আফগানিস্তান দখল করার পর কাবুলে বসে তালেবান মুখপাত্র বলেছিলেন, মানবাধিকারের বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে। শরিয়ত আইন মেনে নারীদের অধিকার রক্ষা করা হবে। সহিংস শাস্তি দেওয়া হবে না। এতদিন যারা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তেমন নয় বলে জরুরি রিপোর্ট পেশ করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট। মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে ভয়াবহ তথ্য এসে পৌঁছেছে তার হাতে।
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
কে এই শিল্পী?
২০১৪ সালে ফরেন পলিসি পত্রিকার বিশ্বের ১০০ শীর্ষ চিন্তাবিদদের তালিকায় উঠে আসে আফগান এই খ্যাতনামা শিল্পীর নাম৷ শামসিয়া হাসানি উত্তর অ্যামেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসাবে প্রশংসা কুড়োন তার আগেই৷ ১৯৮৮ সালে ইরানে আফগান শরণার্থীদের পরিবারে জন্মানো হাসানি ২০০৫ সালে দেশে ফিরে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
নতুন করে আলোচনায় হাসানি
আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা তালেবান গোষ্ঠীর হাতে উঠে আসার পর নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হন শামসিয়া হাসানি৷ অল্প সময়েই ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে শামসিয়ার দুটি দেওয়াল চিত্রের ছবি৷ সাথে, কাবুলের বাসিন্দা হাসানির নিরাপত্তার প্রার্থনা উঠে আসে ফেসবুক, টুইটারের মন্তব্যে৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
‘দুঃস্বপ্ন’
ছবিতে দেখা যাচ্ছে হাসানির ’নাইটমেয়ার’ বা দুঃস্বপ্ন শীর্ষক চিত্রটি৷ ৯ আগস্ট যখন আফগানিস্তান আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে তালেবানের হাতে, হাসানি সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন এক নারীর ছবি৷ ছবির নারীকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে কয়েকজন পুরুষ৷ তার হাতে ধরা বাদ্যযন্ত্র, গায়ে বোরকা৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
আফগান নারীদের অবস্থা
তালেবান সমর্থকদের বিধিনিষেধ বা আক্রমণের শঙ্কায় রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে না নারীদের৷ বহু শিল্পীও একই ভয়ে মুছে ফেলছেন তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপস্থিতি৷ হাসানি কিছু দিন নীরব থাকায় তার ভক্তদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে তার নিরাপত্তা নিয়ে৷ তবে ডয়চে ভেলেকে তার ম্যানেজার জানিয়েছেন যে তিনি নিরাপদে আছেন৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
দ্বিগুণ ঝুঁকিতে নারী শিল্পীরা
নব্বইয়ের দশকের মতো আবার বাড়তি ঝুঁকিতে থাকবেন আফগান নারী শিল্পীরা, এমনই মত বহু বিশেষজ্ঞের৷ শরিয়া আইনের সাথে সাংঘর্ষিক শিল্পচর্চায় রত নারীদের জন্য রয়েছে ঝুঁকি৷ হাসানির শিল্পে বারবার উঠে এসেছে আফগান নারীদের সমাজের সাথে লড়াইয়ের আখ্যান৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
কেন গ্রাফিতি
২০১০ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই গ্রাফিতিকে নিজের পছন্দের মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন হাসানি৷ গণপরিসরে নারীদের লড়াই ও তাদের হার না মানা স্বভাবের কথা তুলে ধরতে চান তিনি৷ ফলে, তার পছন্দের ক্যানভাস রাস্তার বা যে কোনো গণপরিসরের দেওয়াল৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
তালেবানের বিরুদ্ধে
২০২০ সালের নভেম্বেরের একটি চিত্রে হাসানি বলেন বিধ্বংসী হামলার পরের দৃশ্যের গল্প৷ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবান হামলার ফলে যে হাহাকার সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে, তা ফুটে উঠেছে হাসানির সাম্প্রতিক কাজে৷ ধারাবাহিক সিরিজের ছবিতে ছিল হামলায় মৃত এক সন্তানসম্ভবা মায়ের মৃত্যুর ছবি৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
হাসানির নারীরা যেমন
শিল্পী জানান যে, তার ছবিতে নারী চরিত্রের মুখে সব সময় ফুটে ওঠে আশা, স্বাধীনতা, ভয়, প্রতিবাদ ও বিরহ৷ সব ছবিতেই মুখহীন থাকে এই নারী চরিত্ররা, যা আফগান সমাজে নারীদের মত প্রকাশের অভাব বা সিদ্ধান্তহীনতার প্রতীক৷ ‘‘আমার নারীদের চোখ বন্ধ থাকে, কারণ, সে ভবিষ্যৎ দেখতে অপারগ, কিন্তু সে অন্তর থেকে অন্ধ নয়’’, বলেন হাসানি৷
-
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
হাসানির ভবিষ্যৎ
২০১৮ সালে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামসিয়া বলেন, ‘‘আমি গণপরিসরকে ভয় পাই, কারণ, যে কোনো সময় হামলা হতে পারে৷ আমি সব সময় সতর্ক থাকি৷ আমার কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে ভাবনা পৌঁছাতে পারবো, তাদের চিন্তাধারা বদলাতে পারবো হয়তো৷’’ সোশাল মিডিয়ায় এখনো সোচ্চার হাসানি, সরে আসেননি ভার্চুয়াল দেয়াল থেকে৷
কী আছে রিপোর্টে
মিশেল জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তার কাছে খবর আসছে। নারীদের বাড়ি থেকে বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। ছোট ছোট মেয়েদের স্কুলে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদেশি সংস্থায় কাজ করা আফগানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মারধর করা হচ্ছে। আফগান সেনায় কাজ করা ব্যক্তিদের রাস্তায় সর্বসমক্ষে হত্যা করা হচ্ছে। নাবালকদের তালেবান বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
মিশেল জানিয়েছেন, বিশেষ করে নারী অধিকারের বিষয়টি তারা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তালেবান জানিয়েছিল, নারী অধিকার প্রসঙ্গে গতবারের মতো অবস্থান তারা নেবে না। কিন্তু বাস্তব রিপোর্ট তার সঙ্গে মিলছে না বলেই তিনি খবর পাচ্ছেন।
আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গেও সহিংস আচরণ করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের কাছে রিপোর্ট এসেছে। এই প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত চিন্তার কারণ বলে জানিয়েছেন মিশেল। মানবাধিকার নিয়ে মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশেষ বৈঠক তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তান এবং অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কর্পোরেশনের যৌথ আবেদনে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন আফগানিস্তানে কাজ করছে। এই রিপোর্ট পাওয়ার পরে তাদের আরো সতর্ক হতে বলা হয়েছে। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)