প্রতিবাদের তীব্রতা কি স্তিমিত শনিবার? আবার অনেকের বক্তব্য, ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর দিন প্রশাসনিক বাধার কারণে মানুষের জেদ আর স্বতস্ফুর্ততা প্রতিফলিত হয়েছিল সেই মিছিলে।
প্রশাসনের বাধা ছিল না
সে দিক থেকে শনিবারের কর্মসূচির জন্য কোনও বাধার মুখে পড়তে হয়নি প্রতিবাদীদের। কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত রাস্তার এক দিক দিয়ে হেঁটে এসেছেন প্রতিবাদীরা। অন্য দিক দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গাড়ি চলাচল করেছে। মিছিলে হেঁটে এসে ধর্মতলায় ‘জনতার চার্জশিট’ কর্মসূচিতে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। শান্ত ভাবেই পথে বসে দেখেন নাটক। শোনেন চিকিৎসকদের বক্তৃতা।
দ্রোহের গ্যালারি
শনিবার কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ‘দ্রোহের গ্যালারি’ করার ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সদস্যেরা। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি, পোস্টার, ব্যানার, কবিতা, শিল্প, স্থাপত্য প্রদর্শিত হয়েছে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে।
সাধারণ মানুষের তোলা ছবিও
মানুষকে আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই ডাকেই বহু মানুষ ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন, যা প্রদর্শিত হয় রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে।
অভিনব প্রদর্শনী
জুনিয়র ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, তিনমাসের আন্দোলনের নানান মুহূর্ত বহু মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে তাদের ক্যামেরায় মোবাইলে বন্দি করে রেখেছিলেন। সেই সব ছবি সমাজমাধ্যমে হয়ত দেখেছেন অনেকেই, কিন্তু হাসপাতাল চত্বর জুড়ে এমন ছবির প্রদর্শনী আগে কেউ কখনও দেখেননি হয়ত।
জরুরি বিভাগের সামনে
ফ্রন্টের সদস্যেরা জানিয়েছেন, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্ত এবং মূল বিষয়টিকে ধরে রাখা হয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও চলেছে প্রদর্শনী। এই জরুরি বিভাগ যে বিল্ডিংয়ে রয়েছে, তারই চারতলার সেমিনার হল থেকে গত ৯ অগস্ট উদ্ধার হয়েছিল ওই পড়ুয়া চিকিৎসকের দেহ। মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির সময় এখানেই ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল।
পাল্টা দাবি
অন্যদিকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ একটি ফেসবুক পোস্ট করে বিতর্ক উস্কে দেন। তিনি লেখেন রাজ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলার সময়ে বিনা চিকিৎসায় কোন্নগরের বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়েছিল। ‘দ্রোহের গ্যালারিতে’ সেই বিক্রমের ছবি রাখতে হবে, যাতে একদিকে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার অবহেলা এবং অন্যদিকে তার মায়ের শোক ও প্রতিবাদ জনগণের কাছে তুলে ধরা যায়।
কলকাতা মেডিক্যালেও
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও অয়োজিত হয় ‘দ্রোহের গ্যালারি’। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে চলে প্রদর্শনী। ছবির সঙ্গে নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তি বসানো হয়।
প্রতীকী মেরুদণ্ডও আছে
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে অনশন আন্দোলন থেকে প্রতীকী শিরদাঁড়া হাতে লালবাজার অভিযান বা স্বাস্থ্য ভবন অভিযান হয়েছে। গত ৯০ দিনে আন্দোলনের অন্য ভাষা দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ।
তাণ্ডবের অভিযোগ
সেখানেই তাণ্ডবের অভিযোগ উঠলো। রোববার সকালে নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তি ভেঙে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের দাবি, রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করে।