1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বন্যার অভিজ্ঞতা

২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

একে তো প্রচণ্ড ঠান্ডা, তার সাথে বেশ কয়েকদিন থেকেই যোগ হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি৷ ফলে নদীর পানি বেড়ে, যা হবার তাই হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3ol3M
২০১৮ সালে বন্যায় আক্রান্ত জার্মানির কখেম শহর
২০১৮ সালে বন্যায় আক্রান্ত জার্মানির একটি শহরছবি: Imago/R. Unkel

প্রতিবছর জার্মানিতে কম-বেশি বন্যা হয়, তবে দেশের প্রাকৃতিক দূর্যোগের চিত্রের সাথে এর কোনো মিল নেই৷

ঝমঝম বৃষ্টির সাথে বাঙালির আবেগের এক দারুণ সম্পর্ক রয়েছে, কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে  আবার কেউবা শুধু বৃষ্টি পড়া দেখেই পুলকিত৷ আবার কেউ কেউ পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতো বৃষ্টিতে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে৷ জার্মানিতে বৃষ্টি হয়  শীতকালে আর সে বৃষ্টি কি বাঙালির অনুভূতিকে স্পর্শ করতে পারবে? তাছাড়া এদেশে বৃষ্টি পড়ে শব্দহীন নীরবে, অর্থাৎ বাইরে না তাকালে বৃষ্টির উপস্থিতি বোঝার কোনো উপায় নেই!

তেমন বৃষ্টিই হচ্ছে বেশ অনেকদিন থেকেই৷ এমন আবহাওয়ায় বাড়ছে নদীর পানি, রাইন নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী অনেকটা এলাকা জুড়ে বিপদ সীমা পর্যন্ত আগেভাগেই ছোট ছোট বাঁধ দেওয়া হয়৷ অনেকেই নদীর পানি দেখতে যায়৷ দীর্ঘদিন এদেশে থাকায় বিভিন্ন সময়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা হয়েছে৷ তার মধ্যে ভয়াবহ বন্যা দেখেছি মনে হয়, দুই তিনবার৷ যতটা মনে পড়ে ৯০ দশকের শুরু দিকে নদীর পানি এতটাই বেড়েছিলো যে, যাতায়াতের জন্য নদীর তীরবর্তী এলাকার রাস্তায় ছোট ছোট সাঁকো তৈরি করতে হয়েছিল৷

আমাদের এলাকার রাস্তায় ছোট ছোট নৌকা চলেছে, এই পরিস্থিতি দেখার জন্য অনেকেই বাইরে বেরিয়েছে৷  আমরা ভিড় করে দেখেছি এসব দৃশ্য৷ এতে ভয় বা আতঙ্কের কিছু ছিলনা, বরং অনেকেই তা উপভোগ করেছে৷  নদীর পানি বাঁধ দিতে স্বেচ্ছায় স্কুল-কলেজের অসংখ্য ছাত্র ভারি ভারি বালির বস্তা বিছিয়ে দিয়েছে রাস্তায়৷ নদী তীরের অনেক ব্যয়বহুল বাড়ির বেজমেন্টেও পানি উঠেছিল সে বন্যায়৷ এর ক্ষতিপূরণ দেয় সাধারণত বাড়ির বিমা কোম্পানিগুলোই৷ 

এর কিছুদিন পরের আরেক বন্যায় রাইন নদীর তীরে অবস্থিত আমাদের ডয়চে ভেলের বন-এর অফিসের সেলারেও বন্যার পানি উঠেছিল৷ নদীর তীরে কর্মীদের পার্ক করা গাড়িগুলো পানিতে প্রায় অর্ধেক ডুবে গিয়েছিল৷ গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে বিমা কোম্পানিই সে ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেবে বলে গাড়ির মালিকরা কেউ তা নিয়ে তখন ভাবেনি৷ 

আজ কোলনে রাইন নদীর পানি বেড়ে প্রায় সাড়ে সাত মিটার উঁচুতে উঠেছে৷ আগামীকাল আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন, আবহাওয়াবিদরা৷ বাড়লেও তেমন বিপদ হয়ত হবে না৷ কারণ, বন্যার পানি আটকাতে বা রাস্তায় যেন না উঠতে পারে সেজন্য গত কিছুদিনে সরকার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, প্রচুর টাকা খরচ করে নদীর পাড়গুলোতে ডাইশ বা বাঁধগুলোর খানিকটা উঁচু করা হয়েছে৷ আসলে পরিকাঠামো এমনভাবে গোছানো বা তৈরি যাতে বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাধারণ মানুষের তেমন কোনো সমস্যা বা ক্ষতি না হয়৷

নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলে
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার বন্যা, জলোচ্ছাস বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে মানুষ অন্যভাবে পরিচিত, যা এদেশের বন্যার চিত্র থেকে সম্পূর্ণই আলাদা৷ সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো মানুষের জীবন! আছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি৷ কত অসহায় মানুষ তাকিয়ে থাকে ত্রাণ পাওয়ার জন্য৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, ত্রাণ নিয়েও চলে নানা দুর্নীতি৷ এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, গত বছর সাতক্ষীরায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে সেসময়ে বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত তার বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন৷ স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের সে ত্রাণসামগ্রী সরানোর চেষ্টার কথা এক টুইটে লিখেছিলেন তিনি৷ কোনো বিদেশির মুখে নিজের দেশের অসহায় আর অভাবী মানুষদের মুখের খাবার কেড়ে নেওয়ার কথা শুনলে ভীষণ লজ্জা হয়, নিজেদের তখন খুব ছোট মনে হয়৷

জার্মানদের কাছে বাংলাদেশ মানে বন্যা আর প্রকৃতিক দূর্যোগের দেশ – এদেশে আসার পর প্রথমদিকে এমনটাই শুনেছি৷ তবে বর্তমানে জার্মানদের মনে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বেশ ভালোভাবেই জায়গা করে নিতে পেরেছে৷ আমি আশাবাদী যে, কোনো এক সময় হয়তো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব হারানো অসহায় মানুষদের প্রাপ্য ত্রাণের পুরোটা অংশও তারাই পাবেন৷