গবেষণায় কীভাবে এগোতে পারে বাংলাদেশ?
২৩ আগস্ট ২০১৭কেবল জগদীশ চন্দ্র বসুই নন, আরো অনেক বিজ্ঞানী বিংশ শতকের শুরুর দিকে বিশ্বসেরা কাজ করেছেন বাংলাদেশে বসেই৷ কিন্তু আজ এই একবিংশ শতকে এসে সেই হারটা অনেকখানি কমে এসেছে৷ আমাদের দেশের মানুষরা বিজ্ঞানী হিসাবে কিন্তু খারাপ নন৷ তাঁরা বিশ্বের নানা জায়গার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গবেষণাগারে ঠিকই অনেক অসাধারণ কাজ করছেন৷ কিন্তু বাংলাদেশে বসে কেবল কৃষিবিজ্ঞান, পাবলিক হেলথ, বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রায়োগিক গবেষণা ছাড়া অন্যান্য গবেষণার হারটা ঠিক একশ' বছর আগের মতো নয়৷ এর কারণটা কী?
গবেষণার রাজ্যে আমার পদার্পন আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে৷ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ডেকে পাঠালেন উনার বাসায়৷ উনি তখন বুয়েটের আমার বিভাগ কম্পিউটারকৌশলের প্রধান৷ ডাক পেয়ে ভড়কে গেলেও হাজির হয়েছিলাম স্যারের বাসায়, উপরি পাওনা ছিল নাস্তা৷ স্যার আমাদের গবেষণার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়ে কিছু গবেষণাপত্রের প্রিন্টআউট ধরিয়ে দিলেন, বললেন এগুলো পড়ে কিছু করা যায় কিনা দেখতে৷ সময়টা ১৯৯৮ সাল, দেশে ইন্টারনেট তখনো সেভাবে সবখানে আসেনি আর এলেও খরচ ব্যাপক৷ সেই অবস্থায় ইন্টারনেট সার্চ করে নতুন গবেষণাপত্র বের করা, পড়া, এবং গবেষণার জগৎ সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন ছিল৷ বিকল্প ছিল একটাই – বুয়েটের মাস্টার্স পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত লাইব্রেরিতে গিয়ে নানা জার্নাল খুঁজে বের করে পড়া৷ এই কাজটা বেশ সময়সাপেক্ষ৷ একেকটা পেপার পড়ার পর তার রেফারেন্সে উল্লেখ করা অন্যান্য পেপারগুলো খুঁজে বের করতে অন্তত সপ্তাহখানেক সময় লাগতো৷ তাছাড়া যে কোনো বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান পেতে হলে সেই সংক্রান্ত সর্বাধুনিক টেক্সটবুকগুলো লাগতো, যা দেশে বসে পাওয়াটা রীতিমতো কঠিন কাজ ছিল৷ এমতাবস্থায় গবেষণা যে হতো না তা অবশ্য না৷ অবশ্যই হতো, তবে সেই গবেষণাটুকু কম্পিউটার বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিকেই ছিল সীমাবদ্ধ৷
বুয়েট থেকে পাস করে কিছুদিন শিক্ষকতার পরে আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিশ্বসেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইনে যাই পিএইচডি করতে৷ গবেষণা করার সুবিধার দিক থেকে দেশের বাইরে আসার পরে অবস্থাটা অনেকটা রাত আর দিনের মতো হয়ে গেল৷ দেশে থাকার সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মন্থরগতিতে যেভাবে নানা গবেষণাপত্র ডাউনলোড করতে পারতাম, বিদেশে এসে রাতারাতি গিগাবিট স্পিডের ইন্টারনেট হাতে পেলাম, পেলাম দরকার মতো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটারে কাজ করার সুযোগ৷ ভালো করে চিন্তা করে যে পার্থক্যগুলো দেখতে পেলাম, তা অনেকটা এরকম– বিদেশে নানা তথ্যভাণ্ডারে খুব সহজেই তথ্য অনুসন্ধান চালাতে পারছি, যা দেশে ইন্টারনেটের ধীর গতির কারণে পারিনি৷ আবার প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয় হবার সুবাদে নানা জার্নাল বা আইইইই/এসিএম-এর ডিজিটাল লাইব্রেরির সাবস্ক্রিপশন থাকায় অনায়াসে ল্যাবের ডেস্কে বসেই সব পেপার ডাউনলোড করে নিতে পারতাম, দেশে যেটা করতে হলে প্রবাসী কারো দ্বারস্থ হতে হতো৷ আবার নানা বইপত্রের সর্বাধুনিক সংস্করণও লাইব্রেরিতে সহজলভ্য৷ তদুপরি হাতে কলমে শেখার উপরে ব্যাপক জোর দেয়া হয় সর্বত্র৷
