পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশের আকাল
বর্ষা শুরু হয়ে গেছে অনেকদিন। কিন্তু এখনো বাজারে ভালো মানের ইলিশ ঢোকেনি। যা আছে, তা বিপুল দামে বিক্রি হচ্ছে।
বৃষ্টি কাঁটা
বর্ষার শুরুতে উত্তরবঙ্গে ঢেলে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে কম হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনার জন্য বর্ষার শুরুতে সমুদ্র থেকে ইলিশের যেই ঝাঁক দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলিতে ঢোকে, এবার তা ঢোকেনি।
জেলেদের মুখে জলবায়ু পরিবর্তন
বর্ষার শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের জেলেরা বেরিয়ে পড়েন ইলিশের খোঁজে। গঙ্গা এবং রূপনারায়ণে এ সময় সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু জেলেরা বলছেন, এবছর তারা নামমাত্র ইলিশ পেয়েছেন। গঙ্গা এবং রূপনারায়ণের দিকে ইলিশ ঢোকেইনি। জলবায়ু পরিবর্তনে ইলিশের গতি বদলে গেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন তারা। জেলেদের সঙ্গে সহমত বিশেষজ্ঞেরা।
নামখানার ট্রলার ঘাট
বঙ্গোপসাগরের কাছে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর উপর এই ট্রলারঘাট। ইলিশ ধরতে যাওয়ার আগে ব্যস্ত মৎস্যজীবীরা।
জীবনের ঝুঁকি
মৎসজীবীদের ভাষায় বর্ষার এই সময়টি হলো ইলিশ মরসুম। ইলিশের জোগানের উপর নির্ভর করে তাদের সারা বছরের রোজগার। কারণ, ভালো ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হয়। এবছর ভারতের নদীতে ইলিশের জোগান নেই বলে তারা বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত চলে যাচ্ছেন ইলিশ ধরতে। নিতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি।
আশায় মৎস্যজীবীরা
গত এক সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। মৎস্যজীবীদের আশা, এবার পশ্চিমবঙ্গের জলেও ইলিশের ঝাঁক ঢুকবে।
প্রতি ট্রিপের খরচ
মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, তাদের প্রতিটি ট্রিপে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়। ইলিশ না উঠলে ট্রিপের খরচই উঠবে না। ফলে সমুদ্রের ভিতরেও যেতে হচ্ছে তাদের। অনেক বেশিদিন জলে থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সমস্যা
বছরের এই সময় বাংলাদেশ থেকেও ভারতের বাজারে ইলিশ ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে আন্দোলনের জন্য় এবছর বাংলাদেশ থেকেও আমদানি বন্ধ আছে। বাজারে নেই বাংলাদেশের ইলিশ।
ইলিশের জোয়ারে ভাঁটা
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য়, ইলিশেগুঁড়ি বৃষ্টি আর পুবালি হাওয়ার মেলবন্ধনে এই সময় ইলিশের জোয়ার আসে বঙ্গের নদীতে। কিন্তু এবছর নদীতে বৃষ্টির মিঠে জল মেশেনি। পুবালি হাওয়াও নেই। বরং অনেক বেশি ঝোড়ো হাওয়া বইছে। তা-ই ইলিশ মিলছে না।
8. মনখারাপ পদ্মারও
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য়, বাংলাদেশের সুন্দরবন এবং পদ্মাতেও এবছর ইলিশের জোগান কম।
বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ
একমাত্র ইলিশ আসছে মিয়ানমার থেকে। সামদ্রিক ইলিশে বাজার ভরে গেছে। কিন্তু মিয়ানমারের ইলিশের দাম ওঠে না। স্বাদও নদীর ইলিশের মতো নয়।
ডায়মন্ড হারবারের অবস্থা
নামখানার মতোই মাথায় হাত ডায়মন্ড হারবারের মৎসজীবীদের। গঙ্গা-বঙ্গোপসাগরের মোহনা অঞ্চলে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবার। এখান থেকেও ট্রলার নিয়ে নদী এবং সমুদ্রে যান মৎসজীবীরা। তারাও বলছেন, জলে নেই রুপোলি শস্য।
পাতিপুকুর পাইকারি বাজার
উত্তর কলকাতার মাছের জোগান যায় পাতিপুকুরের এই পাইকারি বাজার থেকে। ব্য়বসায়ীদের বক্তব্য়, এবছর ইলিশ আসছেই না। পুরনো বরফের ইলিশ চড়া দামে বাজারে যাচ্ছে।
গুজরাটের ইলিশ
মিয়ানমারের চেয়েও খারাপ স্বাদের ইলিশ গুজরাটের। মূলত সামদ্রিক এই ইলিশ ট্রাক বোঝাই হয়ে ঢুকছে কলকাতায়। চড়া দামে সেই ইলিশও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মাছে মন ভরানো স্বাদ নেই।
১৬. মানিকতলা বাজার
মানিকতলা বাজার কলকাতার সবচেয়ে বড় মাছের বাজার। সেখানে মিয়ানমার এবং গুজরাটের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। আর পুরনো বরফে রাখা ইলিশ তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।