1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ডাক্তারদের খেয়াল কে রাখছেন ভারতে?‌

৭ মে ২০২১

ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে ফাইনাল ইয়ারের ডাক্তারির ছাত্র-ছাত্রীদের যুদ্ধে নামিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ কিন্তু সেই চিকিৎসকদের কার্যত ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে!‌

https://p.dw.com/p/3t7Cb
ফাইল ছবি৷ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS

ডাক্তারির ফাইনাল ইয়ারের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্র–ছাত্রী যারা, সারা ভারতে তাদের সংখ্যাটা প্রায় ৮০০০৷ গত এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তারা৷ এই এক বছরে ভারতের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি কোভিডের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে আগাম প্রস্তুতি যে নেয়নি, সে নিয়ে এখন বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু নির্বিকার সরকার উল্টে ফের সেই ডাক্তারির ছাত্র–ছাত্রীদেরই কোভিড পরিস্থিতি সামাল দিতে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে৷ বরং যা ঘটছে, তাকে স্রেফ ব্ল্যাকমেল বলা যেতে পারে৷ ফাইনাল ইয়ারের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্র–ছাত্রীরা কার্যত বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসা দিতে, সেটাও বিনা পারিশ্রমিকে৷

কী ঘটছে বাস্তবে?‌এমবিবিএস পাশ করার পর যে ছাত্র–ছাত্রীরা তিন বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি করেন, তাদের ওই ৩৬ মাসের জন্য বন্ড সই করতে হয়৷ যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারা পড়েন, সেখানে সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার হিসেবে কাজ করতে হয়৷ তিন বছরের কোর্সের শেষে পরীক্ষা হয় এবং পাশ করে যে যার মতো চাকরি শুরু করেন৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি কোভিড পরিস্থির মোকাবিলায় যে জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাতে এই পিজি ডাক্তারদের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, আপাতত কোভিড রোগীদের চিকিৎসা তাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে৷ যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে৷ এবং এই পরিষেবা তাঁদের জোগাতে হবে বিনামূল্যে৷ অবশেষে যখন ওদের প্রয়োজন আর পড়বে না, অর্থাৎ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তখন সরকারের তরফ থেকে ওঁরা একটি করে শংসাপত্র পাবেন, যে জরুরি পরিস্থিতিতে ওরা সেবা দিয়েছেন৷
পিজি ফাইনাল ইয়ারের ডাক্তাররা বলছেন, তাদের কোনো আপত্তি নেই কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করে যেতে৷ কিন্তু প্রাপ্য পারিশ্রমিক, অর্থাৎ এই কাজের বিনিময়ে বেতন কেন তারা পাবেন না?‌তিন বছরের পিজি পাঠক্রম শেষ করে ওরা প্রত্যেকেই চাকরি শুরু করতেন৷ অনেকেই সেইভাবে ভবিষ্যৎ ভেবেছেন, অনেকে বিয়েও করেছেন, বা তাদের পরিবার আছে৷ সাংসারিক দায়–দায়িত্ব আছে সবার৷ কিন্তু সরকার কেন সেকথা আদৌ ভাবছে না?‌যে পরীক্ষা তিন বছরের শেষে হওয়ার কথা ছিল, সেটাই বা কেন অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে?‌একটাই কারণে, বলছেন পিজি ডাক্তাররা৷ যাতে পরীক্ষার ভয়, তাতে ভালো রেজাল্ট না করার ভয় দেখিয়ে ডাক্তারদের বাধ্য করা যায় সরকারের কথা মতো চলতে, বিনা বেতনে চিকিৎসা করে যেতে৷
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়া শেষ করা, এরকমই ফাইনাল ইয়ারের এক পিজি ছাত্রী যে কারণে তেতো গলায় বললেন, ‘‌‘‌কার কত জ্ঞান, সেটা যাচাই করতে ভারতের কোনো মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা হয় না৷ বরং পরীক্ষক অধ্যাপকদের সঙ্গে ছাত্র–ছাত্রীদের কার সম্পর্ক কত ভালো, তার ওপর নির্ভর করে পরীক্ষার রেজাল্ট৷’’ ফলে কেন ওঁরা বাধ্য হচ্ছেন সরকারি খেয়ালখুশি মেনে চলতে, সেটা নেহাতই সহজবোধ্য৷ ওই ছাত্রী অত্যন্ত হতাশ, যে এরকম ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁদের সঙ্গে৷ এবং সারা দেশেই তার মতো অসংখ্য ক্ষুব্ধ চিকিৎসক বাধ্য হচ্ছেন এমন বেনিয়ম মেনে নিতে৷
কী চাইছেন ওঁরা৷ পরিচয় দিলে ভবিষ্যতে ক্ষতি হতে পারে, তাই নাম গোপন রেখে ওই ছাত্রী জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌এক, এভাবে তাদের পরীক্ষার ভয় না দেখিয়ে পরীক্ষা বাতিল করা হোক৷ কারণ পোস্ট গ্রাজুয়েশনের পরীক্ষা ছেলেখেলা নয়৷ কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসা চালানোর পাশাপাশি তার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়৷ আর দুই, কাজের বিনিময় বেতন দেওয়া হোক, যা ডাক্তারদের প্রাপ্য৷'‌'‌এর পাশাপাশি কোভিড ওয়ার্ডে সেবা করবেন যারা, তাদের স্বাস্থ্যরক্ষার কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাদের কারো কোভিড হলে অন্তত পরিবারের থেকে নিরাপদ দূরত্বে তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা হয়েছে কিনা, আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসারই বা কী হবে— এরকম অনেক ব্যাপারেই সরকার নিশ্চুপ৷