মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ
২ এপ্রিল ২০১৪ন্যান্সি পাওয়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত হয়ে ভারতে আসেন ২০১২ সালের এপ্রিলে৷ মাত্র দু'বছরের মাথায় গত সোমবার হঠাৎ করে তাঁর এই পদত্যাগ দিল্লির কূটনৈতিক মহলে এক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে৷ রাষ্ট্রদূত তাঁর ইস্তফার কোনো কারণ বলেননি, শুধু বলেছেন কূটনৈতিক জীবন থেকে অবসর নিয়ে তিনি দেশে ফিরে যাচ্ছেন৷ বিনা কারণে যে তিনি পদত্যাগ করেননি, সেটা বলার দরকার হয় না৷ কিন্তু তার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে?
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রথম কারণ নিউইয়র্কে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানি খোবড়াগাড়ে ইস্যু যা নিয়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এসে দাঁড়িয়েছে খাদের কিনারায়৷ দেবযানি খোবড়াগাড়েকে মার্কিন পুলিশের হাতে যেভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে তা কোনো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীন দেশের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব৷ পারিচারিকার জাল ভিসার অভিযোগে দেবযানির সঙ্গে দাগি আসামির মতো ব্যবহার করা হয়৷ মহিলা বলেও তাঁকে রেয়াত করা হয়নি৷ হাতকড়া পরিয়ে তাঁর দেহতল্লাসি পর্যন্ত করা হয় প্রকাশ্যে, জেনিভা কনভেনশন অনুসারে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরোয়া না করে৷
ওবামা প্রশাসনের এহেন আচরণে দিল্লি ক্ষোভে ফেটে পড়ে৷ এই ধরণের অসম্মানজনক আচরণকে মার্কিন ঔদ্ধত্য এবং দ্বিচারিতা আখ্যা দিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে রাজনৈতিক দলগুলি৷ নির্বাচনের মুখে মনমোহন সিং-এর কংগ্রেস-জোট সরকার পড়ে বিপাকে৷ ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়৷ ভারতের ক্ষোভ প্রশমনের কোনো চেষ্টা করেননি ন্যান্সি পাওয়েল৷ ভারতে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া যে এতদূর গড়াবে, তা আঁচ করতে না পেরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পাওয়েল মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিতেও ব্যর্থ হন৷
পরিণামে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় দিল্লি৷ মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কূটনীতিকদের ভারতীয় বিমান বন্দরগুলিতে বিনা সিকিউরিটি-চেকে যাতায়াতের সুবিধা তুলে নেয়া হয়৷ সরিয়ে ফেলা হয় দিল্লির মার্কিন দূতাবাসের সামনে থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী৷ দিল্লির অ্যামেরিকান স্কুলগুলির শিক্ষকদের বেতন এবং ভিসা নিয়েও তদন্ত শুরু করে দিল্লি৷ দু'দেশের সম্পর্ক এত চাপের মুখে পড়েনি সাম্প্রতিককালে৷ মার্কিন সংসদীয় প্রতিনিধিদল এবং অন্য উচ্চস্তরীয় আধিকারিকস্তরের বৈঠক বাতিল করা হয়৷
এখানেই শেষ নয়, ভারতে এখন চলছে নির্বাচন প্রক্রিয়া৷ যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারতের মতো এক উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে শীতল সম্পর্ক চলতে থাকলে সেটা হবে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ তথা একবিংশ শতাব্দীতে দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতার পরিপন্থি৷ বিজেপি দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে তাই অচ্ছুৎ করে রাখা মার্কিন সরকারের পক্ষে ভুল পদক্ষেপ হবে৷ মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেও পাওয়েল কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেননি৷ এমন নয় যে ন্যান্সি পাওয়েল ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ৷ পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও কলকাতায় এর আগে তিনি কাজ করে গেছেন৷ তাঁর পক্ষে এটা কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল৷ অবশ্য সাক্ষাৎ তিনি করেছিলেন মোদীর সঙ্গে৷ উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার কারণে মানবাধিকার প্রশ্নে মোদীকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে ওয়াশিংটন৷
মোটকথা নির্বাচনের পর ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নতুন করে সাজাতে ন্যান্সি পাওয়েলের জায়গায় পাঠানো হতে পারে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে, এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ওয়াশিংটন থেকে৷