নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও ভুল নিয়ে তদন্তের নির্দেশ
২৪ এপ্রিল ২০২৪বিচারপতি রাজকুমার মান্থা জানিয়েছেন, প্রাথমিকে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখবে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করবেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এক মাসের মধ্যে তারা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেবে।
দ্বিতীয় নির্দেশও বিচারপতি মান্থাই দিয়েছেন। খাদ্য দপ্তরের সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে সিআইডি। আপাতত এই পরীক্ষা ও নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন তিনি।
টেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে কী অভিযোগ?
হাইকোর্টে আবেদনকারীরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে২১টি প্রশ্নে ভুল ছিল। তাদের দাবি, ওই ২১টি প্রশ্নে ভুলের দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে এবং সবাইকে ২১টি প্রশ্নের ক্ষেত্রে পুরো নম্বর দিতে হবে।
বিচারপতি মান্থা এই আবেদনের জবাবে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই কমিটির সদস্য কে হবেন তা ঠিক করার দায়িত্ব দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর উপাচার্যের উপর। একমাসের মধ্যে কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর বিচারপতি এই বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
এসআই পরীক্ষা নিয়ে
রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন এই পরীক্ষা নেয়। সেখানেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি মান্থার নির্দেশ, এই বিষয়ে যতগুলি অভিযোগ এসেছে, সবগুলি নিয়ে সিআইডি-র এডিজি তদন্ত করবেন। এখন এই পরীক্ষার ফলপ্রকাশ, নিয়োগ কিছুই করা যাবে না।
খাদ্য দপ্তরের ৪৮০ জন সাব ইন্সপেক্টর নেয়ার জন্য ২০২৩ সালে বিজ্ঞপ্তি বের হয়। গতবছর অগাস্টে আবেদনপত্র নেয়া শুরু হয়। এই বছর ১৬ ও ১৭ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা হয়। অভিযোগ, পরীক্ষা শুরুর আগে টেলিগ্রাম, হোয়াটস অ্যাপ-সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। প্রায় ১২ লাখ মানুষ সাব ইন্সপেক্টরের চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
এই প্রশ্নফাঁস নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল। চাকরিপ্রার্থীরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন অফিসের সামনেও বিক্ষোভ দেখান।
পুলিশ পরে শিলিগুড়ি থেকে পাঁচজনকে ধরে। অভিযোগ, তারা পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা ফাঁস করেছিল।
এরপর হাইকোর্টে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনের জবাবেই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা। তিনি জানিয়েছেন, ২২ মে-র মধ্যে সিআইডিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
আইনজীবীর বক্তব্য
আবেদনকারীর আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেছেন, ''এক হাতে টাকা দিন, অন্য হাতে চাকরি নিন নামে একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। সেই অভিয়োগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টে মামলা করা হয়। আমাদের দাবি হলো, ওই পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে।''
শামিম টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ১৮ বাংলাকে বলেছেন, ''পিএসসি-তে এই অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও আমরা দেখেছি, খালি খাতা জমা দিয়ে মানুষ চাকরি পেয়েছে। হাইকোর্ট সিআইডি-র এডিজিকে তদন্ত করতে বলেছে।''
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ''ভারতের নানা রাজ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে হয়েছে। রাহুল গান্ধী প্রতিবাদ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে। অবশ্যই সিআইডি, সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''খাদ্য দপ্তরের সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগের পরীক্ষাতেও প্রশ্ন ফাঁস এবং সেখানেও দুর্নীতি। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। যুবকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেছে। তারা এই দুর্নীতি মানবে না।''
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ''এটা'আইনি বিষয়। আদালতের বিচারাধীন বিষয়। যে দপ্তরের বিষয়, তাদের আইনজীবীরা বিষয়টি দিখছেন। এই মুহূর্তে দলের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য করব না।''
নিয়োগে এত দুর্নীতির অভিযোগ কেন?
নিয়োগ-দুর্নীতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে পরপর তিনটি নির্দেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হEজার জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপর টেটের প্রশ্নপত্রে ভুল ও সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও দুর্নীতি নিয়ে দুইটি নির্দেশ দিয়েছে তারা।
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি একটা মাত্রাছাড়া জায়গায় চলে যাচ্ছে। একে রাজ্যে শিল্প নেই। তার উপর শিক্ষক ও অন্য সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি সমানে এরকম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তাহলে বুঝতে হবে, পরিস্থিতি মারাত্মক।''
জিএইচ/এসিবি (পিটিআই, আনন্দবাজার)