ইউরোপীয় স্তরে উগ্র ইসলামি নেটওয়ার্ক নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, আততায়ীরা কি সত্যি নিজস্ব আবেগের ভিত্তিতে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালিয়েছে, নাকি তারা ইউরোপজুড়ে কোনো বড় নেটওয়ার্কের অংশ৷ একাধিক দেশে তদন্ত চালিয়ে কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করছেন৷ উগ্র ইসলামি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ কিছু মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নানা দৃষ্টান্ত উঠে আসছে৷
অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভিয়েনায় বলেন, ভিয়েনার আততায়ী সম্ভবত এক ব়্যাডিকাল ইসলামি নেটওয়ার্কের অংশ ছিল৷ সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পুলিশ জুরিখ শহরের কাছে ভিয়েনার আততায়ীর ঘনিষ্ঠ সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে৷ সুইজারল্যান্ড ছাড়া অন্য একটি দেশেও ভিয়েনার আততায়ীর যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি কোনো দেশের নাম না করলেও জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার সংসদে বলেন, জার্মানিতে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত চরমপন্থিদের সঙ্গে ভিয়েনার হামলাকারীর যোগাযোগ ছিল৷ উল্লেখ্য, ভিয়েনার হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সে দেশে মোট ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে৷ অস্ট্রিয়ার পুলিশ প্রধান ফ্রানৎস রুফ বলেন, তারা প্রত্যেকেই ব়্যাডিকাল ইসলামি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত৷
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-কে বলেন, যে উগ্র ইসলামি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ অনেক মানুষ গোটা ইউরোপজুড়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে৷ তাঁর মতে, বিষয়টির মূল্যায়ন করে সেই ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজখবর করা জার্মান নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দায়িত্ব৷
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী শুক্রবার সকালে জার্মানির তিনটি রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে৷ ভিয়েনার আততায়ীর পরিচিত ব্যক্তিদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে৷ বিশেষ করে অসনাব্রুক শহরের দুই উগ্র ইসলামপন্থি ব্যক্তির ভূমিকা সম্পর্কে জার্মানির অপরাধ দমন দপ্তর সন্দিহান৷ ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যে এই দু'জন জুলাই মাসে ভিয়েনার আততায়ীর বাসায় ছিল বলে জানা গেছে৷ ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার পর জার্মানিতেও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় জোরালো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে৷
ভিয়েনার আততায়ীর কার্যকলাপ সম্পর্কে স্লোভাকিয়ার কর্তৃপক্ষের আগাম সতর্কতা সত্ত্বেও অস্ট্রিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় নি বলে সে দেশের সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতীয় ও ইউরোপীয় পর্যায়ে আরও সহযোগিতার জন্য চাপ বাড়ছে৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণহীন শেঙেন এলাকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন করে ভাবনাচিন্তার ডাক দিয়েছেন৷ বিশেষ করে এই এলাকার বহির্সীমানায় আরও কড়া নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি৷ মাক্রোঁ বলেন, বেআইনি অনুপ্রেবেশের সঙ্গে যুক্ত অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গেও প্রায়ই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সংযোগের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে তিনি শেঙেন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের ডাক দেন৷
এসবি/জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি)
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
লাইপসিশ, অক্টোবর ২০১৬
লাইপসিসের পুলিশ দু’দিন ধরে তল্লাশি চালানোর পর ২২ বছর বয়সে সিরীয় শরণার্থী জাবের আল-বাকেরকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়৷ চেমনিৎসে তার অ্যাপার্টমেন্টে বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরিত সরঞ্জাম পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ সন্দেহ করা হয় যে, বার্লিন বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল সে৷ গ্রেপ্তারের দুই দিন পর অবশ্য কারাগারে আত্মহত্যা করে এই সিরীয় শরণার্থী৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
আন্সবাখ, জুলাই ২০১৬
গত জুলাই মাসে জার্মানিতে দু’টি হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ দু’টি হামলাই শরণার্থীরা ঘটিয়েছিল৷ এর মধ্যে বাভারিয়ার আন্সবাখ শহরে একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যালের প্রবেশ মুখে এক সিরীয় শরণার্থী বিস্ফোরণ ঘটালে ১৫ ব্যক্তি আহত হন৷ হামলায় হামলাকারী অবশ্য নিজেও প্রাণ হারায়৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
ভ্যুয়র্ত্সবুর্গ, জুলাই ২০১৬
১৭ বছর বয়সি এক শরণার্থী ভ্যুয়র্ত্সবুর্গে একটি ট্রেনের মধ্যে কুড়াল ও ছুরি নিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা চালায়৷ এতে হংকং থেকে আসা এক পর্যটক পরিবারের চার সদস্য এবং অন্য একজন আহত হন৷ পুলিশ হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সদস্য না হলেও এই জঙ্গি গোষ্ঠীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছিল৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
ড্যুসেলডর্ফ, মে ২০১৬
ইসলামিক স্টেট-এর তিন সন্দেহভাজন সদস্যকে নর্থ রাইনওয়েস্টফেলিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ এবং বাডেন ভ্যুর্টেনবের্গ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দু’জন ড্যুসেলডর্ফের শহরতলীতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ অপরজন এবং ফ্রান্সে গ্রেপ্তারকৃত চতুর্থ জিহাদি বন্দুক ও বিস্ফোরক নিয়ে পথচারীদের হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে খবর৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
এসেন, এপ্রিল ২০১৬
এসেনে একটি শিখ মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বিস্ফোরণে তিন ব্যক্তি আহতও হন৷ সিসিটিভি ফুটেজ প্রচারের পর ১৬ বছর বয়সি এক সন্দেহভাজন নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে৷ আর অন্য তরুণ সন্দেহভাজনকে বাড়ি থেকে আটক করে স্পেশাল পুলিশ৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
হানোফার, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
১৬ বছর বয়সি জার্মান-মরোক্কান তরুণী সোফিয়া এস. হানোফার ট্রেন স্টেশনে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে৷ ধারণা করা হয়, ইসলামিক স্টেট-এর সদস্যরা তাকে এই হামলায় প্ররোচিত করেছিল৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
বার্লিন, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
বার্লিনে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ইসলামিক স্টেট-এর সন্দেহভাজন তিন আলজেরীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বার্লিনের প্রসিকিউটরের দপ্তরের তথ্য আনুযায়ী, রাজধানীতে হামলা করার জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল কর্তৃপক্ষ৷
-
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
ওবারউরসেল, এপ্রিল ২০১৫
এশবর্ন-ফ্রাংকফুর্ট সিটি লুপ বাইক রেস বাতিল করে পুলিশ, কেননা তারা সন্দেহ করছিল যে সেই রেসে ইসলামিক স্টেট হামলা চালাতে পারে৷ হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩৫ বছর বয়সি এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান এবং তাঁর ৩৪ বছর বয়সি স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে৷ বাইক রুটের কাছে তাদের বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণও উদ্ধার করে পুলিশ৷