নভচারীরা যেভাবে স্পেসওয়াক করেন
২৭ আগস্ট ২০২৪সেজন্য তাদের বিশেষ স্যুট পরতে হয়৷ কারণ, আইএসএস-এর বাইরে হাঁটা যেমন কঠিন, তেমন বিপজ্জনক৷ স্টেশনটি যে উচ্চতায় ঘোরে সেখানে অনেক ঠাণ্ডা৷ এছাড়া কোনো বাতাসও নেই৷ মাত্র ৩০ সেকেন্ড পরই মানুষ মরে যাওয়ার কথা৷
শুধুমাত্র বিশেষ স্যুট পরেই নভচারীদের বেঁচে থাকা সম্ভব৷ স্যুটটি দেখতে অনেকটা ছোট মহাকাশযানের মতো৷
পিঠে থাকা ব্যাগ নভচারীদের শ্বাস নেওয়ার বাতাস দেয়৷ আর কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়৷
স্যুটে কয়েকটি স্তর থাকে যেন গ্যাস ঢুকতে বা বেরোতে না পারে, আর অতিরিক্ত চাপও যেন সহ্য করতে পারে৷
বাইরের স্তরটি অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপ দেওয়া অগ্নি-প্রতিরোধী কেভলার তন্তু দিয়ে তৈরি৷ মাইক্রো-মিটিওরাইট ও সৌর বিকিরণ থেকে নভচারীদের রক্ষা করে এই স্যুট৷
নভচারীরা বিশেষ পোশাক পরেন যার সঙ্গে টিউব লাগানো থাকে৷ এই টিউব দিয়ে ঠাণ্ডা পানি প্রবাহিত হওয়ায় নভচারীরা অতিরিক্ত তাপ থেকে রক্ষা পান৷
আইএসএস-এ যাওয়ার আগে নভচারীরা বিশেষ সুইমিংপুলে ট্রেনিং নেন৷ এইসময় ডাইভারদের মতো তাদের ১০০ কেজি ওজনের স্যুটের সঙ্গে আরও ওজন লাগানো থাকে, যেটি তাদের ভেসে থাকতে সহায়তা করে৷ অর্থাৎ মহাকাশের অবস্থা তৈরি করা হয়৷
আইএসএস-এ ওজনহীন পরিবেশ থাকে৷ কারণ, এটি এত দ্রুত পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে যে, কেন্দ্রাতিগ বল ও মাধ্যাকর্ষণ একে অপরের ভারসাম্য বজায় রাখে৷ প্রতি সেকেন্ডে এটি সাত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে!
নভচারীরাও একই গতিতে চলতে থাকেন৷ কিন্তু তারা সেটি টের পান না৷
স্টেশনের বাইরে নভচারীরা তাদের নিজস্ব অরবিটে থাকেন৷ ছোট ধাক্কা বা নড়াচড়ার কারণে অরবিট পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে৷ সেটি হলে তাদের দূরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেমনটা এতদিন নভচারীদের হারিয়ে ফেলা বিভিন্ন উপকরণের ক্ষেত্রে হয়েছে৷
সেটি হলে নভচারীদের পক্ষে নিজে নিজে ফিরে আসা সম্ভব নয়৷ সে কারণে মহাকাশযানের সঙ্গে তাদের সবসময় আটকে থাকতে হয়৷
নাসা ১৯৮৪ সালে বিশেষ ব্যাকপ্যাক পরীক্ষা করেছিল৷ বিভিন্ন কাজে নভচারীরা যেন মহাকাশযান থেকে দূরে যেতে পারেন সেজন্য এর প্রয়োজন অনুভূত হয়েছিল৷ জরুরি পরিস্থিতিতে পড়লে নভচারীরা তাদের অবস্থান স্থিতিশীল করতে থ্রাস্টার চালু করে মহাকাশযানে ফিরে যেতে পারেন৷
আইএসএস-এর বাইরে কাজ করার সময় নভচারীরা দুটি শিকল দিয়ে স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন৷ শিকল ব্যবহার করে তারা নড়াচড়া করতে পারেন৷ তবে স্থান পরিবর্তনের সময় অন্তত একটি শিকলের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত থাকতে হয়৷
আরও দূরে যাওয়ার জন্য নভচারীরা রোবটিক হাত ব্যবহার করেন৷ নভচারীদের নিরাপদে ধরে রাখার জন্য সেখানে বিশেষ প্ল্যাটফর্ম রয়েছে৷
কর্নেলিয়া বরমান/জেডএইচ