1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নুহাশের কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়ানো বেআইনি’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ জানুয়ারি ২০২৩

এই ঘটনার আইনি বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার মিতি সানজানা৷

https://p.dw.com/p/4LpP9
মিতি সানজানা, ব্যারিস্টার
মিতি সানজানা, ব্যারিস্টারছবি: Miti Sanjana

সম্প্রতি হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূনের একটি কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ নুহাশ একজন নারীকে কফি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ এই প্রস্তাবের মাধ্যমে তিনি কী কোন অপরাধ করেছেন? নাকি যিনি এটা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছেন তিনি অপরাধ করেছেন?

ডয়চে ভেলে : নুহাশ হুমায়ূনের যে কথোপকথন ফাঁস হয়েছে, এক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ কী?

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা: এক্ষেত্রে যে ধরনের অভিযোগটা এসেছে, সেই স্ক্রিনশটটি আমি দেখেছি৷ যতটুকু আমরা দেখেছি, তাতে এই ধরনের কিছু মনে হয়নি৷ মনে হয়, স্বাভাবিকভাবেই কাউকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ এখানে আসলে আইনগত কোন দিক আমি দেখতে পাচ্ছি না৷ আমার মনে হচ্ছে না, এখানে বেআইনি কোনো কিছু হয়েছে৷

তাহলে কি অভিযোগ করা যাবে? অভিযোগ মিথ্যা হলে মানহানির মামলা করতে পারবে?

অভিযোগ সত্যি, মিথ্যা পরে আসছে৷ প্রথমত আমাদের যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে সেখানে কিন্তু খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তিকে কোনভাবেই হেয় প্রতিপন্ন করা বা অপমান অপদস্ত করবার জন্য যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন ধরনের ব্যক্তিগত কথোপকথন বা কোন কিছু ছড়ানো হয় সেখানে তিন বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে৷ এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য স্ক্রিনশটটি ছড়ানো হয়েছে৷ এটা আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে৷ যে ব্যক্তি অপপ্রচারের জন্য বা ব্যক্তিগতভাবে খ্যাতি পাওয়ার জন্য এই ধরনের স্ক্রিনশট ছড়িয়েছেন সেখানে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷

অনেকে এটাকে স্বাভাবিক আলোচনা বলছেন, আপনি এই ধরনের প্রস্তাবকে কীভাবে দেখেন?

এখানে আলোচনা হচ্ছে, দুই পক্ষই সেখানে অংশ নিচ্ছে৷ পরে সেটিকে একপক্ষ আরেক পক্ষকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য অপপ্রচার বা মানহানি করার জন্য বা খ্যাতি পাওয়ার জন্য এই বক্তব্যকে আংশিক বা পরিপূর্ণভাবে বিকৃত করে চারদিকে ছড়াচ্ছে৷ ফলে আমি মনে করি, বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও এটিকে অস্বাভাবিক প্রচার করার চেষ্টা এবং অসৎ উদ্দেশ্যে এটি প্রচার করা হচ্ছে৷ আমি মনে করি, যিনি এটা প্রচার করছেন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ৷ কারণ এই ধরনের ব্যবস্থা না নিলে যেটি হয়, যে ধরনের আন্দোলন আমরা করি বা সত্যিকারের কেউ এই ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য হালকা হয়ে যায়৷ সেই বিষয়গুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়৷

ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের শিষ্টাচার শেখা হচ্ছে না: ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট বাজারে এসেছে সেটা একটা ডেটিং অ্যাপ৷ সেখানে এই ধরনের কথোপকথন কী অনৈতিক?

এটা যেহেতু একটা ডেটিং অ্যাপ, সেখানে কিছু নীতিমালা তো অবশ্যই আছে৷ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড তো থাকে, এখানেও হয়ত আছে৷ এখানে নৈতিক প্রশ্নের চেয়েও একজন আইনজীবী হিসেবে আমি আইনগত বিষয়টি দেখতে চাই৷ এখানে আইনগতভাবে যেটি হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমের কোন কথোপকথন উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করা পুরোপুরি বেআইনি৷ নৈতিকতার মানদণ্ডে অবশ্যই সেটিকে আমরা নিন্দা জানাতে পারি৷ আইনগতভাবে দেখলে, এটা বেআইনি ও আইনের চোখে অপরাধ৷ বাংলাদেশের আইনে এর শাস্তির বিধানও আছে৷

হুমায়ূন আহমেদের ছেলে হওয়ার কারণেই কী নুহাশকে নিয়ে এত আলোচনা?

অবশ্যই৷ এর আগেও আমরা দেখেছি, একেবারেই অচেনা কেউ ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে এমনটা করেছেন৷ সমাজে যারা মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন তাদের মানহানি করবার জন্য বা ব্যবহার করে নিজে খ্যাতি পাবার জন্য অনেকেই এটা করে থাকেন৷ তিনি হুমায়ূন আহমেদের ছেলে ছাড়াও নিজেও একজন স্বনামধন্য পরিচালক৷ তার অনেক কাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে৷ কাজেই এটি একটি কারণ আছেই৷

সোশ্যাল স্টিগমার কি ক্ষতিপূরণ হয়?

মানহানির বিষয়টি তো আমাদের পেনালকোডের মধ্যেই আছে৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মানহানি সম্পর্কে বলা আছে৷ আমাদের পেনাল কোডে শুধু ভুক্তভোগী মানহানির মামলা করতে পারে৷ কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে কোন ব্যক্তি এই ধরনের মামলা করতে পারেন ভিকটিমের পক্ষে৷ কাজেই নুহাশ হুমায়ূন যদি মনে করেন, তাহলে যে কোন ব্যক্তি তার পক্ষে মামলাটি করতে পারেন৷ এখানে ক্ষতিপূরণের বিষয় রয়েছে৷ এখানে ক্রিমিনাল ও সিভিল দুই ধরনের মামলা করা যেতে পারে৷ এখানে যেমন ক্ষতিপূরণের সুযোগ রয়েছে পাশাপাশি জেল জরিমানার বিষয়টি আইনের মধ্যে রয়ে গেছে৷

আমাদের বর্তমান আইনে এর সুরক্ষা আছে কী?

বর্তমান আইনে সুস্পষ্টভাবে সুরক্ষা আছে৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে৷ ২৫ ধারায় যেটা বলা হয়েছে, কাউকে মানহানি করার উদ্দেশ্যে যদি মিথ্যা কোন অপপ্রচার চালানো হয় তাহলে তিনি এই আইনে প্রতিকার চাইতে পারেন৷ যিনি এটা ছড়িয়েছেন তার যদি মনে হয়, এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে তাহলে তিনি আইনি সুরক্ষা চাইতে পারতেন৷ সেটা না করে তিনি যখন এটা আরও ১০ জনের ছড়িয়ে দিচ্ছে তখন বোঝা যাচ্ছে তার অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে৷ স্পষ্টভাবে তার সেই উদ্দেশ্য প্রকাশ পাচ্ছে৷ এটা তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় হিট করছে৷ পাশাপাশি ২৯ ধারায় বলা হয়েছে মানহানির বিষয়টি৷ সেখানেও শাস্তির বিধান রয়েছে৷ প্রত্যেকটা অপরাধ কিন্তু জামিন অযোগ্য৷

এক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী ভূমিকা রাখতে পারে?

আমরা তো ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের শিষ্টাচার শেখা হচ্ছে না৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে আমার কাছে মনে হয়, কী করলে আইনের ব্যত্যয় হয় সেটা জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা খুবই জরুরি৷