উত্তর ২৪ পরগনায় মিনাখাঁর আমতলা বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সেখানে এক গৃহবধূকে একটি মাছের ভেড়িতে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন যুবক এই সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
মিনাখাঁর এসডিপিও নির্মল দাস আনন্দবাজারকে বলেছেন, কুমারজোল গ্রামের সালাম সর্দার, হাবিবুল্লাহ মোল্লা, সরিফুল গাজি, সুরজিৎ মণ্ডল এবং মাড়িবেড়িয়ার রফিকুল ইসলাম মল্লিক ও কাদিরহাটির বাকিবিল্লা তরফদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মারধর, ভাঙচুরের অভিযোগ আছে। তাদের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ওই নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে নতুন বছরের রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, ভাঙরের ঘটকপুকুর এবং মিনাখাঁর কুমারজোল থেকে দুইটি দল পিকনিক করতে টাকি গিয়েছিল। সেখানে দুই দলের মধ্যে ঝামেলা হয়। হাতাহাতি হয়। স্থানীয় মানুষদের হস্তক্ষেপে তা সাময়িকভাবে মিটে যায়।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
প্রতিদিন গড়ে ৮৭টা ধর্ষণ
ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭টা ধর্ষণ হয়। ২০১৯ সালের হিসাব এটা। এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে বছরভর মোট ৩২ হাজার ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
নারী-নির্যাতন বেড়েছে
দেশজুড়ে মোট চার লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতিতা হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ২৩৬ জন। এই হিসাবই বলে দিচ্ছে, ভারতে নারী-নির্যাতন বেড়েছে।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
একে রাজস্থান, দুই নম্বরে উত্তর প্রদেশ
ধর্ষণের সংখ্যার নিরিখে ভারতে এক নম্বর রাজ্য হলো রাজস্থান। সেখানে ২০১৯-এ পাঁচ হাজার ৯৯৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ধর্ষিতা হয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। তিন নম্বরে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে দুই হাজার ৪৮৫ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
দিল্লিতে প্রতিদিন তিন জনকে ধর্ষণ
রাজধানী দিল্লির অবস্থাও শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন তিনজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ২০১৯-এ দুই হাজার ৩৫৫ জন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার ৪৫৬ জন নারী। পরিবারের সদস্যদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন ১২৫ জন নারী। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে আটজনকে। আর বিয়েতে পন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মারা হয়েছে ১১৬ জন নারীকে। সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২০১৮-র তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ২০ শতাংশ।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
ধর্ষণের পর হত্যা
ভারতে মোট ২৭৮ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ২০১৯-এ। মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মোট ৪৭ জন নারীকে হত্যার পর খুন করা হয়েছে মহারাষ্ট্রে। তার পরে আছে মধ্যপ্রদেশ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি এবং উত্তর প্রদেশে ৩৪টি।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
দলিত নারীদের নির্যাতনে একে উত্তর প্রদেশ
দলিত নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এক নম্বরে যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশ। সেখানে ২০১৯-এ ১১ হাজার ৮২৯ জন দলিত নারী নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছেন। আদিবাসী মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নম্বরে মধ্য প্রদেশ। ২০১৮-র তুলনায় দলিত নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে সাত শতাংশ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
দলিত মেয়েদের ধর্ষণ করে খুন
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের গোড়ায় তিনজন দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। হাথরাসে পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীর মৃত্যু হয় প্রায় দুই সপ্তাহ পর। বলরামপুরে কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন দলিত ছাত্রী। তাঁকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে অত্যাচার চালানো হয়। মেয়েটির মৃত্যু হয়। ভাদোইতে ১১ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মাথায় পাথর দিয়ে মারা হয়।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
অধিকাংশ ধর্ষক চেনা লোক
এনসিআরবি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ৯৪ শতাংশ নারীকে চেনাজানা লোকের হাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তারা কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী, চাকরিক্ষেত্রে বস, মালিক, সহকর্মী বা সামাজিক মাধ্যম সূত্রে চেনা।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
প্রতিবাদে বাধা
হাথরাসের ধর্ষণের প্রতিক্রিয়া সারা দেশে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাথরাসে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের আটকে দেয়া হয়েছিল হাথরাসে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে যেতে দেয়া হয়নি। দিল্লি-ঘেঁষা নয়ডাতে তাঁদের আটকে দেয়া হয়।
-
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
এনসিআরবি
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলাস্তরে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনফরমেশন ব্যবস্থা তৈরি হয়। তারা বছরে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে। অপরাধ চিত্র, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং কারাগার নিয়ে। সব রাজ্য সরকরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট বানানো হয়।
পিকনিক থেকে ফেরার সময়, দুই দলের বাসচালকের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। কুমারজোলের পিকনিক দলের বাসের কাচ ভেঙে দেয়া হয়। কুমারজোলের ছেলেরা মিনাখাঁয় কলকাতা-বাসন্তী হাইওয়েতে দাঁড়িয়েছিল। ভাঙরের পিকনিক দলের বাস সেখানে এলে তারা বাসটি দাঁড় করায়। তাদের হাতে লোহার রড, বাঁশ ইত্যাদি ছিল। তারা সেটা নিয়ে যাত্রীদের উপর চড়াও হয়। ওই নারী ও একজন পুরুষ ছাড়া বাকি সকলে পালায়। যুবকরা ওই দুইজনকে গাড়িতে তুলে নেয়। তারা যুবককে মারধর করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ওই নারীকে ভেড়িতে নিয়ে দুইজন ধর্ষণ করে। বাকিরা তাদের উৎসাহ দেয় বলে অভিযোগ।
ওই নারী পরে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানান। তারপর পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিএইচ/এসজি(আনন্দবাজার, জি নিউজ)