প্যারিসে রূপকথা তৈরি করছেন লাইলস, বাইলস, জুলিয়েনরা
প্রায় প্রতিদিনই অসাধারণ সাফল্য দেখছে প্যারিস অলিম্পিক। জন্ম হচ্ছে খেলার জগতে রূপকথার নায়ক-নায়িকাদের।
দ্রুততম পুরুষ নোয়া লাইলস
প্যারিস অলিম্পিকে পুরুষদের একশ মিটার দৌড়ে জিতে বিশ্বের দ্রুততম পুরুষ হলেন যুক্তরাষ্ট্রের নোয়া লাইলস। সময় নিলেন নয় দশমিক ৭৯ সেকেন্ড। ফটো ফিনিশে জিতলেন তিনি। ২০০৪ সালের পর আবার যুক্তরাষ্ট্রের একজন অ্যাথলিট পুরুষদের একশ মিটার দৌড় জিতলেন। ২০০৮ থেকে ১৬ পর্যন্ত জিতেছেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্টের। অবশ্য বোল্টের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি লাইলস।
এমন দৌড় আর হয়নি
একশ মিটারে লাইলস সোনা পেয়েছেন ফটো ফিনিশে। রুপোজয়ী কিশানে থমসনের সময়ও ছিল নয় দশমিক ৭৯। এরপর এক সেকেন্ডকে এক হাজার ভাগ করা হয়। সেখানেই দশমিক শূন্য শূন্য পাঁচ সেকেন্ড আগে দৌড় শেষ করায় লাইলস সোনা জেতেন। আটজন প্রতিযোগীই দৌড় শেষ করেন ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে। তাই এই দৌড়কে বিশ্বের অন্যতম সেরা একশ মিটারের দৌড় বলা হচ্ছে।
জিতে কী বললেন লাইলস
লাইলস বলেছেন, ''আমার জন্য এর থেকে বড় মুহূর্ত আর কিছু হতে পারে না। আমি প্রথম রাউন্ডে ভালো করতে পারিনি। তাই ফাইনালে আরো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এসেছিলাম। আমি সেভাবেই দৌড়েছি। আমার মনে হয়, আপনাদের আমাকে পছন্দ হয়েছে। আমাকে আরো অনেক দূর যেতে হবে।''
বিশ্বের দ্রুততম নারী
প্যারিস অলিম্পিকে দ্রুততম নারী হয়েছেন সেন্ট লুসিয়ার জুলিয়েন অ্যালফ্রেড। ১০ দশমিক ৭২ সেকেন্ডে তিনি একশ মিটার দৌড়েছেন এবং সোনা জিতেছেন। এই দৌড় তাকে অষ্টম দ্রুততম নারীর পরিচিতি দিয়েছে। তবে শুধু এই কারণে নয়, তিনি অলিম্পিক-রূপকথায় নাম তুলে ফেলেছেন, ক্যারিবিয়ানের ছোট দ্বীপ সেন্ট লুসিয়াকে প্রথম অলিম্পিক পদক এনে দিয়ে।
সেন্ট লুসিয়ার জুলিয়েন
সেন্ট লুসিয়ার জনসংখ্যা হলো এক লাখ ৮০ হাজার। সেখান থেকে কেউ এর আগে অলিম্পিক পদক জেতেননি। জুলিয়েন জিতলেন। ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর দুই বছর পর জ্যামাইকায় চলে যান। তারপর তার দৌড়বিদ হিসাবে প্রশিক্ষণের শুরু। যুব অলিম্পিকে রুপো পাওয়ার পর টেক্সাসে ভর্তি হন। কোচ হিসাবে পান ফ্লোরিয়ালকে। বদলে যান জুলিয়ান।
বাইলসের তিন সোনা
প্যারিসে আরেক রূপকথার জন্ম দিয়েছেন বাইলস। ভল্টে তৃতীয় সোনা জিতে নিয়ে। তিনটে সোনা জিতে শুধু নয়, বাইলসের রূপকথার প্রতিটি পরতে আছে এক অনন্য় লড়াই ও মানসিক শক্তির কাহিনি। টোকিওতে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এবার তিনিই তিনটি সোনা জিতে দেখিয়ে দিলেন, চেষ্টা করলে মানুষ সব যুদ্ধে জয় পেতে পারে। নিজেকে তুলে নিয়ে যেতে পারে এক অনন্য় উচ্চতায়।
'টুইস্টিজ' আক্রান্ত বাইলস
টোকিওতে বাইলস মানসিক অসুখ টুইস্টিজে আক্রান্ত হন। এই অসুখে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অসুস্থ মানুষের সামনে শূন্যতা থাকে শুধু। বাইলস সেই অসুখ সারিয়ে প্যারিস অলিম্পিকে দিলেন ইয়ুরচেঙ্কো ডাবল পাইক ভল্ট যা এখন অনেকেই বাইলস ভল্ট বলছেন। শূন্যে ভেসে দুইবার পাক মেরে ঠিক করে ল্যান্ড করতে হয়। বাইলস করলেন। সোনা পেলেন। সবমিলিয়ে অলিম্পিকে ১০টি সোনা হয়ে গেলো তার।
কী বললেন বাইলস?
জেতার পর সামাজিক মাধ্যমে বাইলস বলেছেন, ''অলিম্পিকে পদক জেতার পর আপনারা দয়া করে অ্যাথলিটদের এই প্রশ্ন করা বন্ধ করুন যে, এরপর কী? আমরা গোটা জীবন ধরে যে মুহূর্তটা পেতে চা্ইছি, তাকে উপভোগ করতে দিন।'' সাংবাদিক সম্মেলনে বাইলস বলেছেন, তিনি আর ইয়ুরচেঙ্কো ডাবল স্পাইক ভল্ট দেবেন না। তবে আগামী অলিম্পিক তার দেশে হবে। সেখানে নামবেন কিনা তা বলতে পারছেন না। তখন তার বয়স বেড়ে যাবে।
কেঁদে ফেললেন জোকোভিচ
অলিম্পিক টেনিসে সোনা জিতে কেঁদে ফেললেন জোকোভিচ। ফাইনালে অলকারাজকে ৭-৬, ৭-৬-এর হারিয়ে সোনা জেতার পর এই কান্না জোকোভিচের। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা জোকোভিচের চোখে জল দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। জোকোভিচ বলেছেন, ''৩৭ বছর বয়সে সার্বিয়ার হলে সোনা জেতা অসাধারণ অনুভূতি। আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। আমি গর্বিত ও খুশি। এটাই আমার সেরা সাফল্য।''
৫২ বছর পর
প্যারিস অলিম্পিকে হকিতে রূপকথা-সম জয় পেয়েছে ভারত। ৫২ বছর পর তারা হারাতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়াকে। ৩-২ গোলে। ভারতীয় হকি দল এবার অলিম্পিকে ভালো খেলছে। ব্রিটেনকে হারিয়ে সেমিফাইনালেও উঠেছে তারা। একটিমাত্র ম্যাচ হেরেছে তারা বেলজিয়ামের কাছে। সেখানেও তারা ভালো খেলেছে। তবে ৫২ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ঘটনা আলোড়ন তুলেছে ভারতে।