dw.com এর বেটা সংস্করণ ভিজিট করুন৷ আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি! আপনার মতামত সাইটটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে৷
ঢাকায় ময়লার গাড়িও এখন আতঙ্কের অপর নাম৷ এ সপ্তাহে দুই দিনে দুজন প্রাণ হারালেন এই ট্রাকের ধাক্কায় ৷ এসব গাড়ি কারা চালায়? মনিটরিং করা হয়? দিনের বেলা কেন ব্যস্ত নগরে এসব গাড়ি চলে?
বুধবার সকাল ১১টার দিকে নাঈম হসনাত গুলিস্তান থেকে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ি তাকে চাপা দেয়৷ ওই গাড়িটি চালচ্ছিলেন একজন পরিচ্ছনতাকর্মী৷ প্রকৃত চালক গাড়িতে ছিলেন না৷
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পান্থপথ এলাকায় আহসান কবীর খানের মৃত্যু হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায়৷ তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান৷ ডিএনসিসি দাবি করেছে, ওই গাড়িতে প্রকৃত চালকই ছিল৷
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সময়ের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা শহরে গত পাঁচ বছরে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ট্রাকে চাপা পড়ে ১২ জন নিহত হয়েছেন৷ চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি দয়াগঞ্জে ডিএনসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার টেলিফোন অপারেটর খালিদ হোসেন৷ ১৬ এপ্রিল মোস্তফা নামে একজন রিকশা চালক নিহত হন ময়লার গাড়ির ধাক্কায়৷ ওই সময় উত্তেজিত লোকজন ওই ট্রাকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ গত ২ মে শাহজাহানপুরে ময়লার ট্রাকের চাপায় নিহত হন স্বপন আহমেদ নামে একজন ব্যাংক কর্মচারী৷ এইসব ঘটনায় মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বেশি দূর এগোয় না৷ ভুক্তভোগীরা বিচার পান না৷
জানা গেছে, ডিএসসিসির মোট গাড়ি আছে ৬০৯টি, চালক আছেন মাত্র ১৩৭ জন৷ তবে ময়লা পরিবহণের গাড়ি কয়টি তা জানা যায়নি৷ পরিবহণ বিভাগের মহাব্যবস্থপাকও বলতে পারেননি৷ আর ডিএনসিসির মোট গাড়ি ৩৩০টি৷ ময়লা বহনের জন্য গাড়ি আছে ১৩৭টি৷ ময়লার গাড়ির চালক আছে মাত্র ২৫জন৷ পর্যাপ্ত চালক না থাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশক কর্মী এমনকি ঠিকা চুক্তির লোকজনও গাড়ি চালায়৷ জানা গেছে, যে চালকরা আছেন তাদের আবার ময়লার গাড়ি চালাতে ব্যাপক অনীহা৷ তারা চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ করে গাড়ি চালানোর জন্য৷ ড্রাইভারের সঙ্গে চুক্তি করা ওই ব্যাক্তিরাই ময়লার গাড়ি চালায়৷
ডিএসসিসির পরিবহণ বিভাগের মহা ব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘তাদের গাড়ির পর্যাপ্ত ড্রাইভার আছে৷ গাড়িগুলোর ফিটনেসও আছে৷’’ তবে গাড়ি ও চালকের সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি৷
পর্যাপ্ত চালক থাকলেও পরিচ্ছনতাকর্মী কেন গাড়িটি চালাচ্ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই গাড়ির ড্রাইভার দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন৷ সে কারণেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে গাড়িটি চালানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল৷ তবে কে দিয়েছে, কীভাবে দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ আমি তদন্ত কমিটির প্রধান৷”
ময়লার গাড়ির দিনের বেলা সড়কে চলার কথা নয়৷ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দিনের বেলা কেন ময়লার গাড়ি বের হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ওটা সাধারণ নিয়ম৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে একটি গাড়ির একটি শিডিউল দেয়া হয়৷ তাতে দিনে ১০টি গাড়ি আছে৷ এই ১০টি ময়লার গাড়ির দিনের বেলা কাজ করার আলাদা অনুমতি আছে৷’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘নিবিড় মনিটরিং ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ সবকিছুই আছে৷ তবে অ্যাক্সিডেন্ট তো অ্যাক্সিডেন্ট৷ এটা তো আর বলে কয়ে আসে না৷ এর ওপর কারুর নিয়ন্ত্রণ নেই৷”
অন্যদিকে ডিএনসিসির পরিবহণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানেনই না যে, দিনের বেলায় ঢাকা শহরে ময়লার গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে কী নিয়ম ছিল আমি জানি না৷ তবে দুর্ঘটনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে ময়লা অপসারণের কাজ সকাল ৭ টার মধ্যে শেষ করতে হবে, দিনে করা যাবে না৷”
তিনি জানান, তাদের মোট ৩৩০টি গাড়ির জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ৭৩ জন চালক আছেন৷ তাদের মধ্যে ময়লার গাড়ি কয়টি এবং তার জন্য চালক কতজন তা তার জানা নেই৷ তিনি দাবি করেন, তাদের মনিটরিং ব্যবস্থা অনেক বেশি শক্ত৷ কিন্তু কতটি গাড়ির ফিটনেস আছে এবং চালকদের সবার বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা জানতে কিছু জানাতে পারেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘থাকার কথা৷ কিন্তু সব গাড়ির ফিটনেস, চালকদের লাইসেন্স আছে কীনা বলতে পারবো না৷ মনে হয় অধিকাংশের আছে৷ আমি এক বছর হয় এখানে যোগ দিয়েছি৷ তাই সব আপডেট তথ্য আমার কাছে নাই৷’’ সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কারণ এবং দোষী ব্যক্তি চিহ্নিত করতে ডিএনসিসিও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানান তিনি৷
এদিকে ঢাকার সড়কে এবং মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা বেধে দেয়া হলেও সুযোগ পেলেই তা লঙ্ঘন করেন চালকরা৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে জেব্রা ক্রসিং থাকলেও তা মানা হয় না৷ জেব্রা ক্রসিংয়ে যে পথচারীর অগ্রাধিকারের নিয়ম চালকরা জানেন না৷ কেউ কেউ জানলেও মানেন না৷
২০১৬ সালে মহাসড়কে গাড়ির সর্বোচচ গতিসীমা ৮০ কি.মি এবং ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ ৪০ কি.মি বেধে দেয়া হয়৷ তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা বিশেষ স্থাপনার সামনের সড়কে গাড়ির আলাদা কোনো গতি বেধে দেয়া হয়নি৷ তবে স্পিড ব্রেকারের ব্যবস্থা আছে৷ আর এইসব প্রতিষ্ঠানের সামনে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, রাস্তা ও সেতুর আগে গাড়ির গতিসীমা কত হবে তা লিখে দেয়া থাকে৷ সেটা নির্ধারণ করা হয় পরিস্থিতির ওপরে ভিত্তি করে৷ আর মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইওয়ে পুলিশ স্পিড গান ব্যবহার করে৷