1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রকৃতিই বিধ্বস্ত বনজঙ্গল আবার গড়ে তুলতে পারে

২৮ অক্টোবর ২০২০

বনজঙ্গলকে প্রকৃতির হাতে ছেড়ে না দিয়ে মানুষ সারিবদ্ধ গাছ লাগিয়ে পছন্দমতো অরণ্য গড়ে তুলেছে৷ বেড়ে চলা দাবানলের মুখে গবেষকরা জঙ্গল পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব আবার প্রকৃতির হাতেই ছেড়ে দেবার পক্ষে সওয়াল করছেন৷

https://p.dw.com/p/3kWnF
ছবি: Julia Mielke

বিচ, মেপল অথবা অ্যাসপেন্স – যে গাছই হোক না কেন, জার্মানির দুই গবেষক জানেট ব্লুমরোডার ও পিয়ের ইবিশ সেই জাতের যে কোনো সদস্য দেখলেই খুশি হন৷ প্রায় এক বছর আগে তাঁরা আগুনে বিধ্বস্ত জঙ্গলের একটি অংশে ছোট-বড় সব রকম পরিবর্তন নথিভুক্ত করার কাজ শুরু করেন৷ নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইবিশ বলেন, ‘‘যেমনটা আশা করেছিলাম ও চেয়েছিলাম, তেমনটাই ঘটছে৷ ইকোসিস্টেম আবার সেরে উঠতে শুরু করেছে এবং অ্যাস্পেনের মতো কিছু প্রজাতি দ্রুত ফিরে এসে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এই গাছ গোটা এলাকায় যে পরিবর্তন এনেছে, তার ফলে অন্যান্য প্রজাতির সুবিধা হচ্ছে৷’’

অভিনব পরীক্ষা

২০১৮ সালে জার্মানিরপূর্বাঞ্চলে ট্রয়েনব্রিৎসেন শহরের বাইরে এক দাবানল প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার জঙ্গল ধ্বংস করে দেয়৷ প্রায় ৫০০ ফুটবল মাঠের চেয়েও বড় সেই জায়গা৷ দাবানলের পর সাধারণত গোটা এলাকা সাফ করে নতুন করে গাছ লাগানো হয়, যেমনটা ব্যক্তিগত মালিকানার এই জমিতে করা হয়েছিল৷ তবে সরকারি তহবিল চালিত একটি প্রকল্পের আওতায় আরেকটি জমিতে তেমনটা করা হয় নি৷ সেখানে মৃত গাছগুলিকে সরিয়ে ফেলা হয় নি৷

জঙ্গল পুনরুদ্ধার নিয়ে গবেষণা

বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ডিটরিশ হেংকে এক বিকল্প সমাধানসূত্র পরীক্ষা করে দেখছেন৷ তিনি বেশিরভাগ মৃত পাইন গাছ সরিয়ে সেই জায়গায় অন্য জাতের গাছ লাগাচ্ছেন৷ ওক ও পপলারের মতো নানা জাতের গাছের মিশ্র জঙ্গল গড়ে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ হেংকে বলেন, ‘‘কোন জাতের গাছ ব্যবহার করা যায়, প্রতিস্থাপনের আগে সেগুলির বয়স কত হওয়া উচিত, প্রথমে আমি তা দেখতে চেয়েছিলাম৷ সম্পূর্ণ চিত্র পেতে পরীক্ষা চালানো জরুরি৷’’

সেই লক্ষ্যেই তিনি দুই গবেষকের সাহায্য নিয়েছিলেন৷ দাবানলে বিধ্বস্ত কোনো জঙ্গলকে মানুষের হস্তক্ষেপসহ অথবা প্রাকৃতিক নিয়মে পুনরুজ্জ্বীবিত করা এবং সেটিকে সমসাময়িক জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নেবার সেরা উপায় খুঁজতে তাঁরা এসেছেন৷

