জার্মানির করোনা সংক্রমণে রেকর্ড বৃদ্ধি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ৪০০। এর আগে এই পরিমাণ সংক্রমণ হয়নি জার্মানিতে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আগামী কিছু দিনে সংক্রমণের মাত্রা আরো বাড়তে পারে। বুধবার থেকেই কড়া লকডাউন শুরু হয়েছে জার্মানিতে। তা সত্ত্বেও সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তিত প্রশাসন। দ্রুত টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে সেখানেও জটিলতা আছে।
করোনা ভাইরাসের প্রথম প্রথম ঢেউ ভালোভাবেই সামলাতে পেরেছিল জার্মানি। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রতিদিনই সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর জানায় প্রায় ৩০ হাজার সংক্রমণ হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। পরে সংখ্যাটি আরো বাড়ানো হয়। প্রতিটি রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে চূড়ান্ত তথ্য আপলোড করে প্রশাসন।
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
ওবারবাউমেক
করোনার কড়াকড়িতে বন্ধ হয়েছে মায়োর বার ওবারবাউমেক৷ লকডাউনে নিজের ব্যবসার ক্ষতি হলেও, এটাই একমাত্র পথ বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, “মানুষের দুর্দশার সময় তার পাশে থাকা উচিত৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন এর উলটোটা সত্যি৷ এখন দূরে থাকা মানেই কাছে থাকা৷’’
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
ক্রাস বোয়েজার ভোলফ
বার্লিনের এই বারটির ম্যানেজার মাক্স৷ তিনি বলেন, “আমার ধারণা ছিল বারের ব্যবসা সব সংকট থেকে মুক্ত৷ কারণ মানুষ সবসময়ই পান করতে ভালোবাসে৷ কিন্তু আমি ভুল ছিলাম৷ এই বছর আমাদের সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা শিখিয়েছে৷ এটাই লকডাউন৷’’
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
রেভোল্টে
রেভোল্টে বারের ম্যানেজার কাতিয়া৷ লকডাউনে বার বন্ধ হওয়ায় বেশ হতাশ তিনি৷ কাতিয়া বলেন, “লকডাউনে বেঁচে থাকাই দায়৷”
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
উয়েবেরবেক
বার বন্ধ থাকলেও মার্কো প্রতিদিনই নিজের বার উয়েবেরবেক-এ এসে বসেন৷ তিনি বলেন, “৯০ এর দশকের একটি যুদ্ধজাহাজের নাম ছিল উয়েবেরবেক৷ আমার এই বারটিকেও যুদ্ধজাহাজই মনে হয়৷ আমার বন্ধু এবং কর্মচারিরা এখন অপেক্ষা করছেন কবে লকডাউন শেষে এই জাহাযে চড়ে নিজের বাড়ি যেতে পারবেন৷”
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
ভাইনার ব্লুট
নিজের বারের জানালায় বসে আছেন এভলিন উইনার৷ তিনি বলেন, "২০২০ আমাদের জন্য সত্যিই একটি কঠিন বছর৷ আমি এখনও আশাবাদী৷ আমি মনে করি এটি চলবে কিন্তু একসময় এর শেষ হবেই৷’’
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
জি-বার
নিজেদের বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জি-বারের তিন কর্ণধার গুয়েনি, কনস্টানটিন এবং স্টিভ৷ গুয়েনি লকডাউনের সিদ্ধান্তে তেমন একটা খুশি না৷ তিনি বলেন, “এই সার্কাস যখন বন্ধ হবে, তখন কিভাবে বাইরে যেতে হয় সেটা ভুলে না গেলেই হয়৷’’
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
ওয়াট
এই বারের মালিক সিন্ডি৷ তিনি বলেন, “আমি যতক্ষণ সম্ভব, যেভাবে চলি সেভাবেই চলবো৷ এটা কেবল বেঁচে থাকার বিষয় নয়, অস্তিত্বের বিষয়৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক আবহ চর্চার স্থান যেমন বার, পাব, ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেলেও সংকৃতি চর্চা বন্ধ হবে না৷ কোনো না কোনো ভাবে অন্য কোথাও এটি চলতে থাকবে৷”
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
ডি টাগুং
এই বারের মালিকের নাম ড্যানিয়েল৷ তিনি বলেন, “আমি এখন একটা সময়ের অপেক্ষা করছি, যখন বার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের আমি আবার ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করতে পারবো৷ এখন বরং আমাকেই জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, আমি কিভাবে টিকে আছি৷’’
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
মোলেনফ্রিডহফ
পেটার ও আন্দ্রেয়াও খুব বাজে সময় কাটাচ্ছেন৷ পেটার বলছেন, “আমরা এই লকডাউনের কারণ বুঝতে পারছি এবং মেনেও নিয়েছি৷ কিন্তু নিজেদের রাজনীতিবিদদের দাবার ঘুঁটি মনে হচ্ছে৷ এতদিনে আমাদের অনেক দূর আগানো উচিত ছিল৷
-
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
ফ্রাংকেন
এই বারের বারটেন্ডার নেট্টি৷ বার বন্ধ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই বারে আসেন তিনি৷ বলছিলেন, “আমি মানুষজনের হাসি এবং উদ্দাম রাতগুলোর অভাব টের পাই৷’’
সংক্রমণের বৃদ্ধির হার দেখে দ্রুত টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। বড়দিনের পরেই তা চালু করা হবে বলে স্থির হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ২৭ ডিসেম্বর থেকে তা চালু করা হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, টিকাকরণ শুরু হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। সমীক্ষা বলছে, মাত্র ৪০ শতাংশ জার্মান টিকা নিতে আগ্রহী। অধিকাংশই দ্রুত টিকা নেওয়ার বিরুদ্ধে। ৪০ শতাংশ টিকাকরণ হলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে না। তার জন্য অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। ৪০ শতাংশ জার্মান টিকা নিতে উৎসাহী হলেও এখনই তাঁরা তা নিতে চান না। কিছু দিন অপেক্ষা করে দেখে নিতে চান, টিকায় কোনো সমস্যা আছে কি না। ১০ শতাংশ জার্মান টিকা নিতেই চান না। এই সমীক্ষাই প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। টিকাকরণ শুরু হলেও জনগণ যদি তা না নেন, তা হলে করোনার সংক্রমণ রোধ করা মুশকিল হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা যত বাড়বে, করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনাও তত বাড়তে পারে।
অ্যামেরিকায় অবশ্য টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সপ্তাহের শেষেই টিকা নিতে পারেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে সে কথাই জানিয়েছেন ইইউ প্রধান।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)