1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নতি স্বীকার করে খবর তুলে নেবো না’

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় আদালতের আদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন মুছে ফেলার ‘অদ্ভুত, অযৌক্তিক’ চাপের মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী৷

https://p.dw.com/p/3pUF8
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীছবি: bdnews24.com

এসব চাপে তারা নতি স্বীকার করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি৷ খালিদী বলেন, ‘‘ভুল হলে আমরা স্বীকার করব, সংশোধন করার প্রয়োজন হলে সংশোধন করে দেব, কিন্তু চাপের কাছে নতি স্বীকার করে আমরা কোনো খবর তুলে নেব না৷''

পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওই চাপের বিষয়গুলো জানাতে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধান সম্পাদক খালিদী৷ তার সঙ্গে ছিলেন হেড অব ইংলিশ নিউজ অরুণ দেবনাথ, বার্তা সম্পাদক জাহিদুল কবির এবং বার্তা সম্পাদক মুনীরুল ইসলাম৷

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুরনো সংবাদ মুছে ফেলার জন্য চাপ দেওয়ার কৌশল হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই শীর্ষ চার সম্পাদকের নামে বিভিন্ন জেলা থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন ডজনের বেশি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং মানহানির অভিযোগে মামলা করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ 

লিখিত বক্তব্যে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান এসব প্রতিবেদনে নেই; সম্পূর্ণভাবে মামলার কার্যক্রম ও আদালতের আদেশই সেখানে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়েছে৷ তাহলে কোন যুক্তিতে একটি সংবাদমাধ্যম এসব প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলবে?''

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত দুই সপ্তাহে ২৪টি জেলা থেকে অন্তত ৩৬টি উকিল নোটিশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে পৌঁছেছে৷ ভিন্ন ভিন্ন নামে পাঠানো হলেও সেগুলোর ভাষা, বক্তব্য ও দাবি একই রকম৷ যেসব প্রতিবেদন তুলে ফেলার জন্য জেলায় জেলায় মামলা করার ‘হুমকি' দেওয়া হচ্ছে, সেসব প্রকাশিত হয়েছিল ব্যবসায়ী ও সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন মামলায় আদালতের আদেশ নিয়ে৷

এর মধ্যে ২০১০ সালে একটি হত্যা মামলা থেকে ডা. ইকবালের খালাসের রায় নিয়ে যেমন প্রতিবেদন আছে, তেমনি দুদকের মামলায় ২০১৭ সালে তার স্ত্রী সন্তানদের হাইকোর্টে আপিল করার অনুমতি পাওয়ার খবরও আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷

খালিদী বলেন, ‘‘এর বাইরেও ২০০৭ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, সেসব তারিখে তাকে বা তার পরিবারকে নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন'৷ কিন্তু কোনো খবরের কোনো নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে কোনো আপত্তির কথা তারা বলছেন না৷''

যেসব খবর সরিয়ে ফেলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর একটি তালিকাও সাংবাদিকদের সরবরাহ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যারা উকিল নোটিশ পাঠাচ্ছেন, তারা নিজেদের ডা. ইকবালের বন্ধু বা সুহৃদ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন৷ তাদের দাবি, এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের ‘সম্মানহানী' করা হয়েছে৷

উকিল নোটিশগুলোর মোদ্দা কথা হলো, যেহেতু তারা আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, সেহেতু, তাদের দাবি অনুযায়ী, ওইসব মামলা নিয়ে পুরনো প্রতিবেদনও আর রাখা যাবে না৷ তাদের এমন দাবিকে ‘অযৌক্তিক' বলছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথম উকিল নোটিশটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম হাতে পেয়েছিল গত মাসের শেষে৷ বিষয়টি নিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়৷ সাংবাদিকতার নিয়ম অনুযায়ী নোটিশদাতা আইনজীবী এবং ডা. এইচ বি এম ইকবালের সঙ্গে সে সময় কথা বলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক৷

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলছে, ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন নতুন উকিল নোটিশ আসা শুরু হয়৷ সেখানে পুরনো বক্তব্যের সঙ্গে ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকেও ‘ভিত্তিহীন' আখ্যায়িত করে নতুন করে হুমকি দেওয়া হয়৷

একটি আইনি নোটিশে এভাবে ‘বিরূপ পরিণতির' জন্য প্রস্তুত থাকার ‘হুমকি' দেওয়া কতটা আইনসঙ্গত হতে পারে, সেই প্রশ্নও তোলা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সংবাদ সম্মেলনে৷ 

‘এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে বাকস্বাধীনতা থাকবে’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘‘ইন্টারনেটে পুরনো মামলার খবর থেকে গেলে ব্যবসার সমস্যা হয় বলে তারা দাবি করেন৷ সে কারণে তারা চান, পুরনো প্রতিবেদনগুলো সরিয়ে ফেলা হোক৷''

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘কোনো সংবাদ না প্রকাশ করার জন্য, অথবা প্রকাশিত সংবাদ মুছে দেওয়ার জন্য (ডিলিট) মহল বিশেষের প্রস্তাব, কখনও প্রলোভন এবং শেষ পর্যন্ত হুমকি পাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমেরই কমবেশি আছে, তা আমরা জানি৷ কিন্তু সর্বশেষ যে দাবিতে এবং যেভাবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তা এতটাই অযৌক্তিক, এতটাই উদ্ভট যে বিষয়গুলো অন্য সব সংবাদমাধ্যমকেও জানানোর প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি৷''

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যে আইনের দুর্বলতা ও অপব্যবহারের সুযোগ নিয়ে তিনি শুরু থেকেই কথা বলে আসছেন৷ ‘‘আইনটি পাস হওয়ার সময় আমি একাধিকবার এ নিয়ে কথা বলেছি৷ এই নতুন আইনের কিছু অংশ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সেসবের সুযোগে আইনের অপব্যবহারের ঘটনা আগের (তথ্যপ্রযুক্তি আইন) তুলনায় আরও বেশি ঘটবে বলেই মনে হয়৷''

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব উকিল নোটিশের প্রতিটিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মানহানির মামলা করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ সব অংক যোগ করলে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়৷

সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘‘মামলা হওয়ার বহু বছর পর তাতে খালাস পেয়ে কেউ যদি ওই মামলার পুরনো সব প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়ার দাবি তোলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াইয়ের অবতারণা করেন, তাহলে তার প্রভাব প্রতিটি গণমমাধ্যমের ওপরই পড়বে৷''

এপিবি/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)