হস্তক্ষেপের বদলে পর্যবেক্ষণ

তাঁরা হস্তক্ষেপের বদলে পর্যবেক্ষণের কাজেই মনোযোগ দিচ্ছেন৷ কোন প্রজাতির গাছ ও প্রাণী সেখানে বাসা বাঁধছে, তা লক্ষ্য করার বিরল সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা৷ পিয়ের ইবিশ বলেন, ‘‘মানুষ যে ক্ষতি করেছে, তা মেরামত করা এখন প্রথাগত প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা প্রকৃতিকে সেটা করার জন্য যথেষ্ট সময় ও জায়গা দেই না৷ সে কারণে প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেবার সুযোগও হারাই আমরা৷’’

দুই গবেষক জানতে পেরেছেন, যে মৃত গাছের কাঠ ছায়া দেবার পাশাপাশি মাটিতে পড়ে গিয়ে মাটি আরও উর্বর করে তোলে৷ এমন কাঠ আরও হামাস বা পচা কম্পোস্ট তৈরি করে, যার ফলে মাটি আরও আর্দ্রতা পায়৷

হেংকে পরীক্ষামূলক এলাকায় ছোট আকারে যে কাজ করেছেন, তা বন বিভাগের প্রথাগত ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে না৷ গাড়ি করে সেই জায়গায় পৌঁছানো কঠিন৷ চারিদিকে বেড়া দিয়ে তিনি এলাকাটিকে বড় প্রাণীর নাগালের বাইরে রেখেছেন৷

তিনি বেশ কয়েকটি মৃত গাছে হাত দেন নি৷ খরার সময়েও মাটির যথেষ্ট আর্দ্রতা বজায় রাখতে পাতাও সরানো হয় নি৷ ডিটরিশ হেংকে মনে করেন, এই অঞ্চলে বড় আকারের দাবানল দেখা গেছে৷ এমনটা চলতেই থাকবে বলে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার শিক্ষা চাই৷

সে কারণে গবেষক হিসেবে জানেট ব্লুমরোডার সেখানে এসেছেন৷ তিনি বেশ কিছুকাল ধরে মাটির আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছেন৷ কোন গাছ ও প্রাণী সেখানে বাসা বাঁধছে এবং সেই সব বিষয় সামগ্রিকভাবে ইকোসিস্টেমের উপর কী প্রভাব ফেলছে, সে দিকেও নজর রাখছেন তিনি৷

গবেষণালব্ধ জ্ঞান

আরও আটটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পে জড়িত রয়েছে৷ প্রকল্পের পাঁচ বছরের সময়সীমার মধ্যে যে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, বার্লিনের কাছে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেগুলি সাজানো হচ্ছে৷ ব্লুমরোডার বলেন, ‘‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জঙ্গলের পুনর্গঠনের মাত্রা অনেক বেশি৷ মানুষ গাছ লাগিয়ে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না৷ আমরা দেখেছি, মানুষের পোঁতা পাইন ও ওক গাছের তুলনায় তিন গুন বেশি পপলার গাছ আবার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে৷’’

এই গবেষকরা এক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কেরও অংশ৷ তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সহকর্মীদের অভিজ্ঞতা শুনতে অত্যন্ত আগ্রহী৷ জঙ্গলের ইকোসিস্টেম আরও মজবুত করে তোলা যায় কিনা, তাও তাঁরা জানতে চান৷ পিয়ের ইবিশ মনে করেন, ‘‘আমাদের কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া সত্যি জরুরি৷ এর সাহায্যে আমরা বায়োম ও বড় ইকোলজিকাল এলাকার মধ্যে তুলনা করতে পারি৷ এভাবে আমরা সাধারণ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করতে পারি৷’’

একাধিক গবেষণায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বা মৃত গাছের অবশিষ্ট অংশও জঙ্গলের ইকোসিস্টেমকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করে৷ অর্থাৎ প্রকৃতিকে একা ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি আছে বৈকি!

ইয়ুলিয়া মিলকে/এসবি