1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রকাশ্যের অন্তরালে

৬ জানুয়ারি ২০২৩

আমি কেন্দ্রের বাইরে থাকা মফস্বলবাসী মানুষ৷ আমার সুবিধা অসুবিধা, সুযোগ বঞ্চনা আমার মতো৷ কেন্দ্রের আবশ্যকীয় কিছু অনুষঙ্গ, যা একাধারে জটিলও বটে, সুবিধারও বটে৷ মানসিক ভাবেও, জীবন যাপনের প্রাত্যহিকতায়ও৷

https://p.dw.com/p/4LpBM
শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাবে এই ভার্চুয়াল জগত আমাদের মতো দেশে অনেক ক্ষেত্রেই অপব্যবহারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে৷
শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাবে এই ভার্চুয়াল জগত আমাদের মতো দেশে অনেক ক্ষেত্রেই অপব্যবহারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে৷ছবি: picture-alliance/dpa

সাম্প্রতিক ভার্চুয়াল সংযুক্তি মানুষের জন্য কেন্দ্র আর মফস্বলের মানসিক দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে৷ গ্রামে বাস করেও মানুষ এখন বৈশ্বিক৷ বৈশ্বিক বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা৷ বার্তার সংযুক্তিতে৷ ফলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বাস করে যে কোন প্রান্তের খবর জানতে তার কোন বাধা নেই৷ বাধা নেই নিজেকে উত্তরোত্তর যোগ্য করে তুলতে, বাধা নেই উৎকর্ষতার চর্চার৷ বাধা নেই অপকর্ষতার চর্চারও৷

ভার্চুয়াল পৃথিবী উন্মুক্ত হওয়ার পর নতুন নতুন মূল্যবোধ সমাজে অভিঘাত তৈরি করছে৷ অনেক পুরানো ধ্যান ধারণা ভেঙেচুরে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন ধ্যান ধারণা৷ এই মূল্যবোধ ধ্যান ধারণা ভেঙেচুরে যাওয়ায় শিক্ষিত সংবেদনশীল মানুষ ততোটা না হলেও অশিক্ষিত এবং অবোধ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে নানা দুর্ঘটনায়৷ যার প্রভাব পড়ছে বৃহত্তর সমাজে৷ এই ভার্চুয়াল জগত মানুষকে নতুন দুনিয়ার সন্ধান দিয়েছে৷ কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলো যাদের শিক্ষা অধিকাংশ কাগজের টুকরো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ , বরং পারিবারিক শিক্ষা অন্ধকার আর কূপমন্ডুকতায় অবরুদ্ধ তাদের জন্য অভিশাপ হিসাবেও পরিগনিত হয়েছে৷ বাংলাদেশে রামু থেকে নাসিরনগর যতোগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা সব কয়টি হয়েছে এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার প্রপাগান্ডার কারণে

শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাবে এই ভার্চুয়াল জগত আমাদের মতো দেশে অনেক ক্ষেত্রেই অপব্যবহারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে৷ এই বিষয়টি প্রথম ব্যাক্তিগত ভাবে উপলব্ধি করেছি 'মি টু' আন্দোলনের সময়৷ একদিন জনৈক লোক আমাকে ফোন করে বললেন, আপনি নাকি আমার নামে মিটু লিখছেন? আমি তাকে চিনতাম৷ চিনতাম মানে কয়েক মাস একত্রে পত্রিকায় কাজ করেছি৷ অস্বীকার করিনা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উন্মুক্ত হওয়ার পর তিনি আমাকে মাঝে মধ্যে ম্যাসেঞ্জারে নক করেছেন, বলেছেন সেই সদ্য ক্যাম্পাস ছাড়ার দিনগুলোতে আমি অনেক সুন্দরী ছিলাম৷ আমিও পালটা জবাব দিয়েছি, হ্যা তখন তো বললেন না!  আমাদের সহকর্মী থাকার দিনগুলোর চেয়ে পরবর্তীতে বন্ধুত্ব গাঢ়তর হয়েছে৷ কিন্তু তা কখনোই একতরফা নয়৷ এবং তেমন কিছুও নয় যাতে 'মি টু' লেখা যায়৷ আমি আকাশ থেকে পড়লাম৷ আমি আপনাকে নিয়ে মি টু লিখবো কেনো, মি টু লেখার মতো কী হয়েছে আপনার সাথে?

