ধারণের বদলে নির্গমন ঘটাচ্ছে অ্যামাজন অরণ্য
১২ মার্চ ২০২৪আমাদের গ্রহের উত্তাপ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত রাখার উদ্যোগে অ্যামাজন জঙ্গল অপরিহার্য৷ অ্যামাজন সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন সৃষ্টি করছে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণ করছে৷
কিন্তু দাবানল ও বন নিধনের কারণে অ্যামাজনের সেই ক্ষমতা কমে চলেছে৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নতুন এক বাস্তব উঠে এসেছে৷ লুচিয়ানা গাটি জাতীয় মহাকাশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ও রিপোর্টের প্রধান লেখক৷
২০২১ সালে ব্রিটেনের নেচার পত্রিকায় দশ বছরের গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে জানা গেল, যে ইতিহাসে এই প্রথম অ্যামাজন এলাকা গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎসে পরিণত হয়েছে৷
লুচিয়ানা ও তাঁর টিম ২০১০ সাল থেকে অ্যামাজন এলাকায় কার্বনের মাত্রা পরিমাপ করছেন৷ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলে ৪,৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ভার্টিকাল বা উল্লম্ব উড়ালের মাধ্যমে গবেষকরা চারটি ভিন্ন জায়গায় বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করছেন৷
অ্যামাজন জঙ্গল কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছে না ধারণ করছে, সেটা জানতে এই টিম দুটি পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে৷ প্রথম পদ্ধতিতে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে অ্যামাজন অববাহিকায় আসা কার্বনের পরিমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে৷
বার্বাডস, আসেনসিয়ন দ্বীপ ও কেপ টাউনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক পরিমাপ কেন্দ্রের দৌলতে এই টিম বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে পারে৷
সেই অংকের সঙ্গে নিজস্ব পরিমাপের ফল তুলনা করা হয়৷ সংখ্যাটা বেশি হলে বোঝা যায়, যে অ্যামাজন ধারণের বদলে বেশি কার্বন নির্গমন করেছে৷ কম হলে এর বিপরীতটাই নির্ধারণ করা হয়৷ শুনতে সহজ মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু বেশ জটিল৷
একাধিক সম্ভাবনা সেই ফলের উপর প্রভাব রাখতে পারে৷ যেমন ঠিক কত দিন ধরে সেই বাতাস আকাশে ভাসছিল, অথবা সেই বাতাসের ঘনত্ব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷
কিন্তু সেই ফল এতই বিস্ময়কর ছিল, যে গবেষকরা ভেবেছিলেন যে তাঁদের মডেল বা পদ্ধতি সম্ভবত ভুল ছিলো৷ লুচিয়ানা গাটি বলেন, ‘‘সবার আগে নিজের নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল৷ তখন ‘ইয়ারলি ভার্টিকাল প্রোফাইল' নামের এক টুল তৈরি করলাম৷ কোনো মডেল বা পদ্ধতি নয়, বরং সেটা শুধু এক পরিমাপ ছিল৷ অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলে যা আছে৷ আমার মতে, ভূ-পৃষ্ঠের কাছে এলে ঘনত্ব বেড়ে গেলে তার অর্থ, সেই ভূ-পৃষ্ঠ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎস৷ কনসেনট্রেশন কমে যাওয়ার অর্থ, ভূ-পৃষ্ঠ সিংক বা নীচের দিকে কিছুটা গভীর৷ অর্থাৎ বাৎসরিক ভার্টিকাল প্রোফাইল সৃষ্টি করলে এবং তার ফল ইতিবাচক হলে, একশো শতাংশ নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে অ্যামাজন অবশ্যই সিওটু-র উৎস৷''
গবেষকরা দেখিয়ে দিয়েছেন, যে আগের মতোই অ্যামাজন এলাকার অবহেলা চলছে৷ আমাদের যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানসূত্র সন্ধানের বদলে আমরা বরং সমস্যারই অংশ হয়ে উঠেছি৷
বন নিধন ও দাবানল অ্যামাজনের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে৷ সেই সব প্রক্রিয়াই কার্বন নির্গমনের উৎস৷
সের্দার ভারদার/এসবি