আজ বহু বছর পরে আমি নিজে ছাত্রত্ব শেষ করে শিক্ষক ও গবেষকের পেশা বেছে নিয়েছি৷ এখন আমার অধীনে অন্তত ১০ জন ছাত্রকে হাতে ধরে গবেষণা করতে শিখিয়েছি৷ গবেষণার উপরে বাংলায় একটি বইও লিখেছি৷ দেশে ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে, নানা রিসোর্স/বইপত্র মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জোগাড় করাটা অনেক সহজ হয়েছে৷ কিন্তু এখনো বাংলাদেশ গবেষণার ক্ষেত্রে অন্য অনেক দেশের চাইতে পিছিয়ে আছে৷ কিন্তু কেন? বোঝা যাচ্ছে, ইন্টারনেটের গতিটা এখানে মূল সমস্যা ছিল না, যেমনটা আগে ভেবেছিলাম৷ এই নিবন্ধটা লেখার সময়ে বেশ খানিকটা সময় ভাবলাম, আসলেই, কি পার্থক্য দেশের একজন গবেষক আর বিদেশের একজন গবেষকের মধ্যে? আসুন দেখা যাক...
(১) রিসোর্স: ইন্টারনেটের গতি বাড়লেও গবেষণার সরঞ্জাম ও অন্যান্য অনেক কিছুর ক্ষেত্রে দেশের গবেষকেরা অনেক পিছিয়ে আছেন বিদেশের গবেষকদের চাইতে৷ কম্পিউটার বিজ্ঞানে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সুবিধা আছে কাজটা অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটারভিত্তিক বলে৷ কিন্তু নানা ভৌত বিষয় যেমন পদার্থ, রসায়ন, কিংবা জীববিজ্ঞানের গবেষকদের গবেষণা কর্মের জন্য যন্ত্রপাতি, গবেষণাগার এসব প্রতিষ্ঠা করতে অনেক খরচ হয়, দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই সেই সুযোগটা কম৷
(২) গবেষণার অর্থায়ন: গবেষণার ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, গবেষণা সহকারী – এ সবের জন্য বেশ অনেকটা অর্থের প্রয়োজন হয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন অধ্যাপকের ক্ষেত্রে উদাহরণ দিই৷ গবেষণার জন্য আমাকে প্রতি বছর বেশ অনেকগুলো প্রপোজাল বা প্রস্তাবনা লিখতে হয়, যা জমা দিই নানা গবেষণা এজেন্সির কাছে৷ ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের বার্ষিক বাজেট হলো ২০১৭ সালের হিসাবে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার৷
নানা প্রতিযোগিতামূলক পথ পেরিয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ আসে, যা থেকে গবেষণা সহকারী হিসাবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাভাতা এবং টিউশন ফি এবং গবেষণার যন্ত্রপাতি কেনার টাকা মেলে৷ পক্ষান্তরে বাংলাদেশে গবেষণাখাতে বরাদ্দ খুবই কম৷ সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক কালে কিছু বরাদ্দ এলেও তা দরকারের চাইতে অনেক কম৷ ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন গবেষক তাঁর গবেষণা সহকারিদের বেতন দিতে পারেন না৷ অধিকাংশ গবেষণাই একা একজনের পক্ষে কারো সাহায্য ছাড়া বা কেবল স্বেচ্ছাসেবী সহকারিদের নিয়ে করাটা দুরূহ৷
(৩) গবেষণার সময় ও প্রণোদনা: আমি গবেষণা করি কেন? জ্ঞানের জন্য তো বটেই, সেটা মূখ্য কারণ৷ কিন্তু সেটা ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণার জন্য বেশ কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে৷ শিক্ষক হিসাবে চাকুরি পাকা করা, পদোন্নতি হওয়া সবকিছুই নির্ভর করছে গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্যের উপরে৷ কিন্তু বাংলাদেশে অনেক সময়ই পদোন্নতি কিংবা চাকুরি পাকা করার ক্ষেত্রে গবেষণার ভূমিকাকে সেরকম গুরুত্ব দেয়া হয় না৷ মোটামুটি সাধারণ মানের জার্নালে প্রকাশনা থাকলেই পদোন্নতির গবেষণা সংক্রান্ত শর্তটি যদি মিটে যায়, তাহলে কি আর কেউ বিশ্বসেরা জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের অতিরিক্ত পরিশ্রমটি করবেন? তদুপরি অধ্যাপকদের