Ruma Modak
রুমা মোদক, শিক্ষিকাছবি: privat

আমি তখন বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, মি টু এর কী অপব্যবহার হচ্ছে? আসল ভুক্তভোগীরা তো সুবিচার বঞ্চিত হবে৷ তখন মি টু রমরমা ঝড় চলছে ফেইসবুক জুড়ে৷ আমি স্ট্যাটাস দেয়া মাত্র সোকল্ড নারীবাদীরা ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপরে৷ কেউ সেটার স্ক্রিনশট তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিলো৷ কতক শুভানুধ্যায়ী আমাকে তৎক্ষনাৎ স্ট্যাটাস ডিলিট করতে বললেন৷ আমি করে দিলাম৷ কিন্তু আমি বুঝলাম না আমার অপরাধটা ঠিক কোথায়? রাতারাতি আমি সোকল্ড নারীবাদীরা আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিলেন৷ আমি কী বলতে চাইলাম আর ঘটলো কী! চুপচাপ নিজেকে সরিয়ে নিলাম৷ আর চেয়ে চেয়ে দেখলাম, কতো অযৌক্তিক, ভিত্তীহীন অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতা ভরে উঠলো কিন্তু আসল যারা ভিক্টম তারা কেউ তেমন মুখ খুললো না খুলতে পারলো না৷ বরং সোকলড প্রভাবশালী নারী যাদের আসলে লৈঙ্গিক পরিচয় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়, তারাই বিষয়টির সুযোগ নিলো৷

সম্প্রতি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছে নুহাশ  হুমায়ূন এর এক স্ক্রিনশট৷ একেবারে নির্দোষ স্ক্রিনশট৷ কফি খাওয়ার আহবান৷ নুহাশ হুমায়ূন নিঃসন্দেহে এই বয়সে তার নিজের গুনেই সেলিব্রিটি৷ সেলিব্রিটি লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর পুত্র সন্তানের পরিচয় ছাপিয়ে নিজের পরিচয়ে খ্যাত হয়ে উঠছেন৷ তিনি তরুণ বয়সি৷ তার তরুণি বান্ধবী হবে৷ সে কফি খেতে চাইবে৷ বান্ধবীকে নিয়ে কফি খেতে যাবে এতে অবাক হওয়ার কি আছে? শুধু হুমায়ূন পুত্র হবার অপরাধে তার একটা কফি খাওয়ার আহবান ভাইরাল হয়ে যাবে? মানুষ তবে কাকে বিশ্বাস করবে? মানুষে মানুষে নারী পুরুষ নির্বিশেষে স্বাভাবিক বন্ধুত্ব হবেনা?

এখন ম্যাসেঞ্জারে বন্ধু বন্ধুকে কফি খেতে যাওয়ার আহবান জানালেও ভেবে চিন্তে  জানাতে হবে৷ হুমায়ূন পুত্র নুহাশ বলে যারা স্ক্রিনশট ভাইরাল করে দিলেন তাদের কি আর কারো সাথে বন্ধুত্ব নেই? তারা কি আর কারো সাথে কফি খেতে যাননি কখনোই?  তাদের সাথে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস করেন?

এই যে নুহাশ হুমায়ূনের কফি খাওয়ার আহবানের স্ক্রিনশট ফাঁস করে দিলেন ধরুন যদি (এমন না হোক) এই নুহাশ কাউকে সত্যি অশ্লীল একতরফা কোন ইংগিত করেন আর সেই ভিক্টিম নারী সেটা প্রকাশ করে বিচার চায়, ভয় হয় তখন না সেটাও এই কফি খাওয়ার মতো খেলো হয়ে যায়৷

নিজের নাম প্রজ্জ্বলিত করার লোভে অন্যের সুবিচার পাওয়ার দরজা বন্ধ করে দেবার আগে ভাববেন৷