পুরনো কাঠে নতুন জীবন দেয় সিরিয়াস উড
২৯ নভেম্বর ২০২৪সেগুলো আবার সংগ্রহ করা হয় রোমানিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে৷ পুরনো গুদাম এবং ঘর-বাড়ি প্রায়ই ভেঙে ফেলা হয়৷ চকুর সেসব গুরুত্বপূর্ণ কাঠ সংগ্রহ করেন যা হয়ত ফেলে দেয়া হতো বা জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হতো৷
এক নতুন সূচনা, এবং এক বড় ঝুঁকি৷ প্রথম বছরগুলোতে মিহাই চকুর এবং তার বন্ধুরা তাদের সব আয় দিয়ে যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম কিনেছেন৷ এখন তারা তাদের কাজ দিয়ে জীবন চালাতে পারছেন৷
চকুর তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছেন৷ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে পুরনো জিনিসেরও গুরুত্ব আছে এবং সেগুলো ফেলে দিয়ে নতুন কিছু কেনাই একমাত্র সমাধান নয়৷ পুরনো ওক বীম ব্যবহার করে আসবাবপত্র তৈরি করেন তিনি৷ সিরিয়াস উডের মিহাই চকুর বলেন, ‘‘আমাদের কাজের কারণে কোনো গাছ মরে না৷ এবং আমরা যা করছি, মানে পুনর্ব্যবহার, তা অন্যরাও করতে পারেন৷ যা রক্ষা করা যায় তা রক্ষা করা আর কী৷ আমরা ভোগবাদের সময়ে বসবাস করছি৷ সবকিছুই ভোগ, কেনায় মনোযোগী৷ আর সামান্য কয়েকজন পুর্নব্যবহার এবং পুরনোকে নতুন জীবন দেয়ায় আগ্রহী৷''
রোমানিয়ার কেন্দ্রের ট্রানসিলভেনিয়ার ছোট্ট শহর চিসনাদিয়ায় তার ওয়ার্কশপ৷ সিরিয়াস উডের মিহাই চকুর বলেন, ‘‘এখানে কিছু কাঠ রয়েছে৷ ওকের এই টুকরোগুলো প্রায় ৮০ বছরের পুরনো৷ আমি এগুলো ব্যবহার করে একটি শেল্ফ তৈরি করতে চাই৷''
এরকম পুরনো কাঠ পেতে তিনি এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার সিলভিউ মলডোভান রোমানিয়া চষে বেড়ান৷ তারা পুরনো গুদামঘর এবং বাড়ি খুলে আনেন৷ প্রথম ভ্রমণে দুই সপ্তাহে তারা পুরো তিনটি বাড়ি খুলতে পেরেছিলেন৷ আগের প্রজন্মের কাজের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা রয়েছে চকুরের৷ তিনি বলেন, ‘‘এই কাঠের জন্য অনেক কাজ করেছেন কারিগররা৷ কাঠ বাছাই থেকে পরিবহণ সবই হাতের কাজ ছিল৷ আমরা এটা বুঝে সেগুলোর প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে পুনরায় ব্যবহার করছি৷''
তার গ্রামের অনেক মানুষ অবশ্য এই ধারনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি৷ কিন্তু চকুর মানেন যে পুরনো কাছের মান নতুন কাঠের চেয়ে ভালো৷ তিনি এবং তার স্কুল বন্ধু সিলভিউ মলডোভান ২০১৫ সালে সিরিয়াস উড শুরু করেন৷ প্রথমে তারা অনলাইনে এবং একটি স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ চকুর আসলে একজন প্রশিক্ষিত শেফ যিনি স্পেন এবং জার্মানিতে কাজ করেছেন৷ কিন্তু তারপর পরিবারের দায়িত্ব এবং ঘরের প্রতি টান তাকে রোমানিয়াতে ফিরিয়ে নিয়েছে৷
মিহাই চকুর বলেন, ‘‘ব্যাপারটা বোঝায় পরিনত হয়েছিল৷ আমি আর মজা পাচ্ছিলাম না এবং পরিবর্তনের কথা ভাবছিলাম৷ যখন আপনি আর সুখি নন তখন ভালোভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন৷ নিজের উপরে চাপ পড়ে৷ শুরুতে তাই এটা এক বড় পরিবর্তন ছিল৷ আমি আমার কমফোর্ট জোন থেকে পুরোপুরি বের হয়ে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু আমি আমার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছি এবং আপনি যেভাবে চান সেভাবেই জীবনযাপন উচিত৷''
সিবিউর এস্ট্রা ওপেন এয়ার মিউজিয়ামের একটি কারুশিল্পের বাজার৷ সারা সপ্তাহ কাজ করার পরও চকুর এখানে তার ধারনা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য এসেছেন৷ মিহাই চকুর বলেন, ‘‘প্রকৃতিতে আমাদের ঘিরে যা আছে সেদিকে সবার মনোযোগী এবং মননশীল থাকা উচিত৷''
প্রায় দশবছর ধরে কাজ করছে সিরিয়াস উড৷ অনেক সংশয়বাদীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে টিকতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে৷ এখন অবশ্য তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে৷
প্রতিবেদন: আলেক্সজান্ড্রা বিডিয়ান/এআই