তিন পড়ুয়ার মৃত্যু কি চাপা পড়ে যাবে রাজনীতির কোলাহলে?
দিল্লিতে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে মৃত্যু তিন পড়ুয়ার। অকালে ঝড়ে যাওয়া তিনটি প্রাণের দায় নেবে কে?
এই সেই কোচিং সেন্টার
দিল্লির ওল্ড রাজেন্দ্র নগরের রাউস আইএএস স্টাডি সার্কেল। এই বহুতল ভবনের বেসমেন্ট ব্যবহার করা হতো ছাত্রছাত্রীদের লাইব্রেরি ঘর হিসাবে। ছাত্রছাত্রীরা সেখানে বসে পড়তেন বা লিখতেন। অথচ, নিয়ম অনুযায়ী, বেসমেন্টে গাড়ি পার্কিং ও কিছু জিনিস রাখার অনুমতি দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু সেখানেই বেআইনিভাবে লাইব্রেরি করা হয়েছিল।
কী করে হলো?
স্থানীয় মানুষ ও ওই কোচিং সেন্টারের পড়ুয়াদের দাবি, রাজেন্দ্র নগরে নিকাশি ব্যবস্থার হাল খুবই খারাপ। অল্প বৃষ্টিতে সেখানে জল জমে যায়। কারণ, ড্রেনগুলি আবর্জনা ও কাদামাটিতে ভরে আছে। তা পরিষ্কার করার কাজ করা হয়নি। গত শনিবার রাস্তার জমা জল রাউস কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে চলে যায়, তার কারণও এটাই। নিকাশী ব্যবস্তা বেহাল হয়ে থাকা। প্রবল জল ঠেলে বেরোতে পারেনি তিন পড়ুয়া।
কারা মারা গেলেন?
মোট তিনজন পড়ুয়া এই ঘটনায় মারা গেছেন। তারা হলেন, ২৫ বছর বয়সি তানিয়া সোনি ও শ্রেয়া যাদব এবং ২৮ বছর বয়সি নবীন দেলভিন। তানিয়া বিহারের ঔরঙ্গাবাদের বাসিন্দা। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। দেড় মাস আগে ওই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। উত্তরপ্রদেশের শ্রেয়াও মাত্র দুই মাস আগে এই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন। নবীন কেরালার ছেলে। জেএনইউ-তে গবেষণার পাশাপাশি আইএএস হওয়ার জন্য এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
বেসমেন্টে এত জল যায় কী করে?
একটা বাড়ির বেসমেন্টে কয়েক মিনিটের মধ্যে পাঁচ ফুটের মতো জল জমে গেল কী করে? ওটা কোনো ছোট বেসমেন্ট ছিল না। পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, প্রায় ১২৫ জন বসে পড়তে পারে এমন জায়গা ছিল। এতবড় জায়গায় কী করে এতটা জল জমে যায়? পড়ুয়ারা জিনেয়েছেন, রাস্তার জল যাতে আসতে না পারে, তার জন্য সামনের দিকটা কিছুটা উঁচু করা হয়েছিল। তারপরেও বৃষ্টি বেশি হওয়ায় প্রবল বেগে জল ঢোকে বেসমেন্টে।
কেন নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার হয় না?
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ওই জায়গায় জল জমার সমস্যা অনেকদিনের। তা সত্ত্বেও বর্ষার আগে নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার করা হয়নি। বৃষ্টিতে প্রবল জম জমে যায়। নিকাশী ব্যবস্থা পরিষ্কার করার দায়িত্ব হলো পুরসভার। এবার এই নিয়ে শুরু হয়েছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। শুরু হয়েছে পুরো দমে রাজনীতি।
আপ-এর দাবি
আপ নেতা ও সাংসদ সঞ্জয় সিং দাবি করেছেন, ''গত ২৮ জুন দিল্লিতে একটা বৈঠক হয়। সব মন্ত্রী, মুখ্যসচিব-সহ উচ্চপদস্থ আমলা ও সরকারি কর্মীরা সেখানে ছিলেন। সেখানে দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার করতে হবে, না হলে দিল্লি ভেসে যাবে। তারপর কার নির্দেশে সেই কাজ হলো না? এতটা সাহস আমলারা পায় কী করে? এটা দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে এলজি ও বিজেপি-র চক্রান্ত।''
বিজেপি-র বক্তব্য
রাজ্য বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব জানিয়েছেন, ''এটা পুরোপুরি দিল্লি সরকারের ব্যর্থতা। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল জেলে থাকা সত্ত্বেও ইস্তফা দেননি। অন্য মন্ত্রীরা কাজ করছেন না। তারা কেজরিওয়ালকে জেল থেকে ছাড়াতে ব্যস্ত। তারা কাজ করলে এই অবস্থা হতো না। সুপ্রিম কোর্ট কোচিং ইনস্টিটিউটগুলির অডিটের নির্দেশ দিয়েছিলো। তারপরেও তা হয়নি।''
পুলিশ ও প্রশাসন যা করেছে
পুলিশ তদন্ত করছে। কোচিং সেন্টারের মালিক-সহ ,সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওল্ড রাজেন্দ্র নগরে বেসমেন্টে চলা ১৩টি কোচিং সেন্টারকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোচিং সেন্টার কি শুধু ওল্ড রাজেন্দ্র নগরে এইভাবে বেসমেন্টে কাজ করে, নাকি দিল্লির অন্যত্রও আছে? তাহলে অন্য জায়গায় কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না? প্রশাসন বুলডোজার দিয়ে নিকাশী ব্যবস্থা আটকে গড়ে ওঠা বেআইনি নির্মাণও ভেঙেছে।
পড়ুয়াদের প্রতিবাদ
তিন পড়ুয়ার এভাবে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। তারা মোমবাতি মিছিল করছে। তিনজনের ছবি লাগিয়ে সেখানে নানা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাদের প্রথম ও প্রধান দাবি হলো, এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দিতে হবে এবং আর যাতে কোনো পড়ুয়ার প্রাণ না যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।