‘জিয়ার খেতাব বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা নেই’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কোনো দিক নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান৷
মঙ্গলবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়৷ একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়৷ ডয়চে ভেলের ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’-এ যোগ দিয়ে এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান৷ তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের জন্য যখন প্রস্তাব আসে, তখন প্রস্তাব আসে যে বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা মদত দিয়েছে তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান এবং খোন্দকার মোশতাক, তাদেরও পদক বা সম্মান বাতিল করতে হবে৷ এই প্রস্তাব আসার পরে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত হয়৷ (জিয়ার) খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো এবং এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো দিক নির্দেশনা আপাতত নেই৷’’
তিনি জানান, জামুকা থেকে খেতাব বাতিলের প্রস্তাব করা হবে, তবে সেটা কতটা আইনসঙ্গত, কী করতে হবে তার জন্য তিন জনের একটা কমিটি করে দেয়া হয়েছে৷ সেই কমিটি আলোচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে তারপর চূড়ান্ত আকারে সেটি যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে৷
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীকও ছিলেন৷ তিনি মনে করেন জামুকার এই উদ্যোগ জাতিকে নতুন করে দ্বিধাবিভক্তির দিকে ঠেলে দেবে৷ ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত বাঙ্গালি জাতিকে, বাংলাদেশি জাতিকে আরো বেশি দ্বিধাবিভক্ত করা হচ্ছে৷ এখানে গেইন (অর্জন) করার কিছুই নাই৷ এটার উপর ভোট হবে না৷ কিন্তু একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাকে আহত করা, সম্মানকে আহত করার মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সরকার সকল রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাকে আহত করবে... যেটা কারো কাম্য নয়,’’ বলেন তিনি৷
বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরার তথ্যচিত্রকে ঘিরে যে সমালোচনা হচ্ছে, তাকে আড়াল করতেই জামুকা রাজনৈতিক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেই প্রশ্ন রাখেন শাজাহান খানের কাছে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই৷ সত্যকে আমরা প্রকাশ করেছি মাত্র৷ পৃথিবীতে এমন অনেক ইতিহাস আছে, যাদের খেতাব কেড়ে নেয়া হয়েছে৷’’
শাজাহান খান জিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের পাশাপাশি তার যুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ দাবি করেন, জিয়াউর রহমান মাঠ পর্যায়ের যুদ্ধে অংশ নেননি এবং তিনিই একমাত্র সেক্টর কমান্ডার, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করেননি৷ তবে এই দাবি উড়িয়ে দেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম৷ তিনি বলেন, একই সেক্টরে যুদ্ধ না করলেও তিনি রণাঙ্গনে জিয়াউর রহমানের সম্মুখ সমরে অংশ নেয়ার কথা সেসময় বিভিন্ন জনের কাছে শুনেছেন৷ সিলেট পতনের আগে যেসব যুদ্ধ হয়েছিল, সেখানে জিয়া নিজে উপস্থিত থেকে যুদ্ধ করেছেন৷ বলেন, ‘‘জামুকাকে আহবান রাখবো, আপনারা ভালো ভালো কাজগুলোতে হাত দেন৷ বাংলাদেশ সরকারের সামনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে৷’’
‘‘মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে খেতাব কেড়ে নেয়া রসিকতা নয় কি?,’’ এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি৷
এফএস/এসিবি
বিএনপির ৪০ বছর
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
বিএনপির ৪০ বছর
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
বিএনপির ৪০ বছর
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ২৯ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
বিএনপির ৪০ বছর
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
বিএনপির ৪০ বছর
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
বিএনপির ৪০ বছর
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
বিএনপির ৪০ বছর
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
বিএনপির ৪০ বছর
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
বিএনপির ৪০ বছর
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি৷ আরো কয়েকটি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
বিএনপির ৪০ বছর
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না৷ এসব সংকট নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকেই৷