তফসিলি সংরক্ষণে শ্রেণিবিভাগ করা যাবে, কোটাও: সুপ্রিম কোর্ট
১ আগস্ট ২০২৪এতদিন পর্যন্ত দলিতদের চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সংরক্ষণ চালু ছিল। দলিত হলেই এই সংরক্ষণ পাওয়া যেত। সেখানে কোনো সাব-ক্ল্যাসিফিকেশন ছিল না। কিন্তু প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চ এই ব্যবস্থা বদলের রায় দিলো।
এর ফলে ভারতে দলিতদের মধ্যে সাব-ক্লাসিফিকেশন বা শ্রেণিবিভাগ করা যাবে। যারা খুব বেশি পিছিয়ে তাদের জন্য আলাদা কোটা নির্ধারণ করা যাবে। তবে দলিতদের জন্য সংরক্ষণ ১৫ শতাংশই থাকবে। সেই ১৫ শতাংশের মধ্যে কিছু শ্রেণির জন্য কোটা চালু করা যাবে।
বিচারপতিরা জানিয়েছেন, কোনো একটি শ্রেণিকে পুরো কোটা দেয়া যাবে না। আর শ্রেণিগুলি যে পিছিয়ে তার বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা দিতে হবে। সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় তাদের উপস্থিতির হার ব্যাখ্যা করতে হবে। অর্থাৎ, সরকার বা ক্ষমতাসীন দল তাদের রাজনৈতিক সুবিধা অনুযায়ী কোনো শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারবে না।
সাত বিচারপতির মধ্যে ছয়জন দলিতদের মধ্যে শ্রেণিবিভাগের পক্ষে রায় দিয়েছেন। একজন বিরোধিতা করেছেন। প্রধান বিচারপতি-সহ যে ছয় বিচারপতি এই বিষয়ে একমত হয়েছেন। কিন্তু তারা আলাদা আলাদা রায় লিখেছেন।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে প্রধান বিচার্য বিষয় ছিল দুইটি। এর আগে এ ভি চিন্নাইয়া বনাম অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের মামলায় সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, দলিত মানে একটা সমশ্রেণিভুক্ত গোষ্ঠী। এই রায় ঠিক কিনা এবং দলিতদের মধ্যে শ্রেণিবিভাগের অনুমতি দেয়া যায় কিনা?
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন,. ''দলিতদের সমজাতীয় বা সমশ্রেণিভুক্ত বলা যায় না। তাই তাদের সাব-ক্লাসিফিকেশন করলে সংবিধানের সমতার অধিকার লংঘিত হয় না। সংবিধানে এই সাব-ক্ল্যাসিফিকেশন করা যাবে না, এমন কথা বলা নেই।''
চন্দ্রচূড় বলেছেন, ''তবে শ্রেণিবিভাগের পিছনে যুক্তি ও তথ্য দিতে হবে, দেখাতে হবে ওই বিশেষ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব কম। সরকার নিজের মর্জিমাফিক বা রাজনৈতিক কারণে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আর সরকারের সিদ্ধান্ত আদালত খতিয়ে দেখতে পারবে।''
বিচারপতি গাভাই বলেছেন, ''সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষরা যাতে সুবিধা পায়, সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। তফসিলি জাতি/উপজাতির মধ্যে সামান্য কিছু মানুষ সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করবেন এটা হয় না। তাাদের মধ্যে এমন অনেক শ্রেণি আছে, যারা শতকের পর শতক দমনের শিকার। সাব-ক্ল্যাসিফিকেশনের ভিত্তিটা হলো এটাই যে, বৃহত্তর গোষ্ঠীর কাছে অন্য গোষ্ঠী যেন বঞ্চনার মুখে না পড়ে।''
বিচারপতি গাভাই বলেছেন, ''বলা হচ্ছে, এর ফলে ক্ষমতাসীন দল বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারে। কিন্তু আমি এর সঙ্গে সহমত নই। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, সমতা।''
বিচারপতি গাভাই বলেছেন, ক্রিমি লেয়ার বা তফসিলি জাতি/উপজাতির মধ্যে বিত্তবানদের চিহ্নিত করা ও তাদের সংরক্ষণের আওতা থেকে বাদ দেয়ার ব্যবস্থাপনা, সারকারকে করতে হবে। আরো তিন বিচারপতি ক্রিমি লেয়ারকে সংরক্ষণের আওতার বাইরে রাখার কথা বলেছেন।
বিচারপতি মিত্তলের মত
বিচারপতি মিত্তল তার রায়ে বলেছেন, সংরক্ষণ কোনো শ্রেণির প্রথম প্রজন্মের পাওয়া উচিত। তারপরের প্রজন্ম তো সাধারণ স্রেণির কাঁধে কাঁধ মেলানোর জায়গায় চলে আসছে। যদি তারা সেই জায়গায় পৌঁছে যায়, তাহলে তাদের সংরক্ষণ দেয়া উচিত নয়।
বিচারপতি ত্রিবেদীর ভিন্নমত
বিচারপতি ত্রিবেদীর মতে, ''দলিতদের তালিকা বদল করা যাবে না। সাব-ক্ল্যাসিফিকেশন মানে এই তালিকায় বদল ঘটানো। যা করা যায় না। একটি শ্রেণিকে বিশেষ সুযোগ দেয়ার অর্থ তো অন্যদের বঞ্চিত করা।''
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, লাইভ ল, এনডিটিভি)