ডোপিং-এ বিধ্বস্ত সাবেক পূর্ব জার্মানির খেলোয়াড়রা
৪ অক্টোবর ২০১০খেলাধুলার জগতে ‘ডোপিং' শব্দটি বেশ পরিচিত৷ খেলোয়াড়রা ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখানোর জন্য অবৈধভাবে আশ্রয় নিচ্ছে বিভিন্ন ধরণের হরমোন বা মাদকের – সে কথা কম বেশি সবাই জানে৷
সাবেক পূর্ব জার্মানি খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী ছিল৷ তা তাদের মেডেলের তালিকা থেকে সহজেই বোঝা যায়৷ শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সোনার মেডেলে ঝকমক করতো খেলোয়াড়রা৷ তবে এর পিছনে সবসময়ে কঠোর পরিশ্রম বা প্রশিক্ষণ ছিল না, ছিল মাদক, ওষুধ এবং বিভিন্ন ধরণের হরমোনাল ইঞ্জেকশান৷
সাবেক পূর্ব জার্মানি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সব মিলিয়ে ৪০৯টি মেডেল এবং শীতকালীন অলিম্পিকে ১১০টি মেডেল কুড়িয়েছিল৷ অসাধারণ এই ক্রীড়া নৈপুণ্যের পেছনে কাজ করছিল কোন শক্তি ? সে কথা প্রায় ২০ বছর পর খোলসা করে জানালেন সাবেক এ্যাথলিট ইনেস গাইপেল৷ তিনি দিলেন ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য, ‘‘এর মধ্যে বেশ কিছু খেলোয়াড় মারা গেছেন৷ সেই নামের তালিকাও অনেক দীর্ঘ৷ তারা পেছনে রেখে গেছেন বিকলাঙ্গ শিশু৷ এসব শিশু বিকলাঙ্গ হয়েই জন্মেছে৷ এছাড়া রয়েছে হরমোন সমস্যায় জর্জরিত অনেক খেলোয়াড়, ক্যান্সারে আক্রান্ত অসংখ্য খেলোয়াড়৷ বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে ব্লাড ক্যান্সার এবং মহিলাদের মধ্যে হরমোনের সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ অত্যন্ত তীব্র সেসব ওষুধ সেবনের কারণে মহিলাদের দেখতে লাগত পুরুষদের মতো৷''
উঁচু মহলের লোকজন ওয়াকিবহাল ছিলেন
ঠিক কোন ধরণের ওষুধ বা মাদক সেবন করতেন খেলোয়াড়রা ? যে ধরণের মাদকই তারা সেবন করতেন কর্তৃপক্ষ তা জানতো৷ তাদের সম্মতি ছিল৷ এক ধরণের জেদ কাজ করতো তাদের মধ্যে৷ কম্যুনিস্ট পূর্ব জার্মানি খেলাধুলায় দেখে নেবে ক্যাপিটালিস্ট পশ্চিম জার্মানিকে৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির খেলোয়াড়দের মধ্যে মাদক এবং ডোপিং-এর বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন হান্স ইওয়াখিম টাইশলার৷ তিনি জানান, ‘‘ কাগজে কলমেই খেলোয়াড়দের মাদক সেবনের বিষয়টি পাওয়া যায়৷ যে সব চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছিল – তারা এটা জানতেন৷ তারাই বলতেন কোন বিশেষ মাদকটি কোন খেলার জন্য সহায়ক৷ একেকটি খেলোয়াড়ের জন্য থাকত একজন করে চিকিৎসক৷ কোন ধরণের ট্রেনিং তাদের নিতে হবে, ফলাফল কেমন হবে বা হতে পারে, সেদিকে তারা নজর রাখতেন৷ ১৯৯০ সালের আগে শুধু খেলার মাঠেই সবকিছু টেস্ট করা হত৷ ট্রেনিং-এর সময়ে কোন কিছু খতিয়ে দেখা হতো না৷ এভাবেই তারা প্রতিটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতো৷''
দুই জার্মানির একত্রীকরণের পর জার্মানি বেশ আশাবাদী ছিল পূর্ব থেকে আগত নতুন সব খেলোয়াড়দের নিয়ে৷ খেলোয়াড়দের মধ্যে ডোপিং-এর সমস্যা উঁচু মহলের লোকজন জানতেন৷ কিন্তু তা বন্ধ করতে বা তা নিয়ে কথা বলতে কেউই রাজি ছিলেন না৷ জার্মানির তৎকালীন অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন মানফ্রেড ফন রিশ্টহোফেন৷ তিনি বলেন,‘‘ সাবেক পূর্ব জার্মানির খেলায়াড়দের মাধ্যমে দ্রুত সাফল্য অর্জন করা ছিল মূল লক্ষ্য৷ কোন্ ধরণের অনৈতিক কাজ করা হচ্ছে তা নিয়ে কমিটি, ট্রেনার বা চিকিৎসক – এমন কি ক্রীড়া সংস্থাগুলোরও কোন আগ্রহ ছিল না৷''
জরিমানায় কাজ হয়নি
আর এসব জানাজানি হওয়ার পর শুরু হয় আদালতে দৌড়াদৌড়ি৷ প্রায় ১৭০ জন খেলোয়াড়কে মাথাপিছু সাড়ে নয় হাজারেরও বেশি ইউরো জরিমানা করা হয়৷ জরিমানা দাবি করে জার্মানির অলিম্পিক কমিটি৷ তবে ডোপিং শুধু সাবেক পূর্ব জার্মানির সমস্যা নয়৷ ১৯৭০ এবং '৮০ সালে পশ্চিম জার্মানির খেলোয়াড়দের মধ্যেও ডোপিং-এর প্রবণতা বাড়তে থাকে৷ চিকিৎসকরা সব কিছু জেনেও কিছু বলতেন না৷ একথা ঠিক, যতক্ষণ চিকিৎসক মাদক বা হরমোনাল ইঞ্জেকশন ওষুধ হিসেবে দিচ্ছেন ততক্ষণ তা বৈধ৷ কথাগুলো জানান ন্যাশনাল এ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির প্রধান ডা. গোট্রিক ভেভ্যার৷ তিনি খোলাসা করে বললেন,‘‘ যে সব খেলোয়াড়রা নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবন করেন, তারা প্রচুর পয়সা ঢালেন এর জন্য৷ তারা জানেন, এর প্রতিক্রিয়া একদিন কী হতে পারে৷ আমরা তাদের নিয়েই কাজ করি৷ তারা জেনেশুনেই এই ঝুঁকি নেন৷ একদিন তীব্র শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন তারা হবেন, তা জেনেও বিভিন্ন ধরণের হরমোন বা মাদকে তারা বুঁদ হয়ে থাকেন৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন