দুই ধাপ উন্নতির পরও হাইব্রিড রেজিমেই বাংলাদেশ
লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গণতন্ত্র সূচক ২০২২ প্রকাশ করেছে৷ সূচকে দুই ধাপ এগোলেও গত দুই বছরের মতো এবারও ‘হাইব্রিড রেজিম’ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ৷
গণতন্ত্র সূচক কী?
২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ গ্রুপের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট৷ এই সূচক তৈরিতে বিশ্বের ১৬৫টি দেশ এবং দুইটি অঞ্চলের শাসনব্যবস্থাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷
যেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়
পাঁচটি মানদণ্ড অনুসরণ করে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে৷ এগুলো হলো নির্বাচন প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, সরকার পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার৷
চার ধরনের শাসন
গণতন্ত্র সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়৷ পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড বা মিশ্র শাসনব্যবস্থা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন৷ ২০২২ সালের সূচকে দেখা গেছে, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে বাস করছেন৷ মাত্র আট শতাংশ মানুষ বাস করছেন পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়৷
হাইব্রিড রেজিম মানে কী?
এই ধরনের শাসনব্যবস্থার একটা চিত্র তুলে ধরেছে ইআইইউ৷ এগুলো হলো, নির্বাচনে অনেক অনিয়ম হয়, যা অনেকসময় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা তৈরি করে৷ বিরোধী দল এবং প্রার্থীর ওপর সরকারি চাপ সাধারণ ঘটনা৷ দুর্নীতির মারাত্মক বিস্তৃতি ও দুর্বল আইনের শাসন৷ দুর্বল সুশীল সমাজ৷ সাধারণত সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপের মুখে থাকতে হয়৷ বিচারব্যবস্থাও স্বাধীন নয়৷
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
গত দুই বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে হাইব্রিড রেজিম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তালিকায় দুই ধাপ উন্নতি হলেও বাংলাদেশ স্কোর রয়েছে গত বছরের মতোই- ৫.৯৯৷ ১৬৭টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭৩তম স্থানে৷ পাঁচটি মানদণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ স্কোর নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে৷
তলানিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ
দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই, পুরো তালিকাতেই সবচেয়ে নীচে অবস্থান আফগানিস্তানের৷ মাত্র ০.৩২ স্কোর করা নির্বাচন প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণে পেয়েছে শূন্য৷ আফগানিস্তানের ঠিক ওপরে রয়েছে মিয়ানমার৷ ১৬৬ নম্বরে থাকা দেশটি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পাশাপাশি সরকার পরিচালনাতেও পেয়েছে শূন্য৷
দক্ষিণ এশিয়ায় বাকিদের কী অবস্থান?
তালিকার ১০৭ নম্বরে পাকিস্তানের অবস্থান, ১০১ নম্বরে নেপাল, এবং ভুটান রয়েছে ৮৪ নম্বরে৷ ৷ এই তিন দেশই রয়েছে হাইব্রিড রেজিমে৷ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের অংশে স্থান পেয়েছে শ্রীলংকা এবং ভারত রয়েছে যথাক্রমে তালিকার ৬০ এবং ৪৬ নম্বরে৷
গণতন্ত্রের বৈশ্বিক স্থবিরতা
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে গণতন্ত্র কতটুকু এগিয়েছে? সূচক বলছে, গণতন্ত্রে উন্নতি হচ্ছে না, একেবারেই থেমে রয়েছে৷ ২০২১ সালে যেখানে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের স্কোর ছিল পাঁচ দশমিক দুই আট, ২০২২ সালে সেটি হয়েছে পাঁচ দশমিক দুই নয়৷
রাশিয়া এবং চীন
প্রকাশিত সূচকের ভূমিকা অংশে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে রাশিয়া এবং চীনের নাম৷ বিশ্বের ২০ শতাংশ মানুষ বাস করেন এই দুই দেশে৷ রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং চীনের নিজ দেশের মানুষের ওপর নানা বিধিনিষেধের ফলে সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে৷