1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোলে নিয়ে যেতে গিয়ে রোগীর মৃত্যু

১৫ মে ২০২০

কলকাতার সরকারি হাসাপাতালের বেহাল ও অমানবিক ছবি আবার সামনে এলো। যেখানে রোগীকে পাঁজাকোলা করে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হয়। রোগীর মৃত্যু হলে ভয়ে কেউ সামনে আসেন না। 

https://p.dw.com/p/3cFZO

এর আগে ট্রলিতে করে ভাইয়ের মরদেহ মর্গে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিলো কলকাতার হাসপাতালে। কারণ, যাঁরা এই কাজ করেন, তাঁরা করোনারভয়ে হাসপাতালমুখো হচ্ছিলেন না। এ বার সেই ট্রলিও জুটলো না। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ছেলে কলকাতা মেডিকেল কলেজের এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে ছুটলেন ট্রলি ছাড়াই। বাবাকে পাঁজাকোলা করে। বাবার জ্বর। প্রবল শ্বাসকষ্ট। এ ভাবে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ার সময় বাবাকে মাটিতে নামিয়ে একটু দম নিচ্ছিলেন ছেলে। তার মধ্যেই বাবার মৃত্যু হয়।

তার পরের ঘটনা আরও ভয়ঙ্কর। বাবার দেহ রেখে ছেলে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু হাসপাতালের কেউ ভয়ে তাঁদের কাছে ঘেঁষছেন না। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পড়েছিলো ওই মৃতদেহ। অনেক কর্মী এসেছেন, দূর থেকে দেখে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ ধারেকাছে আসেননি। যে কলকাতার মানবিক মুখ নিয়ে হামেশা আলোচনা হয়, রাজ্যবাসী গর্বের সঙ্গে দাবি করেন, এই মানবিক মুখই তাঁদের বৈশিষ্ট্য, সেখানে এই ধরনের অমানবিক ছবি একের পর এক সামনে আসছে।

করোনার চিকিৎসায় সামরিক হাসপাতাল

দিন কয়েক আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত দুই বছরের প্রিয়াংশি সাহাকে নিয়ে তাঁর বাবা-মা কলকাতায় একের পর এক হাসপাতালে ছুটেছেন। মেডিকেল কলেজেই প্রিয়াংশির পেটে টিউমার অপারেশন হয়েছিলো। একবার কোমোথেরাপিও দেওয়া হয়। তাঁকে আবার কেমো দেওয়া খুব জরুরি ছিলো। মেডিকেল কলেজে হয়নি। সেটা কোভিড হাসপাতালহয়ে গিয়েছে। করোনার রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত হাসপাতাল তঁদের কথা শোনেনি। অন্য হাসপাতালের অবস্থাও তাই। একটা ভ্যান রিক্স নিয়ে প্রিয়াংশির বাবা বিশ্বজিৎ সাহা একের পর এক হাসপাতালে ছুটেছেন। কোনও ফল হয়নি। প্রিয়াংশি এখন আর নেই।

অসুস্থ মাকে কোলে নিয়ে ছেলের হাসপাতালের দিকে যাত্রা নিয়ে অন্য রাজ্যের একটি ছবি কিছুদিন আগে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিলো। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স ছিলো না, কোনও যানবাহন পায়নি ছেলেটি। কিন্তু খাস কলকাতার বুকে সব চেয়ে পুরনো ও নামকরা সরকারি হাসপাতালে একটা ট্রলি পাওয়া যাবে না রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য? মারা গেলে এই ভাবে ঘণ্টাখানেক রোগীকে ছোঁবেন না কেউ? কলকাতায় কেমো হবে না বলে মারা যাবে একটা দুই বছরের মেয়ে?

বৃহস্পতিবারের ঘটনাই দেখুন। বাবাকে প্রথমে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে। সেখান থেকে মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলা হয়। প্রথমে সুপার স্পেশালিটি ব্লকের ফিভার ক্লিনিকে নিয়ে যান তিনি। সেখানে বলা হয়, জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য টিকিট করতে। সেই টিকিট করে বাবাকে প্রবল শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট গ্রিন বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তাঁরা বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে তারপর প্রতিক্রিয়া দেবেন। করোনার কারণে রোগীদের প্রবল চাপ রয়েছে। ফলে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। তবে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের মতে, মৃতদেহ প্যাকিং করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীদের খাবার দেওয়ার লোকের অভাব। রোগীদের বাড়ির লোককে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানাবার লোকও প্রায় নেই। এই অবস্থায় চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ জরুরি। বাঙুর হাসপাতালেও এরকম সমস্যা ছিলো। প্রশিক্ষণের পর ঠিক হয়েছে। অন্য হাসপাতালেও এই প্রশিক্ষণ ছাড়া পরিস্থিতি স্বভাবিক হবে না।

জিএইচ/এসজি(আবাপ, এএনআই)