1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী নগর পরিকল্পনা

৮ জুন ২০২০

যুগে যুগে স্থাপত্যরীতি বদলাচ্ছে৷ ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে সব স্তরের মানুষের প্রয়োজনের ভিত্তিতে নগর পরিকল্পনা করা হয়৷ ভবিষ্যতের চাহিদাও উপেক্ষিত হয় না সেখানে৷

https://p.dw.com/p/3dPql
ছবি: DW/M. Frantzen

শহর হিসেবে হেলসিংকি দিনে দিনে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ ইউরোপের অন্য কোনো বড় শহরে সম্ভবত এত নির্মাণকাজ চলছে না৷ বড় চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে এই প্রবণতাকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ স্থপতি হিসেবে মিনা ইয়ুটিলা বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হেলসিংকি আরো খোলামেলা ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে৷ সংস্কৃতিসহ নানা অভিজ্ঞতার স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে৷ তাছাড়া মিউজিয়াম ও লাইব্রেরির আকর্ষণও বাড়ছে৷ মানুষ এমন জায়গায় যেতে পছন্দ করেন৷’’

মিনা ইয়ুটিলা নিজে একজন স্থপতি৷ তাই তিনি নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ আরো জোরালো করতে ‘পাবলিক বিল্ডিং’ তৈরি করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন৷ শহরের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ কাঠ, ইস্পাত ও কাচ দিয়ে তৈরি এমন ভবিষ্যতধর্মী নির্মাণের দৃষ্টান্ত সত্যি নজর কাড়ার মতো৷ ভেতরে গেলে বোঝা যাবে যে এটি বিশ্বের আধুনিকতম পাবলিক লাইব্রেরিগুলির অন্যতম৷ মিনা বলেন, ‘‘হেলসিংকির নাগরিকরাও ডিজাইন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন৷ তাঁরা জানিয়েছেন, কেমন জায়গা তাঁদের প্রয়োজন৷ এমনকি এক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে গ্রন্থাগারের নামও স্থির করা হয়েছে৷ বিজয়ী ব্যক্তি জানালেন যে, ‘অডি' শব্দটির অর্থ সভ্যতা ও শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ৷’’

Finnland Central Library Oodi in Helsinki
হেলসিংকির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ‘অডি’ছবি: Tuomas Uusheimo

‘অডি' আসলে শহরের বাসিন্দাদের একত্রে বসার ও কাজের ঘর৷ প্রায় ১৭,০০০ বর্গ মিটার এলাকায় একইসঙ্গে শান্ত পরিবেশ এবং নানা রকম কার্যকলাপের ব্যবস্থা রয়েছে৷ মিউজিক স্টুডিও, সিনেমা হল, থ্রিডি প্রিন্টার এবং সৃজনশীল কাজের জন্য সেখানে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে৷ হেলসিংকি শহরের সব বাসিন্দা বিনামূল্যে এই সব পরিষেবার সুযোগ নিতে পারেন৷ এমনকি প্রবেশমূল্যও দিতে হয় না৷

‘আমস রেক্স' নামের শিল্প মিউজিয়ামও জনপ্রিয় মিলনক্ষেত্র৷ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এলাকার মাঝেই মাটির নীচে সেটি গড়ে তোলা হয়েছে৷ মিউজিয়ামের উপরে গোল টালি দিয়ে তৈরি ‘স্কাইলাইট’ গম্বুজ বেয়ে উপরে উঠে খেলাও যায়৷ মিনা ইয়ুটিলা মনে করেন, ‘‘কোনো স্থপতির পক্ষে সরল রেখার সাদা ও কেজো স্থাপত্যশৈলির সঙ্গে অরগ্যানিক আকার-আকৃতি ও আধুনিক স্থাপত্যের মেলবন্ধন ঘটানো সত্যি কঠিন কাজ৷ অথচ এখানে সেটা সহজেই সম্ভব হয়েছে৷’’

পুরানো ও নতুনের মধ্যে আসলে এক সেতুবন্ধ গড়ে তোলা হয়েছে৷ ‘আমস রেক্স’ গড়ে তুলতে প্রায় ১৩,০০০ বর্গমিটার এলাকার টিলা ভাঙা হয়েছে৷ প্রদর্শনীর ঘরগুলি নানাভাবে ব্যবহার করা যায়৷ এমনকি সেখানে কোনো থামও ব্যবহার করা হয় নি৷ সিলিং ধাতুর পাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে৷ দর্শকদের কাছে জায়গাটি মাটির নীচে স্বর্গরাজ্যের মতো মনে হয়৷

প্রয়োজন বুঝে যেখানে নগর পরিকল্পনা করা হয়

যাবতীয় পূর্বাভাষ অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের রাজধানী আগামী ২০ বছরে আরও সম্প্রসারিত হবে এবং আরও এক লাখ সত্তর হাজার মানুষ সেখানে থাকতে আসবেন৷ হানা হ্যারিস পৌর কর্তৃপক্ষের প্রধান ডিজাইনার৷ তিনি ভবিষ্যতের পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরলেন৷ হানা বলেন, ‘‘অবশ্যই জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়গুলি ভবিষ্যতের জন্য চ্যালেঞ্জ৷ কারণ আমরা বড় আকারে সেগুলির নিষ্পত্তি করে শহরটিকে কার্বন নিউট্রাল করতে অঙ্গীকারবদ্ধ৷ শহর বেড়ে চলেছে৷ তাই সাম্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে সবার বসবাসের যোগ্য করে তুলতে চাই৷

এদিকে শহরের ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকার মাঝে শান্তি ও উপলব্ধির এক নীড় গড়ে তোলার কাজ চলছে৷ যাজক নানা হেলাকক্সি বলেন, ‘‘এখানে সব ধর্মকেই স্বাগত জানানো হয়৷ আপনি এখানে এসে প্রার্থনা করতে পারেন, মোমবাতি জ্বালাতে পারেন অথবা নীরব মুহূর্তে নিজেকে ছেড়ে দিতে পারেন৷ মুসলিমরা এখানে প্রার্থনা করতে চাইলে আমরা জায়নামাজও সরবরাহ করি৷’’

স্থাপত্য ফিনল্যান্ডের সমাজের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ৷ কারণ মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে নগর পরিকল্পনা করা হয়৷

কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি

২০১৮ সালের মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...