প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে এই প্রথম জো বাইডেন ফোনে কথা বললেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে। জানিয়ে দিলেন বিরোধী নেতা নাভালনিকে যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা তিনি সমর্থন করেন না। জি সেভেনের বাকি সমস্ত দেশই নাভালনির ঘটনায় রাশিয়ার নিন্দা করেছে। বাইডেন শেষ ব্যক্তি যিনি এ কাজ করলেন।
দিনকয়েক আগেই হোয়াইট হাউসের নবনিযুক্ত প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছিলেন, নাভালনির বিষয়ে বাইডেন অত্যন্ত চিন্তিত। এবং তাঁর মুক্তির জন্য সবরকম আলোচনার পথ খোলা রাখবে অ্যামেরিকা। মঙ্গলবার তিনি জানান, বাইডেনের সঙ্গে পুটিনের প্রথম ফোন কলেই বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এর আগে জার্মানি এবং ফ্রান্সও নাভালনির গ্রেফতার নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। নাভালনিকে দ্রুত ছাড়ার জন্য রাশিয়ার উপর চাপও তৈরি করেছে জার্মানি।
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
বিক্ষোভের ডাক
১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফিরলে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি৷ সেসময় সমর্থকদের উদ্দেশে বিক্ষোভের ডাক দেন তিনি৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
ব্যাপক বিক্ষোভ
শনিবার থেকে রাজধানী মস্কোসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় পুটিনবিরোধী বিক্ষোভ৷ নাভালনির মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা৷ পাশাপাশি পুটিনের পদত্যাগের দাবিও জানান তারা৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
তীব্র শীত উপেক্ষা করে আন্দোলনে
রাশিয়ায় এখন তীব্র শীত৷ তুষারপাত বা তীব্র শীতও দমাতে পারেনি বিক্ষোভকারীদের৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে নাভালনির মুক্তির দাবিতে তারা রাস্তায় নেমেছেন৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ
কৃষ্ণসাগরের ধারে পুটিনের প্রাসাদ ঘিরে রোববার অবস্থান নেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে আহত হন বেশ কয়েকজন৷ এরপর পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে এক পর্যায়ে ধড়পাকড় শুরু হয়৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
আটক সাড়ে তিন হাজার
রোববার পর্যন্ত দেশজুড়ে সাড়ে তিন হাজার নাভালনি সমর্থকের আটকের খবর পাওয়া গেছে৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি
বিক্ষোভ দমনে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় কয়েক হাজার নিরাপত্তাবাহিনী৷ তবে তাদের উপেক্ষা করে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
১০০ শহরে বিক্ষোভ
মস্কো, সেইন্ট পিটার্সবার্গসহ প্রায় ১০০ শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন নাভালনি সমর্থকরা৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, মস্কোর র্যালিতে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল৷ তবে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ছিল চার হাজার৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
দেশজুড়ে দাঙ্গা পুলিশ
মস্কোতে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন করেছে৷ মস্কো থেকেই আটক করা হয় ১২শ’ মানুষকে৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
নাভালনির স্ত্রীকে আটকের পর মুক্তি
বিক্ষোভের মধ্যে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়াকেও কিছুক্ষণের জন্য আটক করে পুলিশ৷ পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়াযজুড়ে এত বড় বিক্ষোভ আগে কখনো দেখা যায়নি আর মস্কোতে গত দশ বছরের মধ্যে এত বড় বিক্ষোভ হয়নি৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
পুটিনের নিন্দা
এই ব্যাপক বিক্ষোভে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পড়েছে পুটিন সরকার৷ সোমবার এই বিক্ষোভ সমাবেশকে অনৈতিক ও বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
নতুন নিষেধাজ্ঞা নয়
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়ার বিক্ষোভ নিয়ে আলোচনায় বসেন৷ সেখানে বিক্ষোভ দমনে পুটিন প্রশাসনের সমালোচনা করা হলেও নতুন করে রাশিয়ায় কোনো অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়নি৷
-
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
নাভালনি যে কারণে গ্রেপ্তার
গত বছরের আগস্টে নাভালনির ওপর স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়৷ এরপর থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি বার্লিনে ছিলেন৷ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতেই তাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়৷ প্যারোলের নিয়ম ভঙ্গ করায় একটি মামলায় তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ (এসিবি)
দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ নাভালনি। গত অগাস্টে তাঁকে বিষ দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ, সরকার এবং প্রশাসনই এ কাজ করার চেষ্টা করেছিল। নাভালনিকে এরপর নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানি। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে। একসময় নাভালনি কোমাতেও চলে গেছিলেন। জার্মানিতে চিকিৎসা চলাকালীনই স্পষ্ট হয়, তাঁকে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল।
জার্মানি ওই ঘটনায় সরাসরি পুটিনকে দায়ী করে এবং তাঁর জবাবদিহি চায়। চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিজে এ বিষয়ে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন। কিছুদিন আগে ম্যার্কেল জানিয়েছিলেন, নাভালনিকে নিঃশর্তে মুক্তি না দিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। নাভালনির পাশাপাশি একাধিক আন্দোলনকারীকেও মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ম্যার্কেল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও নাভালনির মুক্তির দাবি করেছে। কিন্তু পুটিন এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। রাশিয়ার বিমানবন্দর থেকে নাভালনিকে গ্রেফতার করার পরে থানাতেই তাঁর বিচারসভা বসানো হয়। আপাতত ৩০ দিনের জেল হেফাজতে আছেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে পরবর্তী শুনানি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, তাতে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর। তবে নাভালনির গ্রেফতারের পর থেকে উত্তাপ ছড়িয়েছে রাশিয়ায়। প্রায় সমস্ত প্রদেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। রাশিয়ায় প্রতিদিন আন্দোলনকারীরা পুটিনবিরোধী পোস্টার নিয়ে রাস্তায় নামছেন। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীরা গ্রেফতার করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ম্যার্কেলের মতো বাইডেনও নাভালনি এবং বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবি করেছেন। নাভালনিকে না ছাড়লে অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কও যে তিক্ত হতে পারে, সে ইঙ্গিত প্রথম ফোন কলেই দিয়ে রেখেছেন বাইডেন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)