জার্মানির প্রতিরক্ষার ‘হটসিটে’ কারা?
জার্মানির নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন বরিস পিসটোরিউস৷ তিনি কে? দুই জার্মানি এক হবার পর থেকে আর কারা ছিলেন?
বরিস পিসটোরিউস (২০২৩- চলমান)
সরকারি দল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির নেতা পিসটোরিউসের নিয়োগে অবাক হয়েছেন অনেকে৷ তিনি একজন আইনজীবী৷ ২০১৩ সাল থেকে তিনি উত্তরাঞ্চলের রাজ্য লোয়ার সাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন৷
ক্রিস্টিনে লামব্রেশট (২০২১-২০২৩)
কয়েকটি ছোট বিতর্ক ও অপ্রত্যাশিত মন্তব্যে ভরপুর ছিল লামব্রেশটের সময়৷ ইউক্রেনে ভারি সমরাস্ত্র পাঠানো নিয়ে জার্মান সরকারের দ্বিধার কারণে তিনি বেশি সমালোচিত ছিলেন৷ যেমন, তিনি তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে নিয়ে মিলিটারি হেলিকপ্টারে চড়ে আনুষ্ঠানিক সফর করেছেন, ইউক্রেনকে নতুন বছরের বার্তা দেবার সময় তার পেছনে প্রচুর আতশবাজি পোড়ানোর শব্দ পাওয়া গেছে, ইত্যাদি৷
অ্যানেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাওয়ার (২০১৯ - ২০২১)
২০২০ সালে স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ড (কেএসকে)-এর এক সৈনিকের বাড়িতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়৷ এই সৈনিক অতি-দক্ষিণপন্থী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ ক্রাম্প-কারেনবাওয়ার এই কেএসকে-কে ভেঙে দেন৷ এছাড়া সেনাবাহিনীতে যেসব সদস্য লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার তাদের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়ে আলোচনায় এসেছিলেন৷
উরসুলা ফন ডেয়ার লেইয়েন (২০১৩-২০১৯)
উরসুলা ফন ডেয়ার লেইয়েনের মেয়াদে জার্মান সেনাবাহিনীকে আধুনিকীকরণের কথা শোনা যেত৷ কর্মী, উপকরণ ও অর্থায়নের জায়গা থেকে একে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছেন তিনি৷ তার মেয়াদে জার্মান সেনাবাহিনী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে৷ এছাড়া সাইবার হামলা ঠেকাতে নতুন সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়৷
থমাস ডে মাইৎসিয়েরে (২০১১-২০১৩)
বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার প্রবিধান স্থগিত করার পর থমাস ডে মাইৎসিয়েরে জার্মান সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজান৷ ২০১১ সালে তিনি সেনা সংখ্যা কমানোসহ আমলাতন্ত্র কমিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা তৈরি করেন৷ সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি পেশাদার বাহিনীতে পরিণত করেন৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের এই বন্ধু পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন৷
কার্ল-থিওডর সু গুটেনব্যর্গ (২০০৯ - ২০১১)
গুটেনব্যর্গ ছিলেন জার্মানির ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ কুন্দুজে একটি মারাত্মক বিমান হামলার দায় তাকে মোকাবিলা করতে হয়৷ তার সময়ে ২০১১ সালে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদানের নিয়ম বাতিল করা হয়৷ নিজের ডক্টরেট ডিগ্রির থিসিসের অংশ চুরি করে লেখার অভিযোগ আসায় তিনি পদত্যাগ করেন৷
ফ্রানৎস ইয়োসেফ ইয়ুং (২০০৫-২০০৯)
আফগানিস্তানের দক্ষিণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মার্কিন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন তিনি৷ এর পরিবর্তে আফগানিস্তানের উত্তরে একটি সার্বক্ষণিক তৈরি বাহিনী মোতায়েনের পরামর্শ দেন৷ কুন্দুজে বিমান হামলার রাজনৈতিক দায় নেন তিনি৷ মার্কিন একটি ফাইটার জেট জার্মান বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হামলা চালায়৷ এতে ৯০ জনের বেশি বেসামরিক লোক মারা যান৷
পেটার স্ট্রুক (২০০২ - ২০০৫)
আফগানিস্তানে জার্মান মিশনের ন্যায্যতা দেয়ার জন্য পিটার স্ট্রুকের বহু-উদ্ধৃত মন্তব্য ছিল, ‘‘হিন্দুকুশে জার্মানিকেও রক্ষা করা হবে৷’’ তিনি একটি ছোট জার্মান সেনাবাহিনীকে আঞ্চলিক সংঘাত মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন৷ ২০০৩ সালে ঘোষণাও দেন যে ২০১০ সালের মধ্যে সেনা সংখ্যা ১০ ভাগ কমানো হবে৷
রুডলফ শার্পিং(১৯৯৮ - ২০০২)
রুডলফ শার্পিংয়ের অধীনে, জার্মান সেনা সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো বিমান হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল৷ এটাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান সেনার জার্মানির বাইরে প্রথম অপারেশন৷ ২০০১ সালে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড সোমালিয়ায় মার্কিন অপারেশনের তথ্য প্রকাশ করায় শার্পিং এর প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন৷
ফলকার রুহে (১৯৯২ - ১৯৯৮)
সাবেক ইংরেজি শিক্ষক ফলকার রুহের অধীনে জার্মানির সেনা ধীরে ধীরে ন্যাটো অঞ্চলের বাইরে বিদেশি মিশন শুরু করে৷ কম্বোডিয়া, সোমালিয়া ও বলকানে জাতিসংঘের মিশনকে সমর্থন করে৷ সশস্ত্র বাহিনি বিদেশে মোতায়েনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে৷
গ্যেরহার্ড স্টোল্টেনব্যর্গ (১৯৮৯-১৯৯২)
গ্যেরহার্ড স্টোল্টেনব্যর্গ অর্থমন্ত্রী ছিলেন৷ পুনঃএকত্রীকরণের সময় পশ্চিম জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন৷ ৩ অক্টোবর, ১৯৯০ সালে একীভূত জার্মানির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন৷ পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনী পশ্চিম জার্মানির ন্যাশনাল ফলক্সআর্মির সাথে একীভূত হয়৷