1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিচালককে না জানিয়ে কলকাতার উৎসবে বাংলাদেশের ছবি

শুভ সিংহ কলকাতা
৭ জুন ২০২৩

বাংলাদেশের পরিচালকের তথ্যচিত্র প্রশংসা পেলো কলকাতায়। কিন্তু তার ছবি যে কলকাতার এক আন্তর্জাতিক উৎসবে দেখানো হচ্ছে সে কথা পরিচালক জানলেন ডয়চে ভেলের কাছ থেকে!

https://p.dw.com/p/4SHph
বাংলাদেশের পরিচালকের তথ্যচিত্র প্রশংসা পেলো কলকাতায়। কিন্তু তার ছবি যে কলকাতার এক আন্তর্জাতিক উৎসবে দেখানো হচ্ছে সে কথা পরিচালক জানলেন ডয়চে ভেলের কাছ থেকে!
বাংলাদেশের পরিচালকের তথ্যচিত্র প্রশংসা পেলো কলকাতায়।ছবি: Subho Singha/DW

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে কলকাতায় হয়ে গেল তিন দিনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ‘আরবান ক্লাইমেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল‘-এ ১২টি দেশের ১৬টি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। ভারত সরকারের নগর বিষয়ক মন্ত্রকের উদ্যোগে আয়োজিত উৎসবে ছিল বাংলাদেশের একটি ছবি। কে এম তাজবি-উল হাসান পরিচালিত, তারই সংস্থা ধ্রুপদ কমিউনিকেশন-এর তথ্যচিত্র ‘এডুকেশন অন দ্য বোট – এ নিউ হোপ ফর টুমোরো‘। গত রবিবার, ৪ জুন দেখানো হয় ছবিটি।

বাংলাদেশের নাটোর জেলা ছুঁয়ে রয়েছে অতিকায় চলনবিল। প্রকৃতিই সেখানকার মানুষকে বাঁচার রসদ জোগায়। আবার প্রকৃতিই রয়েছে প্রতিকূলে। দুর্গম এই এলাকার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। তাদের কাছে আসে নৌকোয় ভাসমান স্কুল। সেখানে ক্লাসরুম আছে, আছে পাঠাগার। ছাত্র-ছাত্রীরা কম্পিউটার ও ইন্টারনেটও ব্যবহার করতে পারে।

‘বিদেশের উৎসবে ছবিটি দেখানো হচ্ছে জানতাম না’

অনুমতি ছাড়াই উৎসবে ‘এডুকেশন অন দ্য বোট – এ নিউ হোপ ফর টুমোরো‘

‘এডুকেশন অন দ্য বোট – এ নিউ হোপ ফর টুমোরো‘  প্রশংসিত হয়েছে কলকাতায়। চিত্রনাট্য, ক্যামেরা শৈলী ও সম্পাদনার মুন্সিয়ানা নজর কেড়েছে দেশ-বিদেশের একঝাঁক ছবির মধ্যে। ডিডাব্লিউ এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চায় পরিচালক তাজবি-উল হাসানের কাছে। তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে জানান, বিদেশের কোনো উৎসবে যে তার ছবিটি দেখানো হচ্ছে সে খবর তার একেবারেই জানা নেই!

পরিচালক বলেন, ‘‘কোনো উৎসবে আমার ছবি দেখানো হচ্ছে, তা আমি জানি না। পরিচালকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ছবি দেখানোর কথা। ভারত সরকারের উদ্যোগ, মানে এটা তো বড় মাপের ইভেন্ট, কোনো পাড়ার তথ্যচিত্র প্রদর্শনী নয়। যদি দুদিন আগেও খবর পেতাম, কলকাতায় চলে যেতাম।‘‘

এই চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য ছবি বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিল ‘সিএমএস বাতাবরণ’ নামে একটি সংস্থা। ২০টি দেশের প্রায় দেড়শ আবেদনের মধ্যে কয়েকটি ছবি বেছে নেয় তিন সদস্যের কমিটি। এর সদস্য, সংস্থার সহকারী অধিকর্তা সব্যসাচী ভারতী অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশের একটি তথ্যচিত্র উৎসবে দেখানোর পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন, ‘‘২০১৯ সালেই হাসানের ছবিটি সিএমএস বাতাবরণ চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়। সেবার পুরস্কৃতও হয় ছবিটি। বাঙালি দর্শকদের কথা ভেবে কলকাতার উৎসবে সেটি শামিল করা হয়। তাই নিশ্চয়ই দেখেছেন, ছবির ভিস্যুয়ালে আমাদের সংস্থার ইউআরএল ছিল। অন্য ছবির ক্ষেত্রে তা ছিল না।’’

