1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে উপাচার্য নিয়োগে বরাবরই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ

১৪ মে ২০২১

বাম আমল থেকেই পশ্চিমবঙ্গে উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল আমলে তা অন্য পর্যায়ে পৌঁছেছে।

https://p.dw.com/p/3tPuH
Indien Eingang zur Jadavpur Universität in Kalkutta
ছবি: DW/P. Samanta

নব্বই দশকের শেষ পর্বের কথা। আনন্দবাজার পত্রিকা একটি শব্দবন্ধ একের পর এক রিপোর্টে ব্যবহার করতে শুরু করে। 'শিক্ষার অনিলায়ন'। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী শাসন। রাজ্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস। বলা হতো, মহাকরণ নয়, বামফ্রন্ট রাজ্য চালায় সিপিএমে রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-- সমস্ত নিয়োগেই পার্টির হাত থাকে।

স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে শব্দবন্ধটি কেবল আনন্দবাজার পত্রিকা নয়, রাজ্যের বহু বিশিষ্ট মানুষই ব্যবহার করেছেন। বস্তুত, বাম আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের সঙ্গে সরকারের বিতণ্ডা একাধিকবার সামনে এসেছে। যার অন্যতম উদাহরণ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং অর্থনীতিবিদ সন্তোষ ভট্টাচার্য।

আশির দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন একদা বামপন্থি সন্তোষ ভট্টাচার্য। পরবর্তীকালে অবশ্য তিনি চীনের তথাকথিত উদার অর্থনীতির সমর্থক হয়েছিলেন। বাম দলের থেকে নিজের দূরত্বও তৈরি করেছিলেন। সন্তোষ ভট্টাচার্যের সেই মানসিকতা পছন্দ হয়নি বামপন্থি সরকারের। ফলে তাকে উপাচার্য পদ থেকে সরানোর প্রবল চেষ্টা হয়েছিল। সন্তোষ ভট্টাচার্যও প্রকাশ্য বামপন্থি শাসনের সমালোচনা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, সরকার কী ভাবে তাকে উপাচার্য পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করছে. বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোনমি বা স্বশাসনের পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন তিনি। সরকারের সঙ্গে উপাচার্যের সাংঘর্ষিক সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে ইতিহাস আজও সন্তোষ ভট্টাচার্যের ঘটনা সামনে নিয়ে আসে। তারই প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে অনিলায়ন শব্দটি সামনে এসেছিল। যদিও সন্তোষ ভট্টাচার্যের সময়ে অনিল বিশ্বাস রাজ্য সম্পাদক ছিলেন না।

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে

বামপন্থি শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার শিক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরতেন। ক্ষমতায় এসেও তিনি দাবি করেছিলেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি প্রবেশ করবে না। কিন্তু বাস্তবে কি তা হয়েছে? তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই পুরনো বিতর্ক নতুন মোড়কে ফিরে আসে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হয় অভিজিৎ চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তিকে। মুখ্যমন্ত্রীর দলীয় সভায় যে ব্যক্তিকে মঞ্চে বসতে দেখা গিয়েছিল।

সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ। অভিযোগ ছিল, অভিজিৎ চক্রবর্তীর অঙ্গুলিহেলনেই সে কাজ করেছিল পুলিশ। ফলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এবং তার মধ্যেই অস্থায়ী উপাচার্য পদ থেকে অভিজিৎকে স্থায়ী উপচার্যের পদ দেয় রাজ্য সরকার। যা নিয়ে বিতর্ক আরো বাড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনের সামনে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হয় রাজ্য সরকারকে। অভিজিৎ চক্রবর্তীকে পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়। কিন্তু তৃণমূল সরকারের শিক্ষায় হস্তক্ষেপের বিতর্কটি ধামাচাপা পড়েনি।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সামনে এসেছে। তৃণমূলের বহিরাগত কর্মীরা প্রেসিডেন্সির ভিতর ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য সুগত মারজিৎ সরাসরি বলেছেন, উপাচার্যকে সরকারের কথা শুনে চলতেই হবে। সব মিলিয়ে ট্র্যাডিশনের কোনো বদল হয়নি। বছরকয়েক আগে সেই রেশ ধরেই আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছিল, অনিলায়নের পর শিক্ষার পার্থায়ন শুরু হয়েছে। বলা বাহুল্য, সে সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

এবং বিজেপি

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই উপাচার্য নিয়োগে সরকারের হস্তক্ষেপ হয়েছে, এমন ভাবলে ভুল হবে। গোটা দেশেই এ ধরনের অভিযোগ বার বার উঠেছে। কংগ্রেসের আমলেও উঠেছে, বিজেপির আমলেও উঠছে। বিজেপি শিক্ষার গেরুয়াকরণের চেষ্টা করছে, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের লোক বসাচ্ছে, এই অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই তুলছেন কেউ না কেউ। পশ্চিমবঙ্গেও তার ছাপ পড়েছে। গত কয়েকমাস ধরে বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত বিশ্বভারতী। সেখানে উপাচার্য নিয়োগ হয় কেন্দ্রের মাধ্যমে। খোদ প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।

কিছুদিন আগে সেখানে উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। উপাচার্য হয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথকেই শান্তিনিকেতনে বহিরাগত বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন ছাত্ররা। অভিযোগ, তিনি বিজেপির লোক। বিজেপি সরকারের কথায় চলেন। বিদ্যুৎ নিজে অবশ্য এ বিষয়ে কখনো কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তার খাতির দৃষ্টির অগোচরে নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের এক শীর্ষস্থানীয় আমলা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এ দেশে শিক্ষার সিস্টেমটাই এমন যে, উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পড়ে। এ জিনিস এড়ানো মুশকিল। পুলিশ কিংবা প্রশাসনে সরকার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ধরনের হস্তক্ষেপ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও সেই একই কাজ হয়। তবে যত দিন যাচ্ছে, বিষয়টি ততই প্রকাশ্যে চলে আসছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য