সেই ২০০৯ সাল থেকে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বোর্নো রাজ্যে উগ্রপন্থি ইসলামিস্ট গোষ্ঠী বোকো হারাম সক্রিয় রয়েছে৷ ফলে সেখান থেকে লাখ লাখ মানুষ পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে এবং সাড়ে তিন লাখের মতো মানুষ বিভিন্ন হামলা ও মানবিক সংকটে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷
এরই মধ্যে অবশ্য বোকো হারাম বিভক্ত হয়ে গেছে এবং গোষ্ঠীটির ‘‘ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা'' প্রশাখা পশ্চিম আফ্রিকায় বিভিন্ন হামলার দায় স্বীকার করেছে৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
ইসলামিক স্টেট, আইএস
একসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
আল-কায়দার উত্থান
জর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
দেশে দেশে আল-কায়দা
বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
‘‘সাদারাই সেরা’’
বর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
উগ্র ডানপন্থা
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
বামপন্থিদের সশস্ত্র লড়াই
সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
-
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
স্বাধীনতাকামীদের সংগ্রাম
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
সর্বশেষ হামলার জন্য স্থানীয়রা বোকো হারামকে দায়ী করেছে৷ দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওনিয়েমা নুইচাকু অবশ্য এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি৷
স্থানীয় কৃষক হারুন টম বলেন, ‘‘নিজেদের কৃষিজমিতে কাজ করা আমাদের নিরীহ নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় আমরা সবাই ব্যথিত৷ আমরা রেনে আজ ৫০ জনকে সমাহিত করেছি৷ তাদের অনেকে বর্ষা মৌসুমের আগে ক্ষেত পরিষ্কারে ব্যস্ত ছিল, বাকিরা জ্বালানি কাঠ জোগাড় করছিল৷''
এগিড মোহাম্মদ কিছুদিন আগে একটি শরণার্থী শিবির থেকে রেনে ফিরে গিয়েছিলেন৷ রবিবারের হত্যালীলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বোকো হারামের অনেক সদস্য হাতে বন্দুক ও চাপাতি নিয়ে মোটর সাইকেলে করে এসে ক্ষেতে কাজ করা মানুষদের ঘিরে ফেলে৷ এরপর তারা একে একে তাদের হত্যা করে৷''
ঘটনার পর থেকে মোহাম্মদের এক চাচাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে জবাই করা হয়েছে৷ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি তখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন৷''
এআই/এসিবি (রয়টার্স)