পোশাক শ্রমিকদের নির্বাচনি ভাবনা
আগামী পাঁচ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছেন? এই ছবিঘরে পোশাক শ্রমিকদের নির্বাচনি ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে৷
বিরোধী দলের উপর ‘ক্ষিপ্ত’ আকলিমা
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার পোশাক শ্রমিক আকলিমা বেগম৷ কাজ করেন ঢাকার রামপুরার একটি পোশাক কারখানায়৷ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে অবরোধ দেয়ায় বিরোধী জোটের ওপর ক্ষিপ্ত এই পোশাক শ্রমিক৷ এমনিতেই সামান্য কিছু টাকা বেতন পান৷ তার উপর টানা অবরোধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম গেছে বেড়ে৷ ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন আকলিমা৷
ভোট দিতে পারবেন না লাকী আক্তার
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন লাকী আক্তার৷ বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে হলেও ভোটার হয়েছেন ঢাকায়৷ তাঁর এলাকার সাংসদ ইতোমধ্যেই একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন৷ তাই ভোট নিয়ে তাঁর কোনো পরিকল্পনা নেই৷
রুবেলের ভাষায় ‘প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন’
পোশাক শ্রমিক রুবেলের বয়স মাত্র ২৩ বছর৷ কুমিল্লা জেলার তিতাস থানায় তাঁর বাড়ি৷ কাজ করেন ঢাকায়৷ রুবেলের প্রশ্ন, ‘‘প্রতিযোগিতাহীন এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার কী আছে?’’ জীবনের প্রথম ভোটটি নষ্ট করতে রাজি নন তিনি৷ একইসঙ্গে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেয়াটাও অর্থহীন মনে করেন তিনি৷
এখনো সিদ্ধান্ত নেননি শেফালি
শেফালির বাড়ি ঢাকার পাশে আশুলিয়ায়৷ কাজ করেন, ঢাকার রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ দশম জাতীয় সংসদ নিয়ে তাঁর অভিমত হচ্ছে, দুই পক্ষই যদি ভোটে আসত তাহলে ভালো হতো৷ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তিনি৷
হোসনে আরার স্বপ্ন ছেলেকে মানুষ করা
গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ফরিদপুরের হোসনে আরা৷ দুপুরের খাবারের বিরতির সময় ছেলেকে নিয়ে বসেছেন পাশের একটি চায়ের দোকানে৷ ভোট নিয়ে তাঁর কোনো চিন্তাভাবনা নেই৷ খেটেখুটে একমাত্র ছেলেকে মানুষ করাই তাঁর স্বপ্ন৷
ভোট দেবেন না সাদ্দাম হোসেন
সাদ্দাম হোসেনের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে৷ কাজ করেন ঢাকার রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ রাজনীতিবিদদের উপর তাঁর অনেক রাগ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভোট দিয়া হইবটা কী? যারা দল করেন তারা কোনো না কোনো ভাবেই লাভবান হন, মরি আমরা শ্রমিকরা৷ ভোট দিব না ভাই৷’’
ভোট দিতে গ্রামে যাবেন মিতু
জামালপুরের বকশীগঞ্জের মিতু কাজ করেন ঢাকার গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারাখানায়৷ কাজের ফাঁকে স্বামীর মোবাইল ফ্লেক্সি লোডের দোকানেও বসেন৷ জীবনের প্রথম ভোট দিতে গ্রামে যাবেন মিতু৷ তবে নিরুত্তাপ নির্বাচন তাঁর ভালো লাগছে না৷
ছুটি পেলে ভোট দিতে যাবেন মিজান
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মিজানুর রহমান কাজ করেন গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারাখানায়৷ ছোট সময় তিনি নির্বাচন দেখেছেন অনেক উৎসবমুখর৷ কিন্তু এবার নিজে ভোটার হয়ে ভোটের উৎসব দেখতে পাচ্ছেন না৷ তারপরেও ছুটি পেলে পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে গ্রামে যাবেন মিজান৷
ভোট নিয়ে ভাবার সময় নেই সাথীর
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পোশাক শ্রমিক সাথী৷ কাজ করেন রামপুরার একটি পোশাক কারখানায়৷ নির্বাচন কিংবা ভোট নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ সাথীর একমাত্র চিন্তা কাজ নিয়ে৷ তিনি মনে করেন, ভালোভাবে কাজ করতে পারলেই সন্তানদের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে পারবেন৷
ভোট দেওয়া অনর্থক মনে করেন আব্দুল আলীম
পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়ায় বাড়ি আব্দুল আলীমের৷ কাজ করেন রামপুরার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ ছুটি নিয়ে এই ধরনের নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়া তার কাছে অনর্থক মনে হয়৷ তাছাড়া তার ধারণা সে ভোট না দিলেও যে প্রার্থী জয়লাভ করার তার জয় হবেই৷
হাসনা হেনার কাছে ‘নিরুত্তাপ নির্বাচন’
ঢাকার মালিবাগের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন হাসনা হেনা বেগম৷ বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে৷ দেশে যে সবচেয়ে বড় ভোট উৎসব চলছে সেটা তাঁর মনেই হচ্ছে না৷ নিরুত্তাপ নির্বাচনে ভোট দিতে চান না হাসনা হেনা৷
ভোট দেয়ার ইচ্ছা ছিল লাইলীর
লাইলী বেগমের বাড়ি পিরোজপুরের জিয়ানগরে৷ ভোটার হয়েছেন ঢাকার তেজগাঁও এলাকায়৷ ভোট দেয়ার ইচ্ছাও ছিল তাঁর৷ কিন্তু শুনতে পাচ্ছেন তাঁর এলাকায় নাকি ভোট হবে না৷ একক প্রার্থী হিসেবে একজন ইতিমধ্যেই জিতে গেছেন৷
পদত্যাগে ভয় কিসের? প্রশ্ন সোহাগের
সোহাগ মিয়া কাজ করেন ঢাকার মালিবাগের একটি তৈরি পোশাক কারখানায়৷ বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে৷ তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে বিরোধী দলকে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘ভালো কাজ করলে পদত্যাগে প্রধানমন্ত্রীর এতো ভয় কিসের? ভোটতো আমরাই দিব৷’’