পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনার সঙ্গে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের লড়াই এখনো অব্যাহত৷ তারই মধ্যে পশ্চিম ইউক্রেনে সেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রাগার ধ্বংস করা গেছে বলে দাবি রাশিয়ার৷ রাশিয়ার প্রশাসন দাবি করেছে, পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আসা অস্ত্র ওই অস্ত্রাগারে মজুত করেছিল ইউক্রেন৷ ঘটনায় বেশ কিছু ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে ইউক্রেন জানিয়েছে। চারটি বেসামরিক ভবনও ধ্বংস হয়েছে বলে তাদের দাবি৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
অসংখ্য শরণার্থী
রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন৷ আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
খাদ্য সংকট
বিশ্বের অর্ধেক সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেল উৎপাদন করে ইউক্রেন৷ এছাড়া দেশটি ১৫% ভুট্টা ও ১০% গম রপ্তানি করে৷ যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ কারণে এসব পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷ গেল মে মাস পর্যন্ত ২৩টি দেশ এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
জ্বালানি সংকট
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ৷ তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কয়লা রপ্তানিকারক৷ ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ রাশিয়াও একাধিক ইউরোপীয় দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে দাম বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের৷ বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম৷ ইউরোজোনে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৮.১%৷ সারা বিশ্বেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
ন্যাটোর পুনর্জন্ম
রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
চরটকিভের হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ রোববার রাতে ভিডিওবার্তায় তিনি বলেছেন, রাশিয়া কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালায়নি৷ বেলাগাম আক্রমণ চালিয়েছে তারা। ঘটনায় অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। তারমধ্যে বেশ কিছু বেসামরিক ব্যক্তিও আছেন৷
সিভিয়েরোদনেৎস্কের পরিস্থিতি
ইউক্রেনের এক সরকারি কর্মকর্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, সিভিয়েরোদনেৎস্কে তীব্র লড়াই হচ্ছে। কিন্তু শহরটি এখনো রাশিয়ার হাতে চলে যায়নি। প্রতিটি রাস্তা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তার বক্তব্য, সিভিয়েরোদনেৎস্কের স্টিল কারখানাটি এখনো ইউক্রেনের সেনার দখলে। ওর ভিতরে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনের সেনা গোটা কারখানাটি ঘিরে রেখেছে। সেখানে তীব্র লড়াই হচ্ছে। কিন্তু রাশিয়ার সেনা ওই কারখানার সামান্য অংশও এখনো দখল করতে পারেনি।
এর আগে ঠিক এভাবেই মারিউপলে স্টিল কারখানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু বেসামরিক মানুষ। গোটা মারিউপল হাতছাড়া হয়ে গেলেও ওই কারখানা থেকে লড়াই করছিল ইউক্রেনের সেনা। পর্যন্ত অবশ্য রাশিয়া তাদের গ্রেপ্তার করে এবং কারখানাটি দখল করে নেয়।
-
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
দরজায় চড়ে ‘নরক’ থেকে হাসপাতালে
যুদ্ধাহত সৈনিক ইগর বলছিলেন, ‘‘আমরা নরক থেকে এখানে এসেছি৷’’ বাখমুতের এই হাসপাতালে তিনি এসেছেন বাঁচার আশায়৷ হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার এবং প্যারামেডিক্স প্রাণপণ লড়ছেন তাদের বাঁচাতে৷ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে গেলে কিছুই নেই৷ পর্যাপ্ত স্ট্রেচারও না থাকায় ওপরের ছবির মতো কাঠের দরজায় তুলে আনতে হচ্ছে আহত সৈন্যদের৷
-
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স
এমনকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের নিয়ে আসার জন্য ভালো কোনো অ্যাম্বুলেন্সও নেই৷ জার্মানি এবং পোল্যান্ডের তৈরি কয়েকটি সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা বাখমুতের এই হাসপাতালের৷
-
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
ক্যানাডা থেকে ইউক্রেনে
ছবির এই নারীর নাম এলেনা বুলাখতিনা৷ রুশ বংশোদ্ভূত এই ক্যানাডিয়ান কাজ করছেন পিরোগভ ফার্স্ট ভলান্টিয়ার মোবাইল হসপিট্যালে৷ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালটির মূল কাজ লুহানস্ক অঞ্চলের পোপসানা শহরের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈনিকদের বাখমুতের হাসপাতালে নিয়ে আসা৷ আহতদের সব চিকিৎসা হয় না এখানে৷ প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তপাত বন্ধ করে, কিছুটা সুস্থ করে সব রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের বড় কোনো হাসপাতালে৷
-
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
‘এত রোগী আসবে ভাবিনি’
বুলাখতিনার ‘বস’ সভেতলানা ড্রুজেনকো জানালেন এত আহত সৈনিকের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখনও ভাবিনি এত লোক আহত হয়ে আসবে৷ এখন যে হারে আসছে, সংখ্যাটা সত্যিই বিশাল৷ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, সব শহরেই মারা যাচ্ছে মানুষ৷’’
-
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
‘পোপাসনা এখন ধ্বংসস্তূপ‘
আহত সৈন্য ইগরের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা খুব ভয়াবহ৷ বলছিলেন, ‘‘ওরা (রুশ বাহিনী) ভূমি থেকে এবং বিমান থেকে হামলা চালিয়েছে, সব জায়গায় বোমা ফেলছে, দিনে-রাতে হামলা চালাচ্ছে৷ পোপাসনা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে৷’’
-
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
আহত আলেসান্দ্রোর স্বস্তি
যুদ্ধাহত সৈনিক আলেসান্দ্রোর পরিবার যুদ্ধ শুরুর পরই ইউক্রেন ছেড়ে চলে গেছে পোল্যান্ডে৷ সেখানে তারা নিরাপদে আছেন৷ হাসপাতালে নিজের শরীরের ব্যথা ভুলে সন্তানের সঙ্গে কথা বলছেন আলেসান্দ্রো৷
অ্যামনেস্টির বক্তব্য
খারকিভে রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে এবার সরব হলো মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের বক্তব্য, সেখানে হামলা চালানোর সময় রাশিয়া বেসামরিক মানুষদেরও বাদ দেয়নি। সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। শয়ে শয়ে বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠনটির দাবি। এর আগে কিয়েভের অদূরে একটি গণকবর উদ্ধার হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, সেখানেও রাশিয়া নির্বিচারে 'গণহত্যা' করেছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এর আগে একাধিকবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে।
আরো অস্ত্রের প্রয়োজন
ইউক্রেনপশ্চিমা বিশ্বের কাছে আরো অস্ত্র চেয়েছে। জেলেনস্কির বক্তব্য, রাশিয়াকে প্রতিহত করার জন্য আরো উন্নত অস্ত্র তাদের প্রয়োজন। এর মধ্যেই ন্যাটোর বিশেষ মিসাইল সিস্টেম ইউক্রেনের হাতে পৌঁছেছে। কিন্তু জেলেনস্কি জানিয়েছেন তাদের আরো অস্ত্র প্রয়োজন। অ্যামেরিকা এবং যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, দ্রুত ইউক্রেনের হাতে আরো অত্যাধুনিক অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)