বেতন কাঠামোর কারণে অনেক সময়েই কনসাল্টেন্সি অথবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করে সংসার চালাতে হয়৷ এর ফলে তাঁরা গবেষণার দিকে সেরকম সময় দিতে পারেন না৷ এই ব্যাপারটাতে ভারতের অধ্যাপকদের বেতনের উদাহরণ দিতে পারি৷ ভারতের আইআইটির একজন পূর্ণ অধ্যাপকের বেতন মাসে ৩ লাখ রুপির কাছাকাছি (বাংলাদেশি টাকার হিসাবে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা), বাড়িভাড়া বাদেই৷ সেই তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন অনেকখানিই কম৷ ২০১৫ সালের অষ্টম পে স্কেল অনুসারে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত প্রফেসরদের বেসিক বেতন মাসে ৭৮ হাজার টাকা মাত্র, যা আইআইটির প্রফেসরদের বেতনের মাত্র ২১ শতাংশ৷
একই কথা ছাত্রদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ সারা বিশ্বে গবেষণার কাজের একটা বড় অংশ হয় স্নাতকোত্তর পর্যায়, মানে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে৷ বিশেষ করে পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর কোনো একটি বিষয়ে ভালো করে গবেষণা করেন, তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকের অধীনে৷ নিজের পিএইচডি অভিসন্দর্ভ শেষ করার তাগিদেই গবেষণার কাজটা এসব শিক্ষার্থী করেন৷ কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচডি পর্যায়ের গবেষণাকর্ম অপ্রতুল৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার কাজটা অনেক সময় শখের বশে, অথবা স্নাতক পর্যায়ের থিসিস লেখার জন্য অল্প সময় নিয়ে করেন, যার ফলে ভালো কিছু করার সময় পান না তাঁরা৷ পিএইচডি পর্যায়ে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে সম্মানজনক বৃত্তির সংখ্যা নগন্য৷ অথচ এমন কিন্তু নয় যে এসব সুবিধা কেবল পশ্চিমা দেশেই আছে৷ প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কিন্তু স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পিএইচডি করা শিক্ষার্থীরা ভালো অংকের সম্মানী পান, যার ফলে অনেকেই চাকুরিতে না ঢুকে অথবা বিদেশে না গিয়ে দেশেই পিএইচডি করেন৷ ভারতের আইআইটি-র পিএইচডি শিক্ষার্থীরা মাসে ২৫ থেকে ৬০ হাজার রুপির ভাতা পান, উপরি হিসাবে বাড়ি ভাড়াও পান৷ এর ফলে তাঁরা চাকুরি বা অন্যভাবে অর্থ উপার্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে গবেষণায় সময় দিতে পারেন৷
(৪) গবেষণার ফল প্রকাশ: গবেষণার ফল প্রকাশ করতে হলে কনফারেন্সে উপস্থাপনা করতে হবে কিংবা পাঠাতে হবে জার্নালে৷ এর খরচ ব্যাপক৷ অধিকাংশ বিশ্বসেরা কনফারেন্স ইউরোপ বা অ্যামেরিকায় হয়, যার রেজিস্ট্রেশন ফি কিংবা যাতায়াতের খরচ যোগ করলে কয়েক লাখ টাকা খরচ পড়ে যায়৷ প্রতি বছর এভাবে পেপার প্রতি এত টাকা খরচ করা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সম্ভব না৷ আবার অনেক জার্নালেও প্রকাশনা ফি আছে৷ এই খাতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ নাই বললেই চলে৷
উত্তরণের উপায়
আচ্ছা, গবেষণায় পিছিয়ে থাকার কারণটা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায় কী? রিসোর্স সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দুভাবে করা যেতে পারে৷ বর্তমানে অনেক বিষয়ের গবেষণাই কম্পিউটার নির্ভর হয়ে গেছে, ফলে মূল যন্ত্রাংশ না থাকলেও সিমুলেশনের মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব৷ গবেষকেরা এই দিকে মন দিতে পারেন, অল্প খরচের কম্পিউটার দিয়ে অথবা ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কিন্তু অনেক ভালো মানের এক্সপেরিমেন্ট বা সিমুলেশন করা সম্ভব৷ তবে যেসব ক্ষেত্রে আসল যন্ত্রপাতিমূলক গবেষণাগার প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে আসলে সরকারি অর্থ বরাদ্দের বিকল্প নাই৷ এর পাশাপাশি দেশে স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করা যেতে পারে৷ উন্নত বিশ্বে প্রচুর কোম্পানি এরকম কোলাবরেশন করে থাকে গবেষকদের সাথে৷
তবে আমার মতে গবেষণার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হলো গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা৷ এর মানে হলো গবেষণার গুরুত্বটা সরকারি পর্যায়ে বুঝতে হবে, চিন্তা করতে হবে দীর্ঘমেয়াদে এবং এই খাতে বিনিয়োগ করতে হবে দেশের স্বার্থে৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার খাতে বরাদ্দ বেশ কম৷ তার ফলে গবেষণা প্রকল্পে শিক্ষার্থী বা গবেষণা সহকারী পাওয়া মুশকিল৷ সরকারি পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গবেষণা অনুদানের ব্যবস্থা করলে দেশের গবেষকেরা নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা করে ভালো ভালো সব কাজ করবেন৷ তার সাথে সাথে ভালো গবেষকদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে যাতে করে গবেষণায় তাঁরা উদ্বুদ্ধ হন৷ শিক্ষকদের বেতন কাঠামো, পিএইচডি গবেষকদের ভাতা বাড়ানোসহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য অর্থায়ন বাড়াতে হবে৷
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি সংখ্যা উল্লেখ করতে চাই৷ ২০১৭-১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার খাতে বরাদ্দ হলো ১২ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ৷ তুলনা করার জন্য ভারতের আইআইটি মুম্বইয়ের ২০১৫-১৬ সালের বাজেট বের করলাম৷ সেখানে বরাদ্দ ছিল ২৫৫ কোটি রুপি, অর্থাৎ প্রায় ৩২০ কোটি টাকা৷ ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৭ কোটি টাকা৷ বাংলাদেশ আর ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বরাদ্দের এই সংখ্যাগুলোর তুলনাই দেখিয়ে দেয়, বাংলাদেশের গবেষকেরা গবেষণার ক্ষেত্রে কতটা অবহেলিত৷ ছোট্ট দেশ ইসরায়েল প্রতি বছর গবেষণা খাতে জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ করে, বাংলাদেশের বাজেটের কত অংশ এই খাতে বরাদ্দ করা হয়?
শেষ করছি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু প্রফেসর কায়কোবাদ ও তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ আরো কিছু শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে৷ এত প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁরা শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণার বীজটা বপন করার চেষ্টা করেছেন৷ তাঁদের এই চেষ্টার ফলেই ২০ বছর আগে গবেষণার রাজ্যে আমার পদার্পণ শুরু হয়৷ বছর বছর ধরে অনেক গবেষকের যাত্রা শুরু এভাবেই৷ গবেষণার খাতে একটু মনোযোগ দিলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ালে পরিণামে লাভটা হবে অনেক সুদূরপ্রসারী৷ গবেষণায় এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা আমাদের আছে৷ দরকার কেবল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ৷ জ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যতের পৃথিবীতে কায়িক শ্রমের চাইতে মেধাভিত্তিক গবেষণার গুরুত্বটাই হবে অনেক অনেক বেশি, সেটা দ্রুত নীতি-নির্ধারকেরা বুঝতে পারবেন, সেটাই কামনা করি৷
এ বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন? জানান নীচের ঘরে৷