জার্মানির আকাশে অরোরা: আলোর এক বিরল ঝরনা
গত সপ্তাহান্তে জার্মানির আকাশে অরোরা অর্থাৎ নর্দার্ন লাইট দৃশ্যমান ছিল৷ ঠিক কী কারণে এমন হয়? কেনই বা তাদের সবসময় দেখা যায় না ? জেনে নেয়া যাক কিছু চমকপ্রদ তথ্য৷
সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য
গত সপ্তাহান্তে জার্মানিতে যেভাবে নর্দার্ন লাইট দেখা গেছে, তেমনটা খুব কম সময়ই হয়ে থাকে৷ অনেকেই অরোরা আরও ভালোভাবে দেখার জন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে গেছেন৷ যেমন ব্রকেন, সাক্সেন -আনহাল্টের ১১৪১ মিটার হার্স পাহাড়ের চূড়াতেও উঠেছেন৷ ব্রকেনহাউস (বামে) এটি হার্স জাতীয় উদ্যান ও জাদুঘরের দর্শনার্থী কেন্দ্র৷
শক্তিশালী সৌর ঝড়
দীর্ঘকাল ধরে নর্দার্ন লাইটকে একটি অলৌকিক ঘটনা হিসাবে দেখা হতো৷ তবে এখন এই প্রাকৃতিক দৃশ্যের কারণগুলোর সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত৷ সূর্য থেকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণের মুখোমুখি হওয়ার ফলে সেখানে বিচ্ছুরিত কণাগুলো জমা হয়৷ যখন অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে ও তাদের মৌলিক অবস্থায় ফিরে আসে তখন এই বর্ণিল দৃশ্য তৈরি হয়৷
বর্ণালী রঙে পুরো আকাশ
নর্দার্ন লাইটের রঙ বিভিন্ন ঘটনার উপর নির্ভরশীল৷ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকে লাল আলো, এর অর্ধেক উচ্চতায় সবুজ আলো উৎপন্ন হয়৷ দুটি রঙই অক্সিজেন পরমাণু থেকে আসে৷ আর নীল আলোটি আসে নাইট্রোজেন থেকে৷ কিন্তু শক্তির পরিমাণ ও বায়ুর চাপও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
নানা আকৃতি
নর্দার্ন লাইটগুলো বিভিন্ন আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়৷ যেমন ধনুক, ব্যান্ড, রশ্মি, মুকুট এমন কয়েকটি আলাদাভাবে বোঝা যায়৷ এগুলোকে আবার রেডিয়াল, ইউনিফর্ম, ডিফ্যুজ হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়৷ তবে এর পরিবর্তন ঠিক কীভাবে হয় তা ছবিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় না৷
রহস্যের সমাধান
দীর্ঘকাল ধরে, মানুষ অরোরাকে ঐশ্বরিক চিহ্ন হিসেবে মনে করতো৷ আধুনিক যুগ থেকে এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা শুরু হয়৷ আঠারোশো শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ এডমন্ড হ্যালি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে সংযোগ আবিষ্কার করেন৷ সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স জোনাস আংস্ট্রম ১৮৬৭ সালে প্রমাণ করেন যে, স্ব-আলোকিত গ্যাস থেকে আলো নির্গত হয়৷
জার্মানিতে কেন দেখা গেল অরোরা ?
সাধারণত, অরোরা শুধুমাত্র চৌম্বকীয় মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে দেখা যায়৷ অন্যান্য অঞ্চলে, এগুলো কেবল তখনই ঘটে যখন শক্তিশালী বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিচ্ছুরণ সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে৷ সূর্য এই পরিক্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ বিকিরণ একটি তথাকথিত সৌর ঝড়ের সৃষ্টি করে, যা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের একটি অনন্য অস্বাভাবিক ঘটনা৷ কিন্তু এটি বিপদজনক নয়৷ তবে, তীব্র সৌর ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হতে পারে৷