নভেম্বরেই নির্বাচন হয়েছে নিকারাগুয়ায়। অভিযোগ, চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার জন্য ব্যাপক কারচুপি করেছেন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা এবং তার দল। বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরই ভিত্তিতে নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট এবং অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিল অ্যামেরিকা।
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
ডানিয়েল ওরটেগা: স্নায়ুযুদ্ধের প্রতীক
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ডানিয়েল ওরটেগা দেশটির রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক আনাসটাসিও সমোজার পতনের পর ওরটেগা প্রথম ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট হন৷ বামপন্থি সানডিনিস্টা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ছিল তার দলের নাম৷ ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব থাকায় অ্যামেরিকার সাথে ছিল শত্রুতা৷ ফলে অ্যামেরিকার রিগান সরকার ওরটেগাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে ডানপন্থি গেরিলা দলকে সহায়তা করেছিল৷
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
ক্ষমতা হারানো এবং ফের ফিরে আসা
১৯৯০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানোর পর ওরটেগা বিরোধীদলের নেতায় পরিণত হন৷ আবার ২০০৬ সালে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলোতে বামপন্থি নেতৃত্ব ও দলগুলোর উত্থানের সময় তিনি ক্ষমতায় আসেন৷ এবার জোট বাঁধেন অ্যামেরিকার আরেক চোখের বিষ উগো চাবেসের সাথে৷ কিন্তু এরপর ওরটেগা নীতি পরিবর্তন করে রাতারাতি পুঁজিবাদী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন৷
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
ক্ষমতায় থাকতে কৌশল
নির্বাচনি আইন পরিবর্তন করে ওরটেগা কৌশলে তার ক্ষমতার সময় দীর্ঘায়িত করেন৷ ২০১৬ সালের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পযর্বেক্ষকদের দেশে ঢোকার অনুমোদন দেননি তিনি৷ সেবার ফার্স্ট লেডি রোজারিও মুরিল্লোকে নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট বানান৷ যা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার মুখোমুখি হয়৷
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
অবসরভাতায় পরিবর্তন পরিকল্পনা
এ বছরের এপ্রিলে অবসরভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতায় ৫ শতাংশ করারোপ করার ঘোষণা দেন ওরটেগা৷ যদিও পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর সাড়ে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ান তিনি৷ এ ঘটনায় নিকারাগুয়াজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়৷
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
রাষ্ট্রের নিপীড়ণ এবং পাদ্রীদের মধ্যস্ততা
অবসর ভাতার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হলেও ওরটেগার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলতে থাকে৷ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহত বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি পৌঁছে যায় দুই মাসেই৷ এ অবস্থায় ক্যাথলিক যাজকরা ওরটেগার কাছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিকারাগুয়ায় অনুপ্রবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারে চাপ দেন৷বিরোধীপক্ষের সাথে ওরটেগার আপসমূলক বৈঠকে বসার চেষ্টা করতে থাকেন যাজকরা৷
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
সরকার ও বিরোধীদল
শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের বিশাল অংশ ওরটেগার সাথে চলতি মে মাসের ১৬ তারিখে বৈঠকে বসে৷ বৈঠকের আয়োজক যাজকরা বলেছিলেন, ‘আলোচনা ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিকতা ও শান্তি’ বিষয়ে হবে৷ বৈঠকে বিরোধীপক্ষ ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেওয়ার দাবি করে৷ ওরটেগা তা প্রত্যাখ্যান করায় আলোচনা ভেস্তে যায়৷
-
নিকারাগুয়ায় সংঘাত
অচলাবস্থা
সরকার ও বিরোধীদলের দু’দফা বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে৷ অবরোধ চলছে৷ সরকারি বাহিনী ও বিরোধীদের সহিংসতায় মৃ্ত্যুর ঘটনা বাড়ছে৷ বিরোধীপক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অনড়৷ পাশাপাশি জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঢোকানোর দাবি জানিয়েছে দেশটিতে৷ ওরটেগা এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেননি৷
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি ডিক্রিতে সই করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী, দেশের সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বিচারপতি, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কেউ অ্যামেরিকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। কারণ, নিকারাগুয়ায় যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, অ্যামেরিকা তা সমর্থন করে না। সেখানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
অভিযোগ, নির্বাচনের আগে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। যারাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহু রাজনৈতিক কর্মীকে কোনো কারণ না দেখিয়ে জেলে ঢোকানো হয়েছে। জেলে তাদের সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। জেলগুলির অবস্থা বেশ খারাপ বলেও জানিয়েছেন বিরোধী রাজনীতিকরা।
ওর্তেগা অবশ্য কোনো অভিযোগই মানছেন না। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও তিনি স্বীকার করেননি। কিন্তু অ্যামেরিকা আরো কড়া নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। নিকারাগুয়ার সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখা হবে না বলে জানিয়েছে তারা।
অ্যামেরিকার সঙ্গে নিকারাগুয়ার সম্পর্ক আগেও ভালো ছিল না। ১৯৭০ সালে বামপন্থি ওর্তেগা নিকারাগুয়ার মার্কিনপন্থি একনায়ককে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরপর মাঝে বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় ছিলেন না তিনি। ২০০৭ থেকে টানা ক্ষমতায় তিনি। নিকারাগুয়াকে সমর্থন করে তিনটি দেশ। রাশিয়া, কিউবা এবং ভেনেজুয়েলা।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)