প্রথম তিন পর্বের ভোট শেষ। সেখানে ওয়েইসির দল এআইএমআইএমের একজন প্রার্থীও ছিল না। অবশেষে ওয়েইসি প্রার্থী দিলেন মাত্র সাতটি আসনে। রতুয়া, সাগরদিঘি, জলঙ্গি, মালতীপুর, ভরতপুর, ইটাহার ও আসানসোল উত্তর।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুসলিম প্রধান কেন্দ্রগুলিতে তিনি প্রার্থীা দেননি। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুরের অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী দেননি তিনি। বোঝা যাচ্ছে, তার এই লড়াইটা প্রতীকী।
অথচ, বিহারের বিধানসভা ভোটে সাফল্য পেয়ে ওয়েইসি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গেও পুরো শক্তি দিয়ে লড়বেন। নিজের সংগঠনও তৈরি করেছিলেন। আব্বাস সিদ্দিকির দলের সঙ্গেও জোট করার চেষ্টা করেছিলেন। সেটা সফল হয়নি। আব্বাস সিদ্দিকি বাম ও কংগ্রেসের জোটে ঢুকেছেন। ওয়েইসি এখন মাত্র সাতটি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন।
প্রবীণ সাংবাদিক মিলন দত্ত মনে করেন, ওয়েইসি পশ্চিমবঙ্গে জল মাপতে চাইছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস বলছে, এখানে মুসলিম নামধারী কোনো দল ভোটে সাফল্য পায় না। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বরাবরই ধর্মনিরপেক্ষ। এই অবস্থায় ওয়েইসি অল্প কিছু প্রার্থী দিয়ে পরখ করে দেখতে চান, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা সেই ট্র্যাডিশন থেকে বেরিয়ে তাকে ভোট দেন কি না।'' মিলন মনে করেন, ''পশ্চিমবঙ্গের এই ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে আব্বাস সিদ্দিকিও তার দলের নাম দিয়েছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। তাকেও দলিত, আদিবাসীদের নিয়ে দল করতে হয়েছে।''
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে
পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই কমবেশি মুসলিম ভোটদাতা আছেন। তবে সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে। সেখানে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। তারপরেই রয়েছে মালদহ। ৫১ শতাংশ। উত্তর দিনাজপুরে ৪৯ শতাংশ। কলকাতায় ২০ শতাংশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩৫ শতাংশ, উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬ শতাংশের মতো মুসলিম ভোটদাতা আছেন।
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
মুসলিম ভোটের দাবিদার
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রধান দাবিদার হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চা। গত নির্বাচনে মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পেয়েছিলেন মমতাই। এবার বাম জোটও মুসলিম ভোট ফিরে পেতে চায়। ছবিতে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন বাম জোটের শরিক দলের নেতা আব্বাস সিদ্দিকি।
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
আব্বাস সিদ্দিকি ভরসা
বামেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চায় আছে কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির নবগঠিত ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি সম্প্রতি তার দল গঠন করেছেন। বাম ও কংগ্রেসের আশা, সিদ্দিকি মুসলিম ভোটের একটা অংশ জোটের দিকে টানতে পারবেন।
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
ওয়েইসি এখনো প্রার্থী দেননি
এমআইএম(মিম) নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছিলেন। তিনি অনেক আসনে আরজেডি-কংগ্রেসের মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে পেরেছিলেন। তাতে অবশ্য নীতীশ কুমার ও বিজেপি-র জয়ের পথ প্রশস্থ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েও প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থী দেননি তিনি।
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
ওয়েইসির দলে ক্ষোভ
পশ্চিমবঙ্গে মিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহিরুল হাসান পদত্যাগ করেছেন। ওয়েইসি প্রার্থী না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের ১৩টি আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা ছিল। সেটাও ঘোষণা করা হয়নি। ওয়েইসির সভাও বাতিল হয়েছে। ফলে ওয়েইসি কী করবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
তৃণমূলের আশা
তৃণমূল নেতাদের আশা, গতবারের মতো তারা এবারেও মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পাবেন। তবে গতবারের তুলনায় মমতা এবার ১০ জন মুসলিম প্রার্থী কম দিয়েছেন। বিজেপি-র মোকাবিলায় তিনি হিন্দুত্বের তাসও খেলছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিমদের জন্য অনেক কাজ করেছেন এবং করার চেষ্টা করেছেন।
-
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
মুসলিম ভোট কোনদিকে
পশ্চিমবঙ্গে একসময় মুসলিম ভোট ভাগ হতো বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে। মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় তৃণমূল করার পর পরিস্থিতির বদলায়। বিজেপি-র দিকে মুসলিম ভোট বিশেষ যায় না। সে কথা মাথায় রাখলে মুসলিম ভোটদাতার কাছে বিকল্প তৃণমূল ও বাম জোট। দুই মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদহ হলো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। তাদের জয় নির্ভর করছে, মুসলিমরা কতটা পাশে থাকবেন তার উপর। বাকি জেলাতে মুসলিম ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল আশাবাদী।
পশ্চিমবঙ্গে দল তৈরির ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়েছেন ওয়েইসি। যাদের নিয়ে দল করছিলেন, তাদের অনেকেই তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। প্রার্থী দিচ্ছেন না বলে কিছুদিন আগে দলের প্রধানও ছেড়ে দিয়েছেন। মিলনের বক্তব্য, সিদ্দিকুল্লার মতো নেতাও নিজের দল করে কিছু করতে পারেননি। পরে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাফল্য পান।
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ওয়েইসি যে খুব একটা আশা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন তা নয়, তবে তার উদ্দেশ্য কিছু আসনে মুসলিম ভোট কেটে তৃণমূল ও বাম জোটের প্রার্থীদের বিপাকে ফেলা। তাতে বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্থ হবে।''
ওয়েইসি যে জায়গায় প্রার্থী দিয়েছেন, সেটা কংগ্রেসের শক্ত জমি। ফলে ভোট কাটতে পারলে কংগ্রেস সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে আসানসোলের মতো কেন্দ্রে মুসলিম ভোট কাটতে পারলে তৃণমূলের ক্ষতি হবে। তেলেঙ্গানার বাইরে বিহার, মহারাষ্ট্রে সাফল্য পেয়েছেন ওয়েইসি। বাংলায় পাবেন কি? মিলন, আশিসরা মনে করছেন, এখানে তার সাফল্য পাওয়ার আশা খুবই কম।