তথ্যচিত্রের পরিচালক তার অনুমতি চাওয়া উচিত ছিল মনে করলেও ভারতী ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেন আইনের ফাঁককে। তার বক্তব্য, ‘‘সমঝোতা অনুযায়ী প্রথমবার ছবি নেয়ার পর তিন-চার বছর অ-বাণিজ্যিক ভাবে সেটি দেখানো যেতে পারে। কেউ বাণিজ্যিকভাবে দেখাতে চাইলে আমরা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। হাসানের তথ্যচিত্রটি এই শেষবার আমাদের উৎসবে দেখানো হলো। ভবিষ্যতে দেখানো হলে নতুন করে পরিচালক-প্রযোজকের সম্মতি নেয়া হবে।‘‘

২০১৯ সালে ছবিটি উৎসবে দেয়ার সময় ফর্মে সই করতে হয়েছিল তাজবি-উল হাসানকে। তবে এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করা কলকাতার অন্য উদ্যোক্তারা এ ধরনের নিয়ম সম্পর্কে সন্দিহান। ‘ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস‘ সারা বছর নানা ধরনের কাহিনিচিত্র ও তথ্যচিত্র দেখায়। পরিচালক গৌতম ঘোষ এই সংগঠনের সভাপতি। উৎসবে থাকে বিদেশি ছবিও।

বাংলাদেশের তথ্যচিত্রটির প্রসঙ্গে সব্যসাচী ভারতীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে ‘ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস‘-এর সম্পাদক রবীন চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একবার ছবি নিলে তিন-চার বছর দেখানো যায়, এমন কোনো নিয়মের কথা আমার জানা নেই। প্রতিবারই তো অনুমতি নেয়া উচিত। তা ছাড়া সিনেমাটোগ্রাফি আইন অনুযায়ী সব ছবিতেই সেন্সর বোর্ডের সম্মতি লাগে। তাই বিদেশের ছবি হলে বিশেষ অনুমতি নিতে হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের। বাংলাদেশের তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে তা হয়েছে কি না সন্দেহ আছে।‘‘

পরিচালকের খেদ

‘এডুকেশন অন দ্য বোট – এ নিউ হোপ ফর টুমোরো‘ তথ্যচিত্রের পরিচালক তাজবি-উল হাসান উৎসবে যোগ দিতে না পারার হতাশা আড়াল না করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটা তথ্যচিত্র তৈরির পিছনে আমাদের অর্থ ও পরিশ্রম থাকে। তার বিনিময়ে আমরা চাই দর্শকের মতামত। আইনে যেটাই থাক, আমি কলকাতায় যেতে পারলে দর্শকদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারতাম। সেটা থেকে বঞ্চিত হলাম।’’ 

‘‘ছবির ভিস্যুয়ালে আমাদের সংস্থার ইউআরএল ছিল’’

বিশ্বজুড়ে তথ্যচিত্র নির্মাতাদের কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জের।  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্পোরেট পুঁজি বা তারকার দীপ্তি তাদের সঙ্গে থাকে না। উল্টে কোনো কোনো ক্ষেত্রে থাকে রাষ্ট্রের চোখরাঙানি। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় তথ্যচিত্র নির্মাতা সংগঠনের সাবেক সভাপতি ঊষা দেশপান্ডে একবার বলেছিলেন, ‘‘প্রযোজকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হন না। তাই দর্শকদের কাছে পৌঁছানোই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’

কলকাতার তথ্যচিত্র নির্মাতারা সেই আবেগ থেকে তাজবি-উলের পাশে রয়েছেন। সেই সুর ‘ড্যুয়েলিং ইন ট্র্যাভেলিং‘-এর পরিচালক-প্রযোজক শুভা দাস মল্লিকের গলায়।

পরিচালক তাজবি-উল হাসানের তথ্যচিত্রের প্রসঙ্গে শুভা বলেন, ‘‘বিদেশে কেউ ছবি দেখালে অবশ্যই জানিয়ে থাকেন। আইন যা-ই বলুক, পরিচালককে জানানো উৎসব আয়োজকদের নৈতিক দায়িত্ব। সাম্মানিক খুব কম আয়োজকই দেন। কিন্তু দর্শক কী বলছেন, সেটা জানার কৌতূহল থাকে। তাই এটুকু সৌজন্য পরিচালককে দেখানো উচিত।’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

Bangladesh Zeitungen
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

প্রথম পাতায় যান