পুজো হবেই, তবে সাবধানে
১৭ জুলাই ২০২০পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বড় সামাজিক উৎসব দুর্গাপুজো। বহু অর্থের লেনদেন হয় এই একটি উপলক্ষ্যে। বহু মানুষের সারা বছরের খোরাক উঠে আসে এই সুবাদে। কুমোরটুলিতে যাঁরা প্রতিমা গড়েন, যাঁরা মণ্ডপ গড়েন, যাঁরা মূর্তির সাজপোশাক তৈরি করেন, যাঁরা আলোকসজ্জার কাজ করেন, এরকম বহু পেশা আর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন, যাঁরা মূলত গ্রামাঞ্চলের, তাকিয়ে থাকেন এই উৎসবের দিকে। করোনার আবহে এই বছর পুজো হবে কি না, সে নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন এখনও ঝুলছে। যেহেতু উৎসব মানেই জনসমাগম এবং একসঙ্গে অনেক লোক মানেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
কিন্তু সদ্য জানা গেল, রাজ্য সরকারও চাইছে এবছর পুজো যেন বন্ধ না হয়। না হলে বহু লোকের জীবন–জীবিকা সংকটে পড়বে। কাজেই বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণ এবং বিধি-নিষেধ আরোপ করে পুজোর অনুমতি দেওয়ার কথা প্রশাসনও ভাবছে। মানুষের ভাবাবেগের কথাও মাথায় রাখছে সরকার। উত্তর কলকাতার রাজবল্লভপাড়ার পুরনো পুজো জগৎ মুখার্জি পার্ক সার্বজনীন–এর অন্যতম উদ্যোক্তা গৌতম রায় যেমন জানালেন, আয়োজন, আড়ম্বর, সবই এবছর কম হবে। হয়ত কিছুটা নিয়মরক্ষার খাতিরে হবে, কিন্তু পুজো বন্ধ হবে না। তাঁর কথা, ‘‘নিয়ম-কানুন আসবে। হয়ত দর্শনার্থী ঢুকতেই দিলো না। বা এরকম হয়ত কিছু হবে। সেক্ষেত্রে পুজো তো বন্ধ করা যায় না, পুজো হবে। এবছর আমাদের মিটিংয়ে পাস হয়ে গেছে, পুজো হচ্ছে।
কিন্তু তার বাজেট একেবারে কমিয়ে ৮–১০ লাখের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনোরকম জাঁকজমক কিছু থাকবে না। আমাদের যে ভোগটা হতো, সেই ভোগটাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। একদমই কম। মানে নমো নমো করে পুজো করা আর কী! নিয়মবিধি যা আসবে, সেগুলো পরবর্তীকালে মেনে চলা হবে। মোটামুটি একটা ঠিক করেছি। যেমন, প্যান্ডেলের বাজেট হয়ে গেছে দু'লাখ টাকা। যেটা বিশ লাখ ছিল, সেটা দু'লাখ টাকা। ঠাকুর এক লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচ দু'লাখ টাকা। এরকমভাবে নমো নমো করে পুজোটা করা আর কী। জাঁকজমক থাকবে না।''
কলকাতার সমস্ত বড় বারোয়ারি পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের এখন এটাই মত। বিশেষ করে রাজ্য সরকার পুজোর ব্যাপারে প্রাথমিক সায় জানানোয় সবাই উৎসাহিত বোধ করছেন। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের তাগিদে সরকার যেসব নিয়ম-বিধি চালু করতে যাচ্ছে, সেসবও তাঁরা মেনে চলতে তৈরি। অনেকেই যেমন এখনই ভেবে ফেলেছেন কী কী সাবধানতা তাঁরা নেবেন।
দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত সমাজসেবী সঙ্ঘের এবছরের পুজো কমিটির সম্পাদক অরিজিৎ মৈত্র যেমন বললেন, ‘‘‘এ'বছর এমনি তো প্রশাসনের একটা কিছু গাইডলাইন থাকবে। এছাড়া আমরা যেটা মেইনলি ভেবেছি যে, দর্শক এবার কম হবে। অনেকেই আসবে না, কারণ, যেভাবে (সংক্রমণের) সংখ্যা বাড়ছে। তাতে যেটা হচ্ছে, আমরা পাড়ার লোক মিলে তো (পুজো) করবোই। তাতে তিন দিক খোলা রাখার চেষ্টা করবো, যাতে কেউ যদি গাড়ি থেকে নামতে না চায়, তারা যাতে গাড়ি থেকেই দর্শন করতে পারে। এছাড়া রিচুয়ালগুলো সবই পাড়ার মধ্যে, মানে আমরা তো জানি কাদের (করোনা) হয়েছে, কাদের হয়নি। তো তাদেরকে দিয়েই করানো হবে। সোশাল ডিস্টেন্সিং মেইনটেইন করে সবকিছুই হবে, সব রিচুয়ালই হবে। ভোগ ডিস্ট্রিবিউশন আমরা টিফিন কেরিয়ারের মাধ্যমে করব। কিচেন এরিয়া এবং প্যান্ডেল এরিয়া রেগুলারলি স্যানিটাইজেশন করা হবে। এবং সিঁদুর খেলার সময়টাতেও আমরা একটা ট্যাঙ্কার রেখে স্যানিটাইজ করব।''
সমাজসেবী পরিকল্পনা করেছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের। যেভাবে সুপার মার্কেট, শপিং মল, বা ব্যাঙ্কে আজকাল নির্দিষ্ট কয়েকজনের বেশি একসঙ্গে ঢুকতে দেওয়া হয় না, বা দূরত্ব রেখে দাঁড়াতে হয়, কিংবা স্যানিটাইজিং টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেগুলোর সবই ওদের জনপ্রিয় পুজোয় এবার বন্দোবস্ত করা হবে।
সাধারণভাবে যে কোনও বড় বারোয়ারি পুজোর খরচের একটা বড় অংশ আসে বিজ্ঞাপনদাতাদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে। কিন্তু করোনা লকডাউনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা রীতিমত খারাপ। সেক্ষেত্রে কত বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে। অরিজিৎ মৈত্র জানালেন, তাঁদের বরং উল্টোটাই মনে হচ্ছে যে দীর্ঘ কয়েক মাস বিজ্ঞাপন না দিয়ে থাকার পর পুজোয় একসঙ্গে বহু মানুষের নজরের সামনে নিজেদের পণ্য তুলে ধরার সুযোগটা কেউ ছাড়বেন না। কাজেই বিজ্ঞাপন আসবে।