দাম প্রচুর, তাও কলকাতার বাজার মাত করলো বাংলাদেশের ইলিশ
কলকাতার বাজারে এলো বাংলাদেশের ইলিশ৷ শুক্রবার ভোরে পাইকারি বাজারে ইলিশ আসে৷ তারপর তা চলে যায় বাজারগুলিতে৷
ইলিশ এলো
পাতিপুকুরের পাইকারি বাজারের ছবি৷ বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এসে পৌঁছালো৷ তারপর বাক্স থেকে তা বের করার প্রক্রিয়া শুরু হলো৷ এরপর পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বিক্রেতারা ইলিশ কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন৷ পাতিপুকুর ছাড়া কলকাতা ও হাওড়ায় আরো কয়েকটি পাইকারি বাজার আছে৷ সেখানেও ইলিশ এসেছে৷
ছোট-বড় ইলিশ
দুই ধরনের ইলিশই এসেছে৷ কিছু ইলিশ এক কেজি বা তার বেশি ওজনের৷ কিছু ইলিশ এক কেজির কম ওজনের৷ পাতিপুকুরের এক বিক্রেতা দুই ধরনের ইলিশ তুলে দেখাচ্ছেন৷
বাজারে ইলিশ
এরপর কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতারা বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে এলেন৷ মানিকতলা, গড়িয়াহাট, লেক মার্কেটের মতো বড় বাজারে তো বটেই, অন্য ছোট বাজারেও পৌঁছে গেলো বাংলাদেশের ইলিশ৷ প্রতীক্ষা শেষ হলো৷ উপরের ছবিটি গড়িয়াহাট বাজারের, এখানে প্রচুর বিক্রেতা বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি করেছেন।
খুবই দামি
পাইকারি বাজারে এক কেজির থেকে বড় ইলিশের দাম উঠেছে এক হাজার ছয়শ টাকা থেকে এক হাজার সাতশ টাকা৷ এক কেজির নিচের ইলিশের দাম এক হাজার চারশ টাকা থেকে এক হাজার পাঁচশ টাকা৷
বাজারে আরো দামি
এই ইলিশ যখন বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে, তখন তার দাম চাওয়া হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি৷ ফলে কলকাতার বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ এলেও তা হয়ত অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ তা সত্ত্বেও সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ অন্য খাতে খরচ কমিয়ে ইলিশ কিনে রসনা তৃপ্তি করছেন৷ কারণ, ইলিশ-ভক্তরা কবে আর দামের তোয়াক্কা করেছেন!
কেন এত দাম?
পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মাত্র ৫০ টন ইলিশ এসেছে৷ একশ টনের মতো এলে দাম একটু কম হতো৷ কিন্তু কম ইলিশ আসায় দাম তুলনায় বেশি৷
তাও বিক্রি হচ্ছে
এত দাম সত্ত্বেও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে৷ মাছে-ভাতে বাঙালি তো পাতে সুস্বাদু ইলিশের জন্য সবকিছু করতে পারে৷ উৎসবের মাসে খরচ এমনিতেই বেশি হয়৷ টাকার টানাটানি থাকে৷ তারপরেও ইলিশের জন্য তারা টাকা খরচ করতে পিছপা হচ্ছেন না৷
গঙ্গা বনাম পদ্মার ইলিশ
গঙ্গার ইলিশেরও নামডাক কম নয়৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অনেকের মতে, পদ্মার ইলিশের স্বাদ অনেক ভালো৷ পাতিপুকুরের মাছ ব্যবসায়ী দুলাল সামন্ত জানিয়েছেন, ‘‘পদ্মার ইলিশের ওজন বেশি হয়৷ বাংলাদেশ থেকে এক কেজি থেকে এক কেজি আটশ গ্রাম ওজনের মাছ বেশি আসে৷ এক কেজির কম ওজনের মাছও আসে৷ কিন্তু গঙ্গার ইলিশ পাঁচশ থেকে সাতশ গ্রাম ওজনের হয়৷ পদ্মার ইলিশের স্বাদ তাই ভালো হয়৷’’
যত দিন নদীর জলে...
গড়িয়াহাটে ইলিশ কিনছিলেন সুজিত পাত্র৷ তার স্পষ্ট কথা, ‘‘যারা ইলিশ কেনে, তারা দামের চিন্তা করে না৷ ইলিশ যত বেশি সময় নদীর জলে থাকবে, তত নোনা ভাব কেটে যাবে, তত তার স্বাদ বাড়বে৷ যারা ইলিশ খান, মাছ চেনেন, তারা ভালো করে বোঝেন, গঙ্গা ও পদ্মার ইলিশের তফাৎ কোথায়?’’
ইলিশপ্রেমীর কথা
গড়িয়াহাট বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন অজন্তা রায়৷ তিনি জানালেন, কাজের জন্য অনেকবার বাংলাদেশ গেছেন৷ বাংলাদেশের ইলিশের জন্য তার আলাদা টান আছে৷ এই ইলিশ খেলে মন ভালো হয়ে যায়৷ দাম অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাই তিনি ইলিশ কিনেই বাড়ি ফিরছেন৷
ইলিশ চিনি কেমনে
লেক মার্কেটে এসে ইলিশ কিনছিলেন রুদ্র রায়৷ তিনি বললেন, ‘‘বাংলাদেশের ইলিশ একটু লম্বাটে হয়৷ স্বাদেও অপূর্ব৷ যারা বাংলাদেশের ইলিশ চেনেন, তারা একবার দেখলেই বুঝে যাবেন, কোন ইলিশ ঢাকা থেকে এসেছে৷’’
স্বাদে রাজা
মানিকতলা বাজেরে ইলিশ কেনার ফাঁকে শ্যামল সাউ জানালেন, ‘‘কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের ইলিশের দাম বেশি৷ কিন্তু তার স্বাদটাও দেখতে হবে৷ স্বাদটাই তো আসল৷ তাই কোলাঘাটে রূপনারায়ণের ইলিশ যেমন আমার পছন্দ, তেমনই পছন্দ বাংলাদেশের ইলিশ৷’’
ক্রেতা ও বিক্রতা খুশি
বাংলাদেশের ইলিশ যে এত দাম সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে, তা দেখে বিক্রেতারাও খুশি৷ তারাও একটু লাভের মুখ দেখছেন যে৷ ক্রেতারাও খুশি, তারা ভালো ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন।