খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের প্রত্যন্ত শহর কারাক। সেখানেই চলছিল পোলিওর বিরুদ্ধে অভিযান। এখানে গত বছর ১৫টি বাচ্চা পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিল। পোলিও রুখতে একটি কেন্দ্রে টিকা দিচ্ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
কারাকের পুলিশ অফিসার মোহাম্মদ ইশহাক খান ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''পুলিশ যখন স্বাস্থ্যকর্মীদের এসকর্ট করে টিকাকেন্দ্রে নিয়ে আসছিল, তখনই সেখানে হামলা করে সশস্ত্র বাইক-আরোহীরা। তারা গুলি চালায়। আমাদের সহকর্মী জুনেইদ উল্লাহ মারা যান। যে গাড়িতে পোলিও কর্মীরা ছিলেন, সেখানেও তারা গুলি চালায়।''
তিনি বলেছেন, পুলিশ এখন ওই দুই অপরাধীর খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। একদিনের জন্য টিকা দেয়ার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানে এখন পোলিও টিকা দেওয়ার অভিযান চলছে। জেশজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী চার কোটি বাচ্চাকে পোলিও টিকা দেয়া হচ্ছে। দুই লাখ ৮৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী টিকা দেয়া ও ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন।
ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচার
অতীতেও দেখা গেছে, পোলিও ভ্যাকসিন দেয়ার কাজে নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। কিছু চরমপন্থী সংগঠন এই ধরনের আক্রমণ চালায়।
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
বিশ্বের কোথাও মরণব্যাধির প্রাদুর্ভাব হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল বিশেষজ্ঞ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ (পিএইচইআইসি) ঘোষণা করেন৷ ২০০৫ সাল থেকে পিএইচআইসি ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ছয় বার বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
করোনা ভাইরাস
উহান শহরে প্রাদুর্ভাবের পর করোনা ভাইরাস দ্রুত আশেপাশের নগরীতে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতে চীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ কিন্তু আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়৷
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
সোয়াইন ফ্লু
২০১৯ সালে মেক্সিকোর ভেরাক্রুজ নগরীতে এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জার (সোয়াইন ফ্লু নামে পরিচিত) প্রাদুর্ভাব হয়৷ যা পরে আরো কয়েকটি দেশে জড়িয়ে পড়ে৷ সোয়াইন ফ্লুতে প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ যদিও আনুষ্ঠানিক হিসেবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার বলা হয়৷
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা
পশ্চিম আফ্রিকার তিন দেশ সিয়েরা লিওন, গিনি ও লাইবেরিয়ায় ২০১৩ ও ২০১৬ সালে ইবোলা ভাইরাস মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে দেশগুলোতে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
পোলিও
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এখন পোলিও মুক্ত৷ কিন্তু পাকিস্তান সরকার দেশজুড়ে পোলিও প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাধ্য হয়ে রোগটি আবারও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ জারি করে৷ পাকিস্তান, সিরিয়া ও ক্যামেরনে এখনো শিশুদের পোলিও আক্রান্ত হতে দেখা যায়৷ বিশ্বে বর্তমানে পোলিও আক্রান্ত ৪১৭ শিশুর মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের বেশি পাকিস্তানি৷
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
জিকা
২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস নিয়ে ডব্লিউএইচও ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ জারি করে৷ তার এক বছর আগে ব্রাজিলে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়, যা পরে আরো ৬০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ এমনিতে প্রাণঘাতী না হলেও অন্তঃস্বত্তা নারী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হতে পারে৷ ওই সময় প্রায় ২৩০০ শিশু মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল৷
-
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
কঙ্গোতে ইবোলা
২০১৯ সালের জুলাই মাসে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ ২০১৮ সালের অগাস্ট থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইবোলা রোগী সনাক্ত হয়৷ যাদের মধ্যে ২২৩৬ জনা মারা গেছেন৷
তালেবানের দাবি, এই ধরনের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলি চরবৃত্তি চালায়। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে জেলে বন্দি চিকিৎসক শাকিল আফ্রিদি হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন দেয়ার নাম করে আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সম্পর্কে খবর নিয়েছিলেন এবং সিআইএ-কে সেই খবর দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তারপর মার্কিন স্পেশাল ফোর্স ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানে গিয়ে লাদেনকে হত্যা করে।
সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''পাকিস্তানের ওই অঞ্চলে প্রচার করা হয়, পোলিও ভ্যাকসিন দেয়া আসলে বিদেশিদের উদ্যোগ।''
পোলিও বাড়ছে পাকিস্তানে
পোলিও এখন দুইটি দেশে দেখতে পাওয়া যায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। গত কয়েক মাসে পাকিস্তানে পোলিও আক্রান্ত বাচ্চার সংখ্যা বেড়েছে। ৬৮ জন সম্প্রতি পোলিওয় আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত, পাঁচ বছরের কম বয়সীরাই পোলিওতে আক্রান্ত হয়। মেরুদণ্ডে সংক্রমণ দেখা দেয়। তার ফলে প্যারালিসিস হয়।
পাকিস্তানে ২০১৭ সালে আটটি এবং ২০১৮ সালে ১২টি পোলিওর ঘটনা ধরা পড়ে। কিন্তু ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ১৪৮। ১৯৯৪ সালে পাকিস্তানে প্রথম পোলিও অভিযান শুরু হয়। তখন পাকিস্তানে ২০ হাজার বাচ্চা প্রতি বছর পোলিওতে আক্রান্ত হতো। দশ বছর পর অর্থাৎ, ২০০৪ সালে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে।
করোনার পর সরকারের নজর পোলিও থেকে কোভিড থামাবার দিকে যায়। ফলে আবার পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এখন সারা দেশে পোলিও ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
জিএইচ/এসজি(এপি, ডিপিএ, এএফপি)