1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দূষণ রুখতে এয়ার পিউরিফায়ার কি ভবিতব্য

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ জানুয়ারি ২০২০

বায়ুদৃষণে নাভিশ্বাস উঠছে সারা পৃথিবীর। স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক কুপ্রভাব ফেলছে এই দূষণ। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। এর উপজাত হিসেবে উঠে আসছে বহুজাতিক সংস্থার পণ্য এয়ার পিউরিফায়ার। তবে কি এটাই ভবিতব্য?

https://p.dw.com/p/3Vhms
Indien Kalkutta | Luftreiniger und weitere Geräte werden Repariert
ছবি: DW/P. Samanta

বায়ুদূষণে নাভিশ্বাস উঠছে সারা পৃথিবীর। স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক কুপ্রভাব ফেলছে এই দূষণ। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। এর উপজাত হিসেবে উঠে আসছে বহুজাতিক সংস্থার পণ্য এয়ার পিউরিফায়ার। তবে কি এটাই ভবিতব্য?

‘ল্যান্সেট কমিশন অন পলিউশন অ্যান্ড হেলথ' একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে, ২০১৭ সালে পৃথিবীতে যত মানুষ মারা গিয়েছে, তার মধ্যে ১৫ শতাংশের মৃত্যুর কারণ দূষণ। ​​​ ভারতে দূষণের প্রকোপে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি, ২৩ লক্ষ। এ দেশের বায়ুদূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর মারিয়া নায়রা। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী দূষণ। বহু শহরেই দূষিত বাতাসের স্তর বেড়ে গিয়েছে যা বিপদসীমার অনেক উপরে। এদিকে কলকাতাতেও দূষণ বছরভরই বাড়ছে। বহুতল নির্মাণ বা পিচ গলানোর পাশাপাশি খোলা স্থানে অসংখ্য খাবারের দোকানে জ্বালানী হিসেবে কয়লার উনুন ব্যবহার করা হয়। সেগুলি থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। দীপাবলি, বড়দিন বা নতুন বছরের প্রথম দিন জুড়ে কলকাতায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে দূষিত বাতাস।

‘এতটা দূষণ নয় যে ঘরে ঘরে পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে হবে’

প্রশ্ন উঠছে, মানুষ কী করে বাঁচবে এই দূষণের হাত থেকে। অনিশ্চয়তা ও বর্তমানের দূষণজনিত ক্ষতি থেকে আশু পরিত্রাণ পেতে চাইছে মানুষ। তাই তাদের ভরসা হয়ে উঠছে এয়ার পিউরিফায়ার বা বায়ুশোধন যন্ত্র। এই যন্ত্রের ঘেরাটোপে বাস করে মানুষ অন্তত তার ঘরে দূষণ থেকে নিষ্কৃতি চাইছে। সে কারণে ক্রমশ বাড়ছে এয়ার পিউরিফায়ারের বিক্রি। দিল্লির মতো দূ্ষণে জর্জরিত না হলেও কলকাতাতেও বাড়ছে এই যন্ত্রের চাহিদা।

দিল্লি-সহ গোটা উত্তর ভারতে দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এয়ার পিউরিফায়ারের বিক্রি ৬০ শতাংশ বেড়েছে গত বছরের তুলনায়। বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার মতে, বাতাসের গুণমান সূচক ক্রমশ নিম্নগামী হয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মৌ, কানপুরের মতো শহরে বায়ুশোধন যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। তবে দেশের রাজধানী দিল্লি রয়েছে শীর্ষ স্থানে। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কলকাতার মতো দেশের অন্যান্য বড় শহরেও মানুষ ক্রমশ এই যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছে। সারা দেশে এই যন্ত্র যত বিক্রি হয়, তার অধিকাংশের ক্রেতা উত্তর ভারতের বাসিন্দারা। এয়ার পিউরিফায়ার উৎপাদনকারী একটি বহুজাতিক সংস্থার বক্তব্য, ‘‘মানুষ দূ্যণ নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছে। আশপাশে দূষণ বাড়ছে, সেটা তারা রাস্তায় বেরোলেই বুঝতে পারছে। তাই তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে এয়ার পিউরিফায়ার কিনছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা বেড়েছে, সে দিকেই এগোচ্ছে এয়ার পিউরিফায়ারও।’’

কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্রটি? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী জানান, ‘‘এই যন্ত্রের মধ্যে একটি ফিল্টার পেপার থাকে। সেটি বাতাস থেকে বিভিন্ন কণা শোষণ করে শুদ্ধ বায়ু ছেড়ে দেয়। তাতে ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত হয়৷’’  তবে কলকাতায় এখনও এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অধ্যাপক রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এতটা দূষণ নয় যে ঘরে ঘরে পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে হবে। দিল্লিতে পরিস্থিতি গুরুতর।তবে বিজ্ঞাপনের চমকে অনেকে এই যন্ত্রের দিকে ঝুঁকেছেন। একইভাবে ওয়াটার পিউরিফায়ারের বিক্রি বেড়েছে, ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। কলকাতায় বাতাস শুদ্ধ করার যন্ত্রের প্রয়োজন নেই বলে আত্মসন্তুষ্টি থাকা উচিত নয়। দূষণ রুখতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’’

‘কোনো সঙ্কট এলে কর্পোরেটদের সুবিধা হয়’

গার্হস্থ্য প্রয়োজনের জন্য ব্যবহৃত এই যন্ত্রের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তাঁর মতে, ‘‘ঘরের মধ্যে দূষণ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী হবে যদি বাইরের পরিবেশ দূষিত থাকে। অধিকাংশ মানুষ মুক্ত পরিবেশেই বেশিক্ষণ থাকে। তখন দূষণ থেকে কে বাঁচাবে?” তিনি জানান, কলকাতায় এ বারের শীতে গত বছরের তুলনায় দূষণের মাত্রা কম। এ জন্য পর্ষদ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘‘কোনো সঙ্কট এলে কর্পোরেটদের সুবিধা হয়। জলদূষণ নিয়ে আলোচনা হওয়ায় ওয়াটার পিউরিফায়ারের বিক্রি বেড়েছে। এখন বায়ুদূষণ নিয়ে বলা হচ্ছে, এতে ওদের বাণিজ্যের সুবিধা হবে। সবচেয়ে জরুরি মুক্ত পরিবেশের বায়ুকে দূষণমুক্ত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।" তিনি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য