জার্মানিতেও পৌঁছে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার কোভিড স্ট্রেইন। এখনো পর্যন্ত একজনের শরীরেই নতুন স্ট্রেইনের নমুনা মিলেছে। তবে পরিবারের বাকি সদস্যদের করোনার নমুনাও বিশেষ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। কয়েক দিন আগেই পরিবারটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জার্মানিতে ফিরেছে। নতুন স্ট্রেইনের কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে জার্মান সরকার।
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ইসরায়েল
করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
সংযুক্ত আরব আমিরাত
পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে৷ মোট আট লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বাহরাইন
পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন৷ এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরেই তাদের অবস্থান৷ মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র
করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে ৬ জানুযারি পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য৷ তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের৷ সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
চীন
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন৷ শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরো কয়েকটি৷ তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
রাশিয়া
ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া৷ ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
জার্মানি
২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে৷ তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন৷ জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ইটালি
মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে জার্মানির চেয়ে ইটালি কিছুটা এগিয়ে৷ করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ক্যানাডা
১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে ক্যানাডা৷ এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
স্পেন
৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে এক ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বাকি বিশ্ব
ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে৷ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে৷ তবে এই দৌড়ে এখনও যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ৷ সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে৷
বেশ কিছুদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার পরে সপ্তাহকয়েক আগে জার্মানির বাডেন শহরে ফিরেছে একটি পরিবার। বিমানবন্দরেই পরিবারের সকলের করোনা টেস্ট হয়। কিন্তু তখন করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। দিনকয়েক আগে ওই পারবারটি এবং আশপাশের আরো কয়েকটি পরিবারের করোনার মৃদু লক্ষণ দেখা যায়। ফের সকলের করোনা পরীক্ষা করা হয়। সকলের শরীরেই করোনা ভাইরাস মেলে। তার মধ্যে একজনের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইন পাওয়া যায়। এই প্রথম জার্মানিতে কারো শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইন মিলল।
সম্প্রতি করোনার এই স্ট্রেইন গোটা বিশ্বেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এই স্ট্রেইন পৌঁছেছিল যুক্তরাজ্যে। সেখানে মানুষ দ্রুত করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করেন। চিকিৎসকদের বক্তব্য, পুরনো করোনার স্ট্রেইনের থেকে এই স্ট্রেইন অনেক বেশি শক্তিশালী। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের শরীরে। তবে নতুন স্ট্রেইনটিকে আগের চেয়ে বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে না।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের হটস্পটের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর মধ্যে ডে ট্রিপ বা একদিনে কোথাও গিয়ে সেদিনই আবার ফেরার মতো দূরত্বেও যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহের হিসাবে গড়ে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার দুইশ’ জন করোনা আক্রান্ত, এমন জেলাকে হটস্পট হিসেবে ধরা হয়।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
সাক্ষাতে মানা
এতদিন জনসমাগমের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজনের একসাথ হওয়ার অনুমতি ছিল৷ সেটি এখন কমিয়ে এক পরিবারের মাত্র একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ একই বাড়ির বাসিন্দা নন এমন ক্ষেত্রে মাত্র একজনের সঙ্গে দেখা বা মিলিত হওয়া যাবে। তবে সাথে নিজের পরিবারের বা বাসার একজন থাকতে পারবে৷
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
দুইবার পরীক্ষা
হাই-রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি জার্মানিতে এলে তাকে দুইবার করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। প্রথমটির ফলাফল নেগেটিভ হলেও অন্তত পাঁচদিন কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
অভিভাবকদের ছুটি
বাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার জন্য কর্মজীবী বাবা-মা ১০ দিনের অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। বাবা বা মা যদি একা হন তাহলে ছুটি হবে ২০ দিন।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
আগের নিয়ম
এর সঙ্গে আগের নিয়মগুলোতো থাকছেই। অর্থাৎ, জরুরি নয় এমন দোকান ও সেবা প্রতিষ্ঠান, ডে কেয়ার সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জনসমক্ষে অ্যালকোহল পান করা যাবে না। চার্চ, সিনাগগ, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে। কর্মীদের বাড়ি থেকে অফিস করার পরামর্শটি অবশ্য করোনার শুরু থেকেই দেয়া হয়েছে।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
কতদিন থাকবে?
কমপক্ষে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মগুলো বহাল থাকবে। ২৫ জানুয়ারি রাজ্য ও ফেডারেল সরকার বসে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করবেন। সরকারের আশা, নতুন কড়াকড়িতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সাত দিনে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ৫০ জন বা তার কম আক্রান্ত হলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হবে।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
প্রকোপ বাড়ছে
মঙ্গলবার র্পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০০ জন। মারা গেছেন ৯৪৪ জন। বড়দিনের ছুটির শেষ হওয়ায় এই সংখ্যা এখন আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতদিনই গড়ে এক লাখ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন, যা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
-
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
ম্যার্কেলর কথা
সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জনগণকে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম তিন মাসে দেশটিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তরা টিকা পাবেন। এরপর থেকে বাকিদের টিকা দেয়া সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে জার্মানি একা টিকা নিশ্চিত করলে সেটি কাজে আসবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডেও এই স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি দেশেই সরকার লকডাউন ঘোষণা করে স্ট্রেইনটির সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করছে। জার্মানিতেও লকডাউন জারি হয়েছে। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এমনিতেই জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এতদিন নতুন স্ট্রেইনের হদিশ পাওয়া যায়নি। এই প্রথম তা মিলল। ওই পরিবারের বাকিদের শরীরেও একই স্ট্রেইন আছে কি না, তা দেখার জন্য নতুন করে তাদের পরীক্ষা হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আগেই নতুন স্ট্রেইন নিয়ে সকলকে সচেতন হতে বলেছিলেন। বস্তুত, ইউরোপের বহু দেশই যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছে। তা সত্ত্বেও নতুন স্ট্রেইন আটকানো যাচ্ছে না।
বাডেনের প্রশাসন জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তাঁর মাধ্যমে অন্যদের শরীরে যাতে ওই স্ট্রেইন ছড়িয়ে না পড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
জার্মান প্রশাসন জানিয়েছে, দেশে টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়লে যত দ্রুততার সঙ্গে টিকাকরণ দরকার, সেই পরিমাণ টিকা তাদের হাতে নেই। ফলে সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)