গুজরাটের কাছে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিল নৌকা জলপরী। নৌকায় ছিলেন সাতজন মৎস্যজীবী। ওখার কছে পাকিস্তান মেরিটাইম সিকিউরিটি এজেন্সি(পিএমএসএ)-র রক্ষীরা নৌকা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাতে এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। একজন আহত। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার।
দেবভূমি দ্বারকার পুলিশ সুপার সুনীল জোশী জানিয়েছেন, পাক রক্ষীদের গুলিতে যে ভারতীয় মৎস্যজীবী মারা গেছেন, তার নাম শ্রীধর রমেশ চামরে। বয়স ৩৩ বছর। বাড়ি মহারাষ্ট্রের পালঘরের ভাদরাই গ্রামে। রোববার তার দেহ ওখা বন্দরে নিয়ে আসা হয়। নভি বন্দর পুলিশ থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
কী ঘটেছিল
জলপরীর মালিক জয়ন্তীভাই রাঠোর জানিয়েছেন, ‘‘শ্রীধর নৌকার কেবিনে ছিলেন। সেখানেই তার গুলি লাগে। তিনটে বুলেট তার বুকে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়। মাছ ধরার নৌকার ক্যাপ্টেন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানী রক্ষীরা এলোপাথারি গুলি চালাচ্ছিল৷’’
ওখার কাছে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের এর আগেও ধরেছে পাকিস্তান। গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান জানিয়েছিল, ২৭০ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী ও ৪৯ জন সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের জেলে বন্দি। আর ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যসভায় জানিয়েছে, পাকিস্তানের ৭৭জন মৎস্যজীবী ও ২৬৩ জন সাধারণ মানুষ ভারতের জেলে বন্দি।
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
তালেবান-পাকিস্তান সম্পর্ক
তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সম্পর্ক সবসময়ই বেশ ভালো৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে বহুবার৷ গনি সরকারবিরোধী যুদ্ধে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগও আছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ পাকিস্তান অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ ওপরের ছবিতে পাকিস্তানের খাইবার জেলার আফগানিস্তান সংলগ্ন তোরখাম সীমান্তে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছে তালেবান ও পাকিস্তানের সেনারা৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
তালেবানের আগমন, পাকিস্তানে ‘স্বাগতম’
তালেবান প্রায় পুরো আফগানিস্তানের দখল নেয়ায় পাকিস্তানে নানা পর্যায় থেকে ব্যাপকভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তালেবানের আগমনে আফগানিস্তান ‘দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত হলো’৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
পাকিস্তানে উচ্ছ্বাসের কারণ
নিউইয়র্কের ইথাকা কলেজের শিক্ষক রাজা আহমেদ রুমি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টেলিভিশনে যে উল্লাস দেখা গেছে তার মূল কারণ আফগানিস্তানের ওপর ভারতের যে প্রভাব গড়ে উঠেছিল তা দূর হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়া৷’’ ১৯৪৭-এর পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তান যে নিজেদের মধ্যে তিনবার বড় যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং সে কারণে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব কাজ করে তা-ও মনে করিয়ে দেন তিনি৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
সম্পর্ক আরো ভালো করার চেষ্টা
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তালেবানের সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজে অংশ নিচ্ছেন পাকিস্তানের কয়েকজন কর্মকর্তা৷ এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, পাকিস্তান চায় আফগানিস্তানে অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক৷ তবে এ ক্ষেত্রে আফগান নাগরিকদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
‘সময়মতো’ এগিয়ে এসেছে চীন
চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ অন্যদিকে ভারত-চীনের বৈরিতাও চলছে দীর্ঘদিন ধরে৷ ফলে তালেবানের আগমনে সেখানে ভারতের প্রভাব কমবে বলে চীনও খুশি৷ চীন বলছে, তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো রাখা জরুরি, কারণ, তালেবান শিনজিয়াং অঞ্চলকে ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) জঙ্গি সংগঠনের প্রভাবমুক্ত রাখার কাজে সহায়তা করতে পারবে৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
তালেবান প্রশ্নে চীন-ভারতের মিল!
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তালেবানের সার্বিক ক্ষমতাবৃদ্ধির প্রশ্নে চীন আর পাকিস্তানের অবস্থান বাস্তবে এক নয়৷ সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ-এর অধ্যাপক ঝ্যাং লি-ওর মতে, ‘‘পাকিস্তান যেমন আফগানিস্তানকে ভারতবিরোধী অবস্থানে দেখতে চাইবে, চীনের বেলায় এমন দৃষ্টিভঙ্গি অত্যাবশ্যক নয়৷ চীন সবার আগে চায় শিনজিয়াং অঞ্চলে কোনোভাবেই যাতে সন্ত্রাসবাদ বিস্তার লাভ না করে৷’’
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
চীনের ‘অস্বস্তি’
চীনের বিরুদ্ধে রয়েছে মুসলিম নিপীড়ন, বিশেষ করে উইগুরদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানোর সুদীর্ঘ অভিযোগ৷ বেইজিং এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে সব সময়৷তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হলেও এ বিষয়টি দু পক্ষের মধ্যে অস্বস্তি হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
চীনের কাছে তালেবানের প্রত্যাশা
দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর অধ্যাপক ব্রহ্মা চেলানি মনে করেন, আফগানিস্তানে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু ধরনের সহায়তা জরুরি ভিত্তিতে চাইছে তালেবান৷ এক, তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কূটনৈতিক সহায়তা, দুই, অবকাঠামো নির্মাণ এবং সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে অর্থনৈতিক সহায়তা৷ অধ্যাপক ব্রহ্মার মতে, চীন দুই ধরনের সহায়তা দিতেই এখন পুরোপুরি প্রস্তুত৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা এবং ভারতের আশঙ্কা
ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানে ঢুকে হত্যা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী৷ ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয় আফগানিস্তানের কান্দাহারে৷ পাকিস্তানি তিন জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে বিমানের যাত্রীদের ফেরত পেয়েছিল ভারত৷ অন্যদিকে বিমান ছিনতাইকারীদের নিরাপদে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল তালেবান৷ আবার যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে চায় ভারত৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
ভারতের আরেক আশঙ্কা
গত ২০ বছর আশরাফ গনি সরকারের পাশে ছিল ভারত৷ এ সময়ে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশেই উন্নয়নমূলক নানা ধরনের প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে দেশটি৷ কাবুলে জাতীয় সংসদ ভবনও তৈরি হয়েছে ভারতের অর্থায়নে৷ মোদী সরকারের আশঙ্কা, তালেবান ক্ষমতায় আসায় সমস্ত বিনিয়োগ ‘ভেস্তে’ যেতে পারে৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
ভারতের কৌশলগত ভুল
যুক্তরাষ্ট্র যখন তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে, তখনো ভারত পুরোপুরি এবং শুধুই আশরাফ গনি সরকারের পাশে থেকে কৌশলগত ভুল করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷ তাদের মতে, তালেবান একে একে আফগানিস্তানের সব রাজ্য দখলে নিতে শুরু করার পরও যে ভারত তালেবানবিরোধী বক্তব্যে অটল ছিল কূটনৈতিকভাবে তা-ও এখন ভুল প্রমাণিত৷
-
আফগানিস্তানকে ঘিরে চীন, পাকিস্তান, ভারতের নতুন ‘লড়াই’
চীন, পাকিস্তান সুবিধাজনক অবস্থানে, তবু আশাবাদী ভারত
তালেবান ফেরায় আফগানিস্তানে পাকিস্তান এবং চীনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা স্পষ্টতই উন্মুক্ত৷ তবে ভারত একটু দেরিতে হলেও পরিস্থিতি বুঝে কৌশল পরিবর্তন করেছে৷ কাবুলে এক সময় ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জয়ন্ত প্রসাদ মনে করেন, ভারত এখন সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ‘লং গেম’ খেলবে, অর্থাৎ লম্বা সময় নিয়ে চেষ্টা করবে এবং তাতে তালেবানের সঙ্গে একটা সমঝোতার সম্পর্ক গড়া হয়ত সম্ভবও হবে৷
কেন এই ঘটনা?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে হবে না। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত এখন সফট ডিপ্লোমেসির রাস্তায় হাঁটছে। আর দুই দিন পরেই ভারতের উদ্যোগে আফগনিস্তান নিয়ে দিল্লিতে এনএসএ পর্যায়ের আলোচনা হবে। তাতে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ করা সত্ত্বেও তারা যোগ দিচ্ছে না। চীন এখনো জানায়নি তারা আসবে কি না। তবে রাশিয়া, ইরান সহ একাধিক দেশ বৈঠকে যোগ দেবে। সম্প্রতি গ্লাসগোতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরও যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান গুলি করে এক মৎস্যজীবীকে মারল।’’
উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ''পাকিস্তান তাদের আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে। ভারতীয় কূটনীতির মোকাবিলায় তারা এই পথ নিয়েছে। ভারতের থেকে তাদের উল্টো রাস্তা নিতে হবে বলেই এই কাজ করেছে।''
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতীয় নৌকাটি তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছিল। প্রথমে তারা শূন্যে গুলি চালায়। সতর্ক করার চেষ্টা করে। তাতে কাজ হয়নি। তখন তারা নৌকা লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
উৎপল ভট্টচার্যের বক্তব্য, ''কোনো ঘটনা ঘটলে পাকিস্তানের তরফে ঠিক এই বয়ানই দেয়া হয়।''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানাচ্ছে, ভারত বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে বিষয়টি তোলা হবে। ভারত এই বিষয়ে কঠোর মনোভাব নিয়েই চলবে।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি)