1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে স্টার্ট আপ তৈরির অভিজ্ঞতা

অর্ণব চক্রবর্তী
২২ জানুয়ারি ২০১৮

বার্লিনে স্টার্ট আপ তৈরি করার অভিজ্ঞতাই অন্যরকম৷ কারণ, স্টার্ট আপের সমস্ত সুযোগ এখানে পাওয়া যায়৷ তবে ভবিষ্যতে এশিয়ার মার্কেটে কাজ করার ইচ্ছে আছে৷

https://p.dw.com/p/2rD43
Symbolbild WLAN Wifi Hotspot mobiles Internet
ছবি: imago/Westend61

জার্মানিতে স্টার্ট আপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া খুব পরিকল্পনামাফিক ছিল না৷ কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে জার্মানিতে এসেছিলাম উচ্চ শিক্ষার জন্য৷ ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার পর একটি নামকরা কর্পোরেট হাউসে চাকরি করতে শুরু করেছিলাম৷

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারি যে, এতবড় সংস্থায় নিজেকে প্রমাণ করা সহজ নয়৷ নিজের ভাবনার জায়গাগুলো প্রতিষ্ঠা করাও বেশ কঠিন৷ কারণ, কর্পোরেট তার নিজস্ব নিয়মে চলে৷ কিন্তু আমি খুঁজছিলাম আমার নিজস্ব জগৎ৷ ক্রিয়েটিভ ভাবনার জায়গা৷ যার জন্য একটি ডায়নামিক, কিন্তু ছোট পরিসরের প্রয়োজন ছিল৷ স্টার্ট আপেই যা সম্ভব৷

গত একদশকে বার্লিন নিজেকে স্টার্ট আপের হাব হিসেবে প্রমাণ করেছে৷ বলা যায়, স্টার্ট আপ-বিপ্লব ঘটে গিয়েছে এখানে৷

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে একটি কথা বলা জরুরি, বার্লিন সমস্ত দিক থেকেই অত্যন্ত লিবারাল একটি শহর৷ নতুন চিন্তা নিয়ে কাজ করার সুযোগ বার্লিন দেয়৷ তবে শুধু বার্লিন নয়, একই পথ অনুসরণ করছে জার্মানির অন্যান্য শহরও৷ মিউনিখ, হামবুর্গ, লাইপজিগ ইত্যাদি শহরের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখ করতেই হয়৷

ডিজিটাল মোবিলিটিকে ব্যবহার করে প্রতিটি শহরই তাদের ব্যবসায় বিপ্লব ঘটাচ্ছে৷ বস্তুত, স্টার্ট আপের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছে জার্মানিতে৷ নতুন স্টার্ট আপ তৈরির জন্য প্রচুর ফান্ড এবং গ্রান্টের ব্যবস্থা আছে এখানে৷

জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও স্টার্ট আপ তৈরির জন্য ফান্ড দেয়, কাজ করার জায়গা দেয় এমনকি, নানারকম কোর্সেরও ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাও একইরকম সুযোগসুবিধা তৈরি করছে৷ ফলে এখানে প্রচুর স্টার্ট আপ তৈরি হচ্ছে৷

স্টার্ট আপে নিজের মনের মতো কাজ খুঁজে পেতেও তাই কোনো অসুবিধা হচ্ছে না৷ সৃজনশীল তরুণ-তরুণীরা সে কারণে অনেকেই এখন স্টার্ট আপের দিকে ঝুঁকছে৷ যদিও বড় কোম্পানিগুলির মতো পারিশ্রমিক স্টার্ট আপগুলি একেবারেই দিতে পারে না৷ সেই অর্থে জব সিকিওরিটিও কম৷ কিন্তু স্টার্ট আপ তৈরির ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছে যার আছে, সে কেনই বা এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে? তবে মাথায় রাখা ভালো যে, স্টার্ট আপ তৈরির সময় একটা ভালো ফান্ড জোগাড় করে ফেলতে পারলে কাজেরও সুবিধা হয়, সুবিধা হয় জীবনযাপনেরও৷

বেশকিছুদিন ধরে স্টার্ট আপের সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুণ আরো একটা বিষয় বলতে চাই৷ ইংল্যান্ড এবং জার্মানির পর ইউরোপের বহু দেশই ছোট ছোট স্টার্ট আপ হাবে পরিণত হচ্ছে৷ উদাহরণ স্বরূপ ফ্রান্সের কথা বলা যায়৷

‘স্টেশন এফ'এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টার্ট আপ প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে প্যারিসে, যা ইউরোপের স্টার্ট আপ মানচিত্রে একটি হটস্পট বলা যায়৷ তবে আমার ধারণা, প্যারিস, বার্লিন, মিউনিখ, হামবুর্গের মতো শহরগুলিতে কস্ট অফ লিভিং দিনে দিনে এত বাড়ছে যে, তা স্টার্ট আপ ব্যবসাতেও প্রভাব ফেলবে৷ আমার ধারণা, এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি স্টার্ট আপের নিজ নিজ হাব দ্রুত তৈরি করে ফেলতে পারবে এবং করবেও৷ করবেই বা বলছি কেন, ইতিমধ্যেই সেই প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে৷ কম পুঁজিওলা স্টার্ট আপগুলি ইতিমধ্যেই পূর্ব ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে৷

তবে আমি যেহেতু বার্লিনে কাজ করছি, সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, এই মুহূর্তে ইউরোপের চালিকাশক্তি হলো জার্মানি৷ ফলে বহু বিনিয়োগকারী এখানকার স্টার্ট আপগুলিতে টাকা ঢালছেন৷ অর্থাৎ, পুঁজির একটা ফ্লো আছে৷ যেটা নতুন স্টার্ট আপ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷

আমার স্টার্ট আপ ডিজিটাল হেলথ সংক্রান্ত৷ এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে পারি যে, সারা পৃথিবীর কাছেই জার্মানিতে তৈরি প্রোডাক্টের চাহিদা বিপুল৷ তার একটাই কারণ, এখানে যেভাবে প্রোডাক্টের রেগুলেশন তৈরি হয়, যে প্রক্রিয়ায় প্রোডাক্ট টেস্ট করা হয়, তাকে সকলেই মান্যতা দেন৷ ফলে ডিজিটাল হেলথ সংক্রান্ত স্টার্ট আপের কাজ এখানে বসে করে আমি খুবই উৎসাহ পাচ্ছি৷ এবং নিজের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলেই মনে করছি৷

ইউরোপে স্টার্ট আপের সুযোগ অনেক৷ কথাটা সত্যি৷ তবে আমার মতে বিশ্বব্যাপী এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্টার্ট আপ তৈরির একটা আগ্রহ জন্মেছে৷ এবং এর জন্য তথ্য প্রযুক্তির রমরমাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়৷

গোটা পৃথিবী সত্যি সত্যিই এখন সকলের হাতের মুঠোয়৷ সকলেই দেখতে পাচ্ছেন, কোথায় কী কাজ হচ্ছে৷ ফলে উৎসাহ তৈরি হচ্ছে সর্বত্র৷ মহীনের ঘোড়াগুলির গান ধার করে বলতে হয়, ‘ভেঙে গেছে দেশ-কাল-সীমানার গণ্ডি'৷ বর্তমান প্রজন্ম নিরাপত্তা, প্রচুর পারিশ্রমিকের পরিচিত গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে এসেছে৷ অনেকেই নিজের কিছু তৈরি করতে চায়৷ অনেকেই নিজের সৃজনশক্তিকে প্রমাণ করতে চায়৷

ফেরা যাক নিজের এবং জার্মানির কথায়৷ স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো অফিস স্পেস৷ এখানে যাকে বলা হয় ‘কো ওয়ার্কিং স্পেস'৷ অর্থাৎ, বহু ছোট ছোট স্টার্ট আপ একই ছাদের তলায় নিজেদের কাজের জায়গা ভাগাভাগি করে নেয়৷

নিজস্ব অফিস তৈরি করার জন্য যে বিপুল খরচ, এ ধরনের জায়গায় তা নেই৷ তাছাড়া এখানে কাজ করলে বাকিদের ভাবনাচিন্তাগুলোও শোনা যায়৷ আলোচনা করা যায়৷ নতুন স্টার্ট আপ তৈরির সময় এ বিষয়গুলি খুবই কাজে লাগে৷ অনেকটা যেন একটা কমিউনিটির মতো ব্যাপার৷ সকলেই একইরকম উদ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে৷

মানসিকভাবেও এ ধরনের পরিসরে কাজ করলে উৎসাহ বাড়ে৷ আমি যেখানে কাজ করি, এককথায় তা অফিস বলে মনেই হয় না৷ বার্লিনের প্রাণকেন্দ্রে যেন একটা মস্ত লিভিং রুম৷ চারদিকে ছড়ানো ঘর৷ মাঝে একটা কমিউনিটি কিচেন৷ যেখানে বিনামূল্যে কফি ইত্যাদি পাওয়া যায়৷ এছাড়াও রয়েছে লাউঞ্জ, কনফারেন্স রুম, ব্রেকফাস্ট মিট, হ্যাপি আওয়ার, এমন আরো অনেক কিছুই৷ সাধারণ কোনো অফিসে যা কল্পনাও করা যায় না৷ সবচেয়ে মজা হলো, ইচ্ছে হলে নিজের পোষ্যটিকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায় অফিসে৷ তাদের রাখারও ব্যবস্থা আছে৷

এখন প্রশ্ন হলো, ভারতবর্ষ থেকে এসে বার্লিনে বসে স্টার্ট আপে কাজ করছি কেন? কেন ফিরে যাচ্ছি না নিজের দেশে? অথবা এশিয়ায়? বন্ধুরা অনেকেই এই প্রশ্ন করেছে আমাকে৷ বস্তুত এশিয়ার মার্কেট অবশ্যই আমার কোম্পানির টার্গেট৷ কারণ, আমরা ডিজিটাল হেলথ সেক্টরে কাজ করছি৷ কিন্তু আগেই বলেছি, ইউরোপে স্টার্ট আপে কাজ করার পরিকাঠামো খুব উন্নত৷

এখানকার রাজনৈতিক অবস্থা, মূলধন এবং ডিজিটাইলেশনের দিকে ঝোঁক এশিয়ার চেয়ে অনেক বেশি৷ ফলে এখানে কাজ করা সুবিধা৷ ভবিষ্যতে কি যাব না এশিয়ায়? এখনই বলা কঠিন৷ তবে সেই চ্যালেঞ্জ তো অনেকেই নিচ্ছে৷ আমাদেরও না নেওয়ার কোনো কারণ নেই৷ সময়ই তা নির্ধারণ করবে৷

এবারে খানিক নিজের কথায় আসি৷ আগেই বলেছি, বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করে আমার পোষায়নি৷ কিন্তু সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম৷ তারপর যোগ দিই ফ্লাইং হেলথ নামে একটি সংস্থায়৷ জার্মানির অন্যতম ডিজিটাল হেলথ সংস্থা৷ সংস্থাটির দুই সংগঠক ক্রিশ্চিয়ান লাউটনার এবং এবং মার্কুস মুশেনিশ৷ তাঁদের চিন্তার পরিসরই অন্যরকম৷

ডিজিটাল হেলথকে তাঁরা এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন৷ সংস্থাটি একটি পরীক্ষাগারও তৈরি করেছে৷ সেখানে বিভিন্ন স্টার্ট আপ এবং সংস্থা এসে নিজেদের পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ করতে পারে৷ এই সংস্থার সঙ্গে কাজ করার সময় ডিজিটাল হেলথের মডেল তৈরির কাজ করেছি আমি৷ তা কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হয়েছে৷ ফ্লাইং হেলথের কিছু প্রজেক্ট ফান্ড করছে ফেডারেল মিনিস্ট্রি অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ৷

ফ্লাইং হেলথ এবং তার কর্ণধারদের সাহায্যে আমার হাতে সুযোগ এসে যায় নিজস্ব স্টার্ট আপ তৈরি করার৷ ফলে জন্ম হয় ‘নিউরালট্রেন'৷ ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষদের কীভাবে ডিজিটাল হেলথের মাধ্যমে সাহায্য করা যায়, সেটাই আমাদের বিষয়৷ যদি আমরা সফল হই, তাহলে পৃথিবীব্যাপী ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষদের আমরা সাহায্য করতে পারব৷ আশা করি আমরা সফল হবো৷

 

আপনার কোন অভিজ্ঞতা আছে কি? লিখুন নিচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান