আইএসআই-এ নতুন নিয়োগ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি', সংক্ষেপে আইএসআই৷ সংস্থাটির নতুন প্রধান হচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রিজওয়ান আখতার, প্রথাগত রীতি-নীতি ভেঙে যাঁকে নিয়োগ করলেন পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ৷
সাধারণত সেনাপ্রধানের সুপারিশক্রমে আইএসআই প্রধানকে নিযুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু এবার সেনাপ্রধান নিজেই তাঁর পছন্দমত ব্যক্তিকে ঐ পদে বসিয়ে নিজের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েম করলেন৷ আগামী অক্টোবর মাসে লেফটেন্যান্ট জেনারেল রিজওয়ান আখতার তাঁর কার্যভার গ্রহণ করবেন৷
বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে সেনাপ্রধানের এই কর্তৃত্ব ভারত ভালো চোখে দেখছে না৷ পাকিস্তানে বর্তমানে চলেছে এক রাজনৈতিক সংকট৷ ক্রিকেট খেলোয়াড়-কাম-রাজনীতিক তেহেরিক-ই-ইনসাফ পার্টির প্রধান ইমরান খান এবং পাকিস্তান-আওয়ামী তেহেরিক পার্টির নেতা কাদরি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ইস্তফার দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় তুলেছেন৷ এই পরিস্থিতিতে ভারত মনে করে, সেনাপ্রধান নিজের লোককে আইএসআই-এর মতো এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানের পদে বসিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মাথা গলাচ্ছেন৷
এমনিতে আইএসআই সম্পর্কে ভারত চিরদিনই স্পর্শকাতর, বিশেষ করে ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপের পেছনে আইএসআই-এর মদত থাকার অভিযোগ চিরদিনই করে এসেছে নতুন দিল্লি৷ এছাড়া নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদের নজিরও পাকিস্তানে নতুন নয়৷
আইএসআই প্রধানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ছাড়াও প্রতিবেশী ভারত ও আফগানিস্তানে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর পেছনেও থাকে৷ এমনটাই অভিযোগ ভারতের৷ পাকিস্তান সরকার অবশ্য এই অভিযোগ কোনোদিনই স্বীকার করেনি৷ শুধু ভারতই নয়, মার্কিন প্রশাসনও হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ ভারতে এবং আফগানিস্তানে কিছু জেহাদি গোষ্ঠীকে মদত দেবার জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে৷
উল্লেখ্য, আল-কায়েদার প্রধান কুখ্যাত ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানে লুকিয়ে রাখার পেছনেও আইএসআই-এর হাত ছিল বলে মনে করে মার্কিন প্রশাসন৷ তবে কার্যভার গ্রহণের পর নতুন আইএসআই প্রধানের গোয়েন্দাগিরি কোন পথে যায়, সেদিকে ভারত অবশ্যই চোখ রাখবে৷ তাছাড়া ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকায় হালের বন্যার সুযোগ নিয়ে কয়েক'শো জঙ্গি পাকিস্তানের দিক থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে এবং ভবিষ্যতে করবে – এমনটাই মনে করছেন ভারতের সেনা ও গোয়েন্দা বিভাগ৷ তাই তাঁদের অতি মাত্রায় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আখতার পাকিস্তানের দক্ষিণাংশে সিন্ধ প্রদেশে আধা সামরিক রেঞ্জার বাহিনীর পদে থাকাকালীন করাচি শহরকে জঙ্গি গোষ্ঠী এবং সমাজবিরোধীদের ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা থেকে যেভাবে কড়া হাতে দমন করেছিলেন, তাতে তাঁর নেতৃত্বের ওপর মহল যে প্রশংসা করেছিলেন – তা ভারতের অজানা নয়৷