পুজোর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র এখন আন্দোলননগরী
ধর্মতলা-ময়দান চত্বর শহর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। পুজোর সময় জমজমাট থাকে এই অঞ্চল। এবছর তার বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নানা আন্দোলন।
কলকাতায় দ্রোহকাল
কলকাতা শহরের বুকে এমন পোস্টার বাঙালি আগে দেখেনি। ‘শোক নয় দ্রোহ, উৎসবেও বিদ্রোহ’। হাওয়া অফিস সতর্ক করেছিল দুর্গাপুজোর কয়েকদিন কলকাতা-সহ সাতটি জেলায় বৃষ্টি হবে। কিন্তু প্রতিবাদ, বিদ্রোহের ভবিষ্যৎবাণী সম্ভব নয় হয়তো। পুজোর বাতাবরণের মধ্যেই শহরবাসী দেখছে কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে আন্দোলনের ঝড়।
এক হাজার ৩০০ দিনে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন
চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন বুধবার এক হাজার ৩০০ দিনে পা রাখলো। প্রায় চারবছর ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন তারা। পৃথিবীর ইতিহাসে এত দীর্ঘ আন্দোলন নজিরবিহীন।
আন্দোলনই 'উৎসব'
“এক হাজার৩০০ দিন ধরে আন্দোলন করে মানসিক, শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক-- সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত আমরা। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রী সকলেই শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন, কোনও ফল হয়নি। আমরা সেদিনই উৎসবকে উৎসবের মতো করে কাটাতে পারবো, যেদিন নিয়ম মেনে নিয়োগ হবে।” বললেন রাসমণি পাত্র।
কেবলই হতাশা
“২৫বছর পড়াশোনা করার পর কোথায় চাকরি করে সংসারের পাশে দাঁড়াবো, তা না করে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি।” আক্ষেপ মতিউরের গলায়। জানালেন, এত দীর্ঘ একটা সময় পথে বসে জীবন চালানো কঠিন। তাই তাদের অনেকেই আজ দিনমজুরের কাজ করছেন, কেউ পেট চালাতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন।
দাঁতচেপে লড়াই
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এক হাজার ৩০০দিনের এই আন্দোলন মঞ্চ তাই আগের মতো জমজমাট নয়। অনেকেই হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। আশা হারিয়েছেন কেউ কেউ। তবে অধিকাংশই দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
কেন চাকরি নেই?
পরীক্ষায় পাশ করা থেকে মেধাতালিকায় নাম তোলা-- শিক্ষক হওয়ার সমস্ত যোগ্যতাই অর্জন করেছেন তারা, কিন্তু চাকরি আজও অধরা। পোস্টার হাতে সরকারকে কটাক্ষ করে আন্দোলন করা ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নেই, এমনটাই জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
পোস্টারে অরিজিৎ
আরজি করের নির্যাতিতাকে উৎসর্গ করে সৃষ্টি করা অরিজিৎ সিংয়ের গানের লাইন চাকরিপ্রার্থীদের পোস্টারেও দেখা গেল। সরকারের উদ্দেশ্যেই যেন বলা হচ্ছে, “আর কবে চোখ মেলে তাকাবে?”
৮৩৮ দিনে উচ্চ প্রাথমিকের আন্দোলন
এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের ধর্ণামঞ্চের অনতিদূরেই মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে ৮৩৮ দিন ধরে অবস্থানরত উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। জানালেন, এবারেও পুজোর দিনগুলোতে তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
৭৬৪ দিনে ডাব্লিউবিসিএসসি-র আন্দোলন
ডাব্লিউবিসিএসএসসি গ্রুপ সি এবং ডি-র ওয়েটিং চাকরিপ্রার্থীরা ৭৬৪ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে। এবারের পুজোও পরিবারের সঙ্গে কাটানো হবে না। কাটবে আন্দোলন মঞ্চেই, জানালেন তারা।
৭৪৫ দিন ধরে আন্দোলন টেট চাকরিপ্রার্থীদের
“২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেছিলেন, প্রাইমারি টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছেন।” আন্দোলনের ৭৪৫তম দিনে জানালেন আন্দোলনকারীরা।
ডিএ আন্দোলন এক বছর আট মাসে
রাজ্যসরকারি কর্মচারীদের ডিএ আন্দোলনকারীরা শহিদ মিনারের নীচে ১বছর ৮মাস ২দিন ধরে অবস্থান করছেন। মঞ্চ দেখে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের উৎসাহে ভাঁটা পড়েছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাদের চাকরি বজায় রেখে আন্দোলন করতে হয়, তাই প্রতিদিন এখানে আসা সম্ভব হয় না, তবে পুজোয় জারি থাকবে অবস্থান।
অনশনের একশ ঘণ্টা
বাকি আন্দোলনগুলোর নীরিখে অপেক্ষাকৃত নবীন আন্দোলনটিই এইমুহূর্তে শহরের সবথেকে আলোচ্য বিষয়। জুনিয়র ডাক্তারেরা তাদের নির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। সেই অনশনের একশ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। বহু মানুষ উৎসবের আনন্দ উপেক্ষা করে অনশনমঞ্চে আসছেন সমর্থন জানাতে।