পাগলাটে যত প্রাণীর গল্প
অ্যাক্সোলোটল বা মানুষের মতো দেখতে লাল ঠোঁটের ব্যাটফিশ। এসব প্রাণীর কেউ কেউ অস্তিত্বের হুমকিতে রয়েছে। আবার কেউ কেউ বেশ ভালোভাবেই টিকে রয়েছে।
বদমেজাজি শুবিল
আপনি যদি অ্যানিমেশন সিনেমার ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এই প্রাণীর চেহারা নিশ্চয়ই কখনও না কখনও দেখেছেন। কিছুটা জ্ঞানী, কিছুটা ক্ষুব্ধ এই বুড়ো পাখিকে মাদাগাস্কারের মতো সিনেমাতেও দেখা গেছে। শুবিলকে বেশ বিপন্ন প্রজাতি মনে করা হয়। ২০১৮ সালে সবশেষ গণনায় পৃথিবীতে মোট শুবিলের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার ৩০০টি। তাদের সংখ্যা ক্রমেই কমে চলেছে। মধ্য এবং পূর্ব আফ্রিকাতে এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
মুখোশ পরা সাপ!
সাপের প্রজাতিটি সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম হেজাজ অঞ্চলে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হয়। গোপনে বাস করতে পছন্দ করা এই সাপ ঠান্ডা, আর্দ্র ঋতুর পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। পাথর এবং বালুকাময় মাটির বাসস্থান পছন্দ করে এই সাপ। মাথায় কালো রঙের কারণে এটিকে বালাক্লাভা বা স্কি-মাস্ক পরা সাপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়ে। এই সাপের প্রজাতিকে এখনও বিপন্ন বলে মনে করা হয় না।
হাত-পা ওয়ালা অ্যাক্সোলোটল
অ্যানিমেটেড মুভিতে দেখানোর জন্য সবচেয়ে দারুণ প্রাণী এই অ্যাক্সোলোটল। মানুষের অনেক অভিব্যক্তি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে এটি। মেক্সিকো সিটির হোচিমিলকো হ্রদের কেবল একটি এলাকাতে অ্যাক্সলোটলকে পাওয়া যায়। প্রাণীটিকে দারুণভাবে বিপন্ন বলে মনে করা হয়। অ্যাক্সোলোটল হল একটি স্যালামান্ডার যা লার্ভা অবস্থায় থাকে এবং এর শরীরের বাইরের ফুলকা থাকে।
সাপের গলার কচ্ছপ
এই প্রাণীটির দেখা পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার রোটি আইল্যান্ডে। সাত কোটি বছরেরও আগে অন্য সব প্রাণীর চেয়ে আলাদাভাবে এর বিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের ঘাড় এত লম্বা যে তারা কখনই অন্য কচ্ছপদের মতো পুরোপুরি খোলসের মধ্যে ঢুকতে পারে না। এই প্রজাতিটিও বিপন্ন বলে বিবেচিত।
লম্বা নাকের বানর
অস্বাভাবিক লম্বা নাকের জন্য প্রোবোসিস বানরকে নিয়ে অনেকেই হাসিতামাশা করেন। গবেষকরা এই প্রজাতির পুরুষ বানরের নাক, শরীর এবং অন্ডকোষের আকারের সঙ্গে তাদের নারী সঙ্গীর সংখ্যার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও এই প্রজাতি বিপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
লাল ঠোঁটের ব্যাটফিশ
এই অদ্ভুত প্রাণীটির দেখা কেবল গ্যালাপাগোস দ্বীপেই পাওয়া যায়। এরা সাঁতার কাটতে পারে, কিন্তু এরা জলের নীচে হেঁটে বেড়াতেই পছন্দ করে। গ্যালাপাগোস কনজারভেশন ট্রাস্ট এি মতে, এদের উজ্জ্বল ঠোঁট দেখলে মনে হয় যে মাত্রই এরা কোনো "রক্তাক্ত খাবার খেয়েছে বা উজ্জ্বল লিপস্টিক পরেছে।" ছোট মাছ, চিংড়ি এবং শামুক-ঝিনুককে প্রলুব্ধ করে খায় এরা। প্রজাতি হিসাবে এটি এখনও হুমকির মুখে পড়েনি।
নাক উঁচু বানর
মানুষের মতো দেখতে প্রাণীগুলোর মধ্যে এটি একটি। অ্যানিমেটেড সিনেমাতেই প্রায়ই এর দেখা মেলে। এর চুলের স্টাইল এলভিস প্রিসলির মতো। চীনের ইউনান প্রদেশে এর দেখা পাওয়া যায়। প্রজাতিটি বিপন্ন হলেও আনন্দের খবর হচ্ছে, এদের সংখ্যা আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে।
জলবায়ু নিয়ন্ত্রণকারী অ্যান্টিলোপ
সাইগা অ্যান্টিলোপের ফোলা নাক শুষ্ক গ্রীষ্মকালে বায়ুবাহিত ধূলিকণা ফিল্টার করে এবং শীতকালে ফুসফুসে প্রবেশের আগে উষ্ণ বাতাসকে ঠান্ডা করে। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিম মঙ্গোলিয়ায় এদের দেখা মেলে। প্রজাতিটি হুমকির মুখে রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭০-এর দশকে শিকারের কারণে এদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সংরক্ষণের কারণে এদের সংখ্যা আবার বাড়ছে।
টিটিকাকার 'অণ্ডকোষ' ব্যাঙ
এমন কোনো ব্যাঙ বা কোনো প্রাণী কি খাবেন যা দেখতে অণ্ডকোষের মতো? "ভাল স্বাদ" কি তখন বিবেচনায় নিবেন? আপনি না খেলেও বলিভিয়া এবং পেরুর বাসিন্দা ব্যাঙের এই প্রজাতিটি মানুষের খাওয়ার কারণেই এখন বিপন্ন। টিটিকাকা হ্রদের বাসিন্দা এই ব্যাঙের সংখ্যা কমে চলেছে। ট্রাউট প্রজাতির মাছ ব্যাঙের লার্ভা খাওয়ায় এটি আরো বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
বানরখেকো ঈগল
মাঝে মাঝে প্রকৃতির অর্থ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হতে পারে। ফিলিপাইন্সের এই ঈগল উড়ন্ত লেমুর, পাম সিভেট এবং বানর খেয়ে বাঁচে। এইসব প্রাণীই আকারে বেশ বড়। কিন্তু তারপরেও বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পাখিদের মধ্যে একটি এই ঈগল। লুজোন, সমর, লেয়তে এবং মিন্দানাও দ্বীপে এই প্রজাতির মাত্র কয়েকশ ঈগল টিকে রয়েছে।