গোটা ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা জুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। শীত পড়তেই ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। জার্মানি সহ একাধিক দেশে সংক্রমণের মাত্রা গতবারের চেয়ে অনেকটাই বেশি। জার্মানিতে রোববার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করল ডাব্লিউএইচও। সংস্থার করোনা সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান ডেভিড নাবারো একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের গোড়ায় ইউরোপ জুড়ে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। এবং তাতে ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা।
নাবারোর বক্তব্য, গরম কালে করোনার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, ইউরোপ তা নেয়নি। গরমে করোনার প্রভাব সামান্য কমতেই মানুষ সমস্ত নিয়ম মানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সকলে রাস্তাঘাটে বেরিয়ে পড়েছিলেন। নিরাপদ দূরত্ব মানা, মাস্ক ব্যবহার করার মতো নিয়মগুলি কেউ সে ভাবে মানেননি। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। ঠান্ডা পড়তেই ফের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এখনো কড়া ব্যবস্থা না নিলে আগামী বছরের গোড়ায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাবারো। এবং এ ক্ষেত্রেই এশিয়ার প্রশংসা করেছেন তিনি।
তাঁর বক্তব্য, এশিয়ার অধিকাংশ দেশে গরমের সময়েও করোনা বিধির প্রাথমিক বিষয়গুলি মেনে চলা হয়েছে। অর্থনীতির জন্য লকডাউন তুলে দিলেও মানুষ অধিকাংশ জায়গায় সতর্ক ভাবে চলাফেরা করেছেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছেন। ফলে শীতেও সংক্রমণের মাত্রা যথেষ্ট কম। উদাহরণ হিসেবে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বলেছেন তিনি। জাপানে গত শনিবার নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫৯৬। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৮৬।
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
২০০৮ সালে শুরু
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর জাহিন এবং তাঁর স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম টুরেচি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
তুরস্ক বংশোদ্ভূত
তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
উজলেম টুরেচি
৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত
২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তাঁর আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর জাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ভ্যাকসিন ট্রায়াল
যাদের আগে কখনও করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷ জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
১৬ হাজার কোটি টাকার চুক্তি
ফাইজার ও বায়োনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দু’টি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিজার৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি, প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ৷ ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে কয়েক মাস সংক্রমণে ধীরগতি থাকার পর আবার দ্রুত হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ (কেএম)
ভারত এবং পাকিস্তানে অবশ্য শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংক্রমণের পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, পাটিগণিতের হিসেবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় না। লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, প্রথম সপ্তাহে যদি সংক্রমণের হার আট গুণ বাড়ে, তা হলে দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বাড়বে ৪০ গুণ। তৃতীয় সপ্তাহে ৩০০ গুণ। চতুর্থ সপ্তাহে হাজার গুণ। এটাই করোনার বৈশিষ্ট্য। ইউরোপ এই বিষয়টি বুঝতে না পারলে আগামী কয়েক মাসে সমস্যা বাড়বে।
একদিকে যখন তৃতীয় ঢেউয়ের সতর্কতা জারি করা হচ্ছে, তখন বিভিন্ন দেশেভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা চলছে। অ্যামেরিকা জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে ১১ ডিসেম্বর থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া চালু হতে পারে। প্রথমে বয়স্ক, অসুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হতে পারে। ইউরোপেও জানুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া চালু হতে পারে। ভারত জানিয়েছে, দেশে তৈরি ভ্যাকসিন আগামী দুই মাসের মধ্যে বাজারে আনা সম্ভব। প্রতিটি ভ্যাকসিনেরই শেষ পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। ভ্যাকসিন কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বৈঠক হবে ভারতে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ, পিটিআই)