1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বই নিয়ে বিতর্ক কেন

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৬ ডিসেম্বর ২০২০

ভারতের সাবেক ও একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় হঠাৎই বিতর্কের কেন্দ্রে। তাঁর আত্মকথার শেষ পর্ব নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

https://p.dw.com/p/3mmsl
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Paul

বেশ কয়েক খণ্ডে তাঁর আত্মজীবনী লিখেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রকাশিত খণ্ডগুলি নিয়ে তেমন কোনো বিতর্ক হয়নি। হচ্ছে শেষ খণ্ড নিয়ে। বইয়ের নাম 'মাই প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস'। বইটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু তার কিছুটা অংশ সামনে এসেছে।

সেখানে দেখা গেছে, প্রণববাবু লিখেছেন, ‘'কংগ্রেসে অনেকের অভিমত ছিল, ২০০৪ সালে আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম, তা হলে,  ২০১৪ সালে কংগ্রেসের ভড়াডুবি এড়ানো যেত। আমি এই মত মানি না। তবে ২০১২-তে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কংগ্রেসের রাজনৈতিক দিশা নষ্ট হয়ে যায়। সোনিয়া গান্ধী তখন দলের বিভিন্ন বিষয় ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারছিলেন না। সংসদে মনমোহন সিং দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন। তার ফলে সাংসদদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নষ্ট হয়।''

নরেন্দ্র মোদী প্রসঙ্গে প্রণববাবুর মূল্যায়ণ, ‘' প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম পাঁচ বছর  তিনি অনেকটা স্বৈরতান্ত্রিক পথে চলেছেন। সেজন্যই লোকসভা ও রাজ্যসভা এবং বিচারবিভাগের সঙ্গে তিক্ততা দেখা দিয়েছে।''

এই মতামত নিয়ে, বিশেষ করে সোনিয়া ও মনমোহন প্রসঙ্গে তাঁর খোলাখুলি মত নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেসের সমর্থকরা প্রণববাবুর ভরপুর সমালোচনা শুরু করেছেন। সেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তাঁর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। অভিজিৎ টুইট করে বলেছেন, বাবার আত্মকথার পাণ্ডুলিপি তিনি আগে খতিয়ে দেখতে চান। তার আগে যেন বই ছাপা না হয়। আর বই বা তার অংশবিশেষ ছাপতে গেলে তাঁর অনুমতি জরুরি বলে তাঁর দাবি। কিন্তু শর্মিষ্ঠার মতে, 'সস্তা প্রচারের লোভে বাবার আত্মকথা প্রকাশে অযথা বাধা' দিচ্ছেন অভিজিৎ।

প্রণববাবুর ছেলে ও মেয়ে এভাবে জড়িয়ে পড়ায় বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়ে গেছে। প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, ''আগের খণ্ডগুলিতে প্রণববাবু বিতর্কিত কথা কিছু বলেননি। শেষ খণ্ডে কিছুটা বলেছেন। এটা স্বাভাবিক।'' ডয়চে ভেলেকে শুভাশিস জানিয়েছেন, ''প্রণববাবুর বই এডিট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির আছে বলে মনে হয় না। এগুলো অগণতান্ত্রিক কথা।''

ঘটনা হলো, প্রণববাবু নিজের ভাবনার কথা লিখেছেন। নিজের মত জানিয়েছেন। তা নিয়ে কেউ অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। কিন্তু সেটা তো তাঁর নিজস্ব মত। সাংবাদিক ও লেখক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ''আমি সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতার পক্ষে।'' ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''প্রণববাবু তাঁর বইতে যা লিখেছেন তা যাতে প্রকাশিত না হয়, তার চেষ্টা হবে গণতন্ত্রবিরোধী। আমাদের দেশে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তি, দল বা সংগঠন বিভিন্ন সময়ে বই, সিনেমা, নাটক নিয়ে আপত্তি জানায়, তা আটকে দেয়ার চেষ্টা করে। এটা ঘোরতর অন্যায়।''

প্রণববাবুর উপর বই লিখেছেন প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''কোনো বই নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। সোনিয়া, মনমোহন, মোদীকে নিয়ে সহজ সত্য কথা হয়তো অনেকেই মানতে চাইবেন না। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রণববাবুকে গালাগালিও দিচ্ছেন। সেগুলো অধিকাংশই না জেনেবুঝে করা হচ্ছে।''

সাধারণত কংগ্রেস বা গান্ধী পরিবারের সমালোচনা হলে বিজেপি নেতারা তাকে হাতিয়ার করে সোনিয়াদের তুলোধুনা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর প্রণববাবুর মতো ব্যক্তিত্ব সমালোচনা করলে তো বিজেপি নেতাদের আরো বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তাঁরা চুপ। কারণ, মোদীকে নিয়ে প্রণববাবুর মন্তব্য তাঁদের কাছে খুব সুখকর নয়। তাই তাঁরা চুপ বলে বিশেষজ্ঞদের মনে